সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

লালপুরে প্রতিপক্ষের আঘাতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর মৃত্যু

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৮:২০ পিএম, ২১ মার্চ, ২০২৩

নাটোরের লালপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের আঘাতে আছিয়া বেগম (৬৫) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনজন। এ ঘটনায় মামলার পর দুই নারীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

আছিয়া বেগম ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাফাতুল্লাহর স্ত্রী। এ ঘটনায় আহতরা হলেন—মো. শাফাতুল্লাহ (৭৯), তাঁর ছেলে মো. শাহিন আলম (৪৫) ও মো. রায়হানুল ইসলাম (৪২)।

 

ঘটনার পর বিকেলে মো. শাফাতুল্লাহ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—একই গ্রামের মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. ইউসুফ আলী (২০), মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে মো. বক্কার আলী (৪৫), তাঁর স্ত্রী মোছা. হাজেরা বেগম (৩৮), মৃত আফসার উদ্দিনের ছেলে মো. জনাব আলী (৪০), মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে মো. হান্নান আলী (৪৬), মৃত জবের আলী প্রাংয়ের ছেলে মো. বদরুল ইসলাম বাদল (৬০) এবং মো. মুন্নাফ আলীর স্ত্রী মোছা. রেনুকা বেগম (৪১)।

 

স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা মো. শাফায়েতুল্লাহ ও বক্কারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। মঙ্গলবার সকালে সাফায়েত উল্লাহ ছেলে শাহিন আলম ও রায়হানুল ইসলামকে নিয়ে মাঠে জমি চাষ করতে যান। এ সময় প্রতিপক্ষ ইয়ার উদ্দিনের ছেলে বক্কার ও মান্নান দলবল নিয়ে বাঁশের লাঠিসহ তাঁদের ওপর আক্রমণ করে শাহিনুরকে গুরুতর আহত করেন। এ সময় শাহিনের মা ঠেকাতে গেলে আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে লালপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

 

নিহতের ছেলে রায়হানুল ইসলাম বলেন, আমাদের কেনা ৪৬ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছি। এখন ওই জমির মালিকানা দাবি করছে ইয়ার উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নান ও বক্কার। এ নিয়ে একটি মামলার রায়ও পেয়েছি। এ নিয়ে অপর একটি মামলা চলমান রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উভয় পক্ষের কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। এ সময় আমার ভাই শাহিন আলমকে মারপিট করতে দেখে থামাতে গেলে বাঁশের লাঠির আঘাতে আমার মা আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যান।

 

নিহতের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা মো. শাফাতুল্লাহ (৭৯) বলেন, গত ১৬ মার্চ তিনজন দিনমজুর নিয়ে আবাদি ওই জমির ফসল (খেসারি) কাটতে যাই। এ সময় লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জোর পূর্বক আমার জমির জমির ফসল (খেসারি) কেটে নিয়ে চলে যায়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হাসুয়া নিয়ে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে তাঁরা। এ ঘটনায় ওই দিন আমি আব্দুলপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করেছি।

 

এ দিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. বক্কার আলী ও তাঁর স্ত্রী মোছা. হাজেরা বেগম। তাঁদের অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ক্ষমতা দেখিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল করেছেন শাফাতুল্লাহ ও তাঁ ছেলেরা। মোট ৪৬ শতাংশ জমির মধ্যে শাফাতুল্লাহরা পাবেন দেড় শতাংশ। বাকিটা তাদের (বক্কার) সম্পত্তি। যা নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান তাঁরা।

 

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জামিলা আক্তার বলেন, নিহতের ডান হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

 

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা মো. শাফাতুল্লাহ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার পর দুই নারীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

একুশে সংবাদ.কম/এ.ই/বি.এস

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর