বর্তমানে তার ৫০ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ড্রাগন, মাল্টা, ছাতকি কমলার চাষ রয়েছে। গতবার প্রায় কোটি টাকার ফল বিক্রি করেছেন। এবারও তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকার ড্রাগন, মাল্টা বিক্রি করবেন। সফল এই ফল চাষি আক্তারুজ্জামান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাথানগাছি গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছোট ছেলে।
কথা হয় আক্তারুজ্জামানের সাথে। লেখাপড়া ছেড়ে বাড়িতে চলে আসার পর পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের নানা ছন্দ পতনের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছিল তার। সমাজ জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে অর্থ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছিলেন প্রতিটি দিন। এমন সময় অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সফল উদ্যোক্তার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হন। এরপর যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় তার।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের কথা, যুব উন্নয়ন থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিই। এরপর উপজেলা যুব ও মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শে পরিবার থেকে প্রাপ্ত কিছু আরো অর্থ যোগ করে আক্তারুজ্জামান এগ্রো ফার্ম নামে একটি কৃষি ফার্ম গড়ে তুলি। প্রথম দিকে ১৫ বিঘা জমিতে পেঁপে ও কলা দিয়ে শুরু করি। এর সাথে ১২ বিঘা জমিতে কুলচাষ করি। চাষের শুরু থেকে সফলতা আসতে থাকে। ২০১৬ সালে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার সহযোগিতায় পেয়ারার বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করি। সেই চারা ৫০ বিঘা জমিতে রোপণ করা হয়। এসব জমি অর্ধেকের বেশি বর্গা নেওয়া।
একই বছর পেয়ারার সাথে ২০ বিঘা জমিতে সমন্বিত পদ্ধতিতে মাল্টা এবং ১০ বিঘা জমিতে ছাতকি কমলার চারা রোপণ করা হয়। পরের বছর বাকি ২০ বিঘা জমিতে পেয়ারার সাথে ড্রাগনের চারা রোপণ করি। চলতি বছর ওই জমি থেকে ২৫ থেকে লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি। এছাড়া ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। বাগান রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ লাভ হচ্ছে বলে জানান এই সফল ফলচাষি।
তার বিশাল এরিয়ায় গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন এই বাগান দেখতে এখন প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন কৃষি কর্মকর্তাসহ উদ্যোক্তারা বাগান পরিদর্শন করছেন। যেখানে নিয়মিত প্রায় ২৫ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি জানান, ড্রাগন একটি টেকসই ফল। খুঁটি পদ্ধতিতে একটি খুঁটিতে চারটি চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের পর ফল আসতে সময় লাগে প্রায় ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত খুঁটি প্রতি খরচ পড়ে গড়ে এক হাজার টাকা। একটি খুঁটিতে এক বছরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি ফল উৎপাদিত হয়। ড্রাগন ফলের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল মাস থেকে একটানা নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এসময়ে কয়েক দফায় ফল আসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। ড্রাগন গাছে মূলত জৈব সার এবং সাথে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার এবং পিঁপড়া দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।
১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিলেও সংসার বিরাগী হওয়ায় কোনো রকমে তৃতীয় বিভাগে পাশ করেন তিনি। এরপর ভাইয়েরা জোর করে ঢাকাতে নিয়ে একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। সেখানেও ভালো না লাগায় ভারতে পালিয়ে যান। ফলে লেখাপড়া আর হয়ে উঠেনি তার।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান আলী জানান, আক্তারুজ্জামানের ফল চাষ পদ্ধতি প্রশংসার দাবি রাখে। তার ফলচাষে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে অনেক বেকার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করি। বিশেষ করে ফল চাষের রোগ-বালাই দমনে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তা প্রতিদিনই তার বাগান পরিদর্শন করে।
তিনি আরো বলেন, বিদেশি ফল ড্রাগন ও মাল্টা লাভজনক হওয়ায় অনেকে এখন তার কাছ থেকে চারা নিয়ে রোপণ করছে। ক্যাকটাস গোত্রের ফল ড্রাগন দেখতেও খুব আকর্ষণীয়। এর স্বাদ হালকা মিষ্টি। ড্রাগন ফলে ক্যালোরি খুব কম থাকায় এ ফল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য ভালো। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। যে কারণে শরীরের চর্বি কমায় ও রক্তের কোলেস্টেরল কমানোসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
একুশে সংবাদ/ বা.প্র/ রখ