সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ধনবাড়ীর ইউএনও‍‍`র উদ্যোগে সাড়া ফেলছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের প্রচার-প্রচারণায় কর্মদক্ষতায় শিক্ষক থেকে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সর্বজনীন স্পেশাল স্কিম আগ্রহ নিয়েই ফরম পূরণ করছে সর্বস্তরের মানুষজন।
বাংলাদেশে সরকারি এবং কিছু বেসরকারি চাকরিতে পেনশনের আর্থিক নিরাপত্তা থাকলেও বাকিদের জন্য নেই ভবিষ্যতের কোনো আর্থিক নিরাপত্তা। সব মিলিয়ে বার্ধক্যের জন্য যে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন, তার সুযোগ তাহলে কোথায়? একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে একটি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা গেলে বৃদ্ধ বয়সে কিছুটা হলেও আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।

এবার সেই আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তার যুগান্তকারী দিন নিয়ে এলো সরকার। গতকাল দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিধিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার ।

বাংলাদেশের জন্য, সত্যিকার অর্থেই একটা যুগান্তকারী ঘটনা ঘটতে চলেছে। এতদিন আমরা শুনতাম উন্নত দেশগুলোয় এ ধরনের উদ্যোগ চালু আছে, কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ যে এটা করতে পারে, তা আমাদের চিন্তার মধ্যেই ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সৃজনশীলতা দূরদর্শিতা দিয়ে ইতোমধ্যে দেশে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করে চলেছেন।তার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ বাংলাদেশকে একটি সমাজ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন তার তার মধ্যে  হলো সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৫ বছরের ওপরে দরিদ্র বয়স্কদের ৬০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দেয় সরকার। ৫৮ লাখ প্রবীণ এই বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়া বর্তমানে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বিধবাকে মাসিক ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। এছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় ভাতাসহ বেশ কিছু সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বয়স্কদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে সরকার।

এবার দেশে চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া সকল বয়সীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতাভুক্ত হতে পারবে। প্রত্যেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পর থেকে আজীবন প্রতি মাসে পেনশন পাবেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে একটি কল্যাণমূলক উদ্যোগ। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় একটি মাইলফলক। সম্পদের সুষম বণ্টন কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূলমন্ত্র। রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ হবে দেশের সর্বসাধারণের সামাজিক সুরক্ষার অনন্য উদ্যোগ।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মৌলিক কিছু নিয়ম, সকল বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পেনশনধারীরা আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

প্রগতি, প্রবাস, সমতা ও সুরক্ষা স্কিমে অংশ নেয়ার পর ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন।

তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত। অর্থাৎ কোনো চাঁদাদাতা যদি ৬০ বছর বয়সে মারা যান তাহলে তার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ ৭৫ বছর তার নমিনি পেনশন সুবিধা পাবেন। প্রবাসী, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে অনুলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। স্কিমে অংশ নেয়ার পর তিনি আর সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পাবেন না।

কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেয়া হবে।

আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসীর ক্ষেত্রে ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেয়ার তারিখ অবহিত করা হবে। যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই স্কিমের জন্য ধার্যকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে।

নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বা তফসিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন।

প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন।

নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেয়া যাবে। এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।  কেউ ধারাবাহিকভাবে ৩ কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে তার হিসাবটি স্থগিত হয়ে যাবে এবং বিধি অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।  চাঁদাদাতা যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন।  কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশ নিলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে।

সব স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে।

স্কিমের চাঁদাদাতা, স্কিমে জমা করা অর্থ বা জমার বিপরীতে প্রাপ্য পেনশন বাবদ অর্থ তার মৃত্যুর পর গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য এক বা একাধিক নমিনি মনোনয়ন করতে পারবেন। যে কোনো সময় নমিনি বাতিল করে নতুন নমিনি নির্বাচন করা যাবে। নমিনি মৃত্যুবরণ করলে চাঁদাদাতাকে পুনরায় নমিনি মনোনয়ন করতে হবে।   জমাকৃত চাঁদা থেকে ঋণ গ্রহণ

চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহনির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনে জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করতে পারবেন; যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য করা ফি’সহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং সমুদয় অর্থ চাঁদাদাতার হিসাবে জমা হবে। গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুনভাবে কোনো ঋণ নেয়া যাবে না।

এছাড়া শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ এবং মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, চাঁদাদাতার পেনশন হিসাব বা কপার্স হিসাব, স্কিমের স্বত্ব, চাঁদাদাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর স্কিমের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক বিধান রাখা হয়েছে।

চারটি স্কিমের মাধ্যমে এই সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু হচ্ছে। স্কিমগুলোর নাম:প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা। প্রবাস স্কিমটি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য।

প্রগতি স্কিম বেসরকারি  চাকরিজীবীদের জন্য ।
সুরক্ষা স্কিম হচ্ছে অনানুষ্ঠানিক খাত। স্বকর্মে নিয়োজিত যেমন: রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার মানুষেরা এ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। আর সমতা স্কিম হচ্ছে  স্বল্প  আয়ের মানুষের জন্য, যাদের বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকার কম।

সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম চালু হলে ভবিষ্যতে জনগণের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাবোধ জন্ম  নেবে। 

ধনবাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,আজ বয়স্ক মানুষরা যেভাবে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে, সেই ভাবনা তাদের মধ্যে আর থাকবে না। এ কারণেই শেখ হাসিনাকে জনবান্ধব রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আখ্যা প্রদান করা যেতেই পারে।

বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য এ সুবিধা চালু করে বাস্তবায়ন করছেন।

বর্তমানে আমাদের অভিযাত্রার গন্তব্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ হবে সকল স্তরের নাগরিকদের নিয়ে সত্যিকার অর্থের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। এই যাত্রায় নতুন বাহন সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা, যা চালু হলে বয়স্কদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি, দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণের গন্তব্যকে দ্রুত কাছে নিয়ে আসবে।

 


একুশে সংবাদ/এস কে  

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর