সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রাণীনগরে কয়েক যুগের পরিত্যাক্ত খাদ্য গুদাম সংস্কারের দাবী

প্রকাশিত: ০৫:৩২ পিএম, ৭ নভেম্বর, ২০২০

নওগাঁ জেলার  রাণীনগর উপজেলা বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত উপজেলার পূর্বাঞ্চল আবাদপুকুর। জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানের হাট হচ্ছে আবাদপুকুর হাট। এই অঞ্চলটি ধান চাষের জন্য বিখ্যাত। আশির দশকে এই অঞ্চলের ধান সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে তৎকালীন সরকার আবাদপুকুরে একটি টিপিসি (সাময়িক ক্রয় কেন্দ্র) শাখা খাদ্য গুদাম নির্মাণ করেছিলো- যা বর্তমানে পরিত্যক্ত। এতে করে এই অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন যুগের পর যুগ।

উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকে তৎকালীন সরকার উপজেলার আবাদুপুকুর ও তার আশেপাশের এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের উদ্দ্যেশ্যে আবাদুপুকুরহাট সংলগ্ন স্থানে সিলমাদার মৌজায় ১ একর ৮৪ শতাংশ খাস জায়গার উপর টিপিসি (সাময়িক ক্রয় কেন্দ্র) শাখা খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে। এটি নির্মাণের কয়েক বছর পর অদৃশ্য কারণে সরকার তা বন্ধ করে দেয় এবং কয়েক বছর পর এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর কয়েক যুগ কেটে গেলেও পরবর্তিতে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বর্তমানে গুদামের ভবনটি ক্ষতবিক্ষত অবকাঠামো নিয়ে কোনো মতে টিকে আছে। এটি বর্তমানে এই অঞ্চলের মাদক সেবক ও ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আর এর আশেপাশের সকল জায়গা লিজ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। আবাদপুকুর থেকে রাণীনগর খাদ্য গুদামের দূরত্ব প্রায় ১৫কিলোমিটার। সরকারের ঘরে ধান দেওয়ার জন্য কৃষকদের এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বাড়তি ভাড়াসহ অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে প্রতিবছর। যার কারণে সরকারের ঘরে ধান দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে এই অঞ্চলের কৃষক। তাই তারা বাধ্য হয়েই আবাদপুকুর হাটেই কম দামে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রয় করছেন। যার কারণে কৃষকরা বছরের পর বছর ধানসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। যদি এই শাখা গুদামটি চালু থাকতো শুধু আবাদপুকুর নয় পাশের বগুড়া জেলার আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম উপজেলা, নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান সঠিক মূল্যে সরকারের ঘরে খুব সহজেই সরবরাহ ও সংরক্ষণ করতে পারতো। এতে করে এই অঞ্চলের কৃষকরা অধিক লাভবান হতো।

আবাদপুকুর বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন বলেন আবাদুপুকুর এলাকায় নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। উপজেলার সিংহভাগ ধানই উৎপাদন হয় এই অঞ্চলে। এখানে যদি নতুন করে আধুনিক মানের খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হয় তাহলে উপজেলার একমাত্র খাদ্যগুদামে চাপ অনেকটাই কমতো এবং মজুদের ধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতো। যার কারণে দ্বিগুন সংখ্যক কৃষক সরকারের ঘরে ধান দেয়ার সুযোগ পেতো। তাই এই বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম সরকার বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়াত স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিলের মাধ্যমে আবাদুপুকুরের এই পরিত্যক্ত শাখা খাদ্যগুদামে নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণের জন্য একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। সরকার এটি অনুমোদন এবং অর্থ বরাদ্দ দিলেই খাদ্যগুদাম নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। প্রতি বছর ধানের উৎপাদন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার প্রেক্ষিতে উপজেলার আবাদুপুকুর এলাকায় নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা খুবই জরুরি। উপজেলার ছোট্ট খাদ্যগুদামে জায়গা সংকট হওয়ার কারণে অনেক সময় ধান গুদামের বাহিরে পিল দিয়ে রাখতে হয়। আর নতুন করে একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা হলে এই উপজেলাসহ আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হবেন।

একুশে সংবাদ/এআরএম

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর