সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

আশুলিয়ায় অজ্ঞাত কঙ্কাল থেকে পরিচয় পেল র‌্যাব, মূল হত্যাকারীসহ গ্রেফতার ৩

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ৩১ আগস্ট, ২০২১

রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অজ্ঞাত গলিত মৃতদেহের (কঙ্কাল) পরিচয় উদ্ঘাটন এবং এই ক্লুলেস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূলহোতা মোঃ সাব্বির সহ ৩ জনকে বিভিন্ন জেলা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।
গত ২৮ আগস্ট ২০২১ তারিখ দুপুরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকায় একটি ৫তলা ভবনের ৩য় তলার রুমে ফ্ল্যাটের গোসলখানার পানির ড্রাম হতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির লাশ পচে কঙ্কাল হয়ে যাওয়ায় নিহতের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চা ল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। উক্ত চা ল্যকর ক্লুলেস হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত এবং হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রæততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। 
তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১ এর একটি  চৌকস দল দ্রæততার সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই চা ল্যকর ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের নিমিত্তে ঘটনাস্থলে বিশ^স্থ সোর্স নিয়োগ করে এবং পরবর্তীতে সোর্সের মাধ্যমে বর্ণিত বাসায় সচরাচর যাতায়াতকারী একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা জানতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায়  চৌকস দলটি নাটোর জেলার গুরুদাসপুরে অভিযান পরিচালনা করে সন্দেহভাজন ব্যক্তি আনোয়ার হোসেন (২০) কে গ্রেফতার করে। আনোয়ার হোসেনের পিতা-চাঁন প্রমানিক, জেলা-নাটোর বলে নিশ্চিত হয় এবং আরো জানতে পারে যে, একই গ্রামে আনোয়ারের প্রতিবেশী ভিকটিম জয়নালকে গত ১৪ আগস্ট ২০২১ তারিখ হতে তার বাবা-মা তাকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিল না। এছাড়া আরো জানতে পারে যে, ভিকটিম জয়নাল তার গ্রামের প্রতিবেশী আব্দুস সুকুরের ছেলে মোঃ সাব্বির হোসেনের সাথে ঢাকার আশুলিয়ায় একই বাসায় সাবলেটে বসবাস করে।  
 
 এরই ধারাবাহিকতায় আজ ৩১ আগস্ট ৪ ঘটিকায় র‌্যাব-১ এর  চৌকস দলটি অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহভাজন ১) মোঃ সাব্বির হোসেন (২২), পিতা- মোঃ আব্দুস সুকুর, জেলা- নাটোর’কে লালমনিরহাট জেলা হতে এবং অপর সন্দেহভাজন ২) মোঃ আনোয়ার হোসেন (২০), পিতা- মোঃ চাঁন প্রমানিক, জেলা- নাটোর এবং ৩) মোঃ সুরুজ আলী (১৮), পিতা- মোঃ রায়হান, জেলা- নাটোর’দেরকে মানিকগঞ্ছ জেলা হতে আটক করে। র‌্যাব জানায় আটক সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তারা সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং কঙ্কালপ্রায় গলিত মৃতদেহটি জনৈক জয়নালের বলে নিশ্চিত করে। 
 
ঘটনার বিবরণে  র‌্যাব জানায় যে, আটককৃত আসামী সাব্বির হোসেন এবং সাথী পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। সাব্বির আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টেসে চাকুরী করার সুবাধে তার স্ত্রী সাথীকে নিয়ে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় গত ফেব্রæয়ারি ২০২১ ইং তারিখ হতে ইদ্রিস কাজীর ৫ম তলা বাসার ৩য় তলায় ২ রুমের একটি ফ্ল্যাটে স্বপরিবারে ভাড়ায় বসবাস করত। নিহত ভিকটিম জয়নাল এবং সাব্বির পরস্পর গ্রামের বন্ধু হওয়ায় সে সাব্বিরের ভাড়া বাসায় গত মে ২০২১ হতে সাবলেট হিসেবে বসবাস করতে থাকে। একই বাসায় বসবাসের ফলে আটক আসামী সাব্বিরের স্ত্রীর সাথে জয়নালের সু-সম্পর্ক তৈরী হয়, যা সাব্বির বিবাহ বহিভর্‚ত সম্পর্ক হিসেবে সন্দেহ করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। মনোমালিন্যের জের ধরে গত জুন ২০২১ মাসে সাব্বির তার স্ত্রী সাথীকে শ^শুর বাড়ি লালমনিরহাটে পাঠিয়ে দেয়। তার স্ত্রীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর সাব্বির জয়নালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যা-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে  সাব্বির জয়নালকে চাকুরী দেওযার কথা বলে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে পূনরায় তার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। অতঃপর জয়নালকে হত্যার জন্য সাব্বির পরিকল্পিতভাবে তার গ্রামের বন্ধু আনোয়ার এবং সুরুজকে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে গত ১৪ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাত ১১ ঘটিকায় সাব্বির ভিকটিম জয়নালকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় তার ভাড়া বাসায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আনোয়ার এবং সুরুজের সহায়তায় গলাটিপে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। হত্যা করার পর লাশ গুম করার জন্য একটি পানির ড্রামের মধ্যে ভিকটিমের মৃতদেহ রেখে দরজা বন্ধ করে বাসায় তালা দিয়ে তারা সকলে পালিয়ে যায়।  
 
আটক আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা টিভি এবং মোবাইল ফোনে অপরাধ সংক্রান্ত বিদেশী সিরিয়াল দেখে এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে এবং গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখে। এদিকে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে র‌্যাব জানায়।

 

অপরাধ বিভাগের আরো খবর