সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

খাদ্যের বিনিময়ে দেখা মিলবে জান্নাতের

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ক্ষুধার্ত ব্যক্তির মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো ছওয়াব আর নেই। পূর্ববর্তী যুগের এক ভয়ংকর পাপীর ঘটনা বলেছেন রসুল (সা.)। ইমাম বুখারি তাঁর সহি গ্রন্থে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন হাদিসটি। রসুল (সা.) বলেন, ‘হে আমার সাহাবিরা! তোমাদের এক পাপিষ্ঠ নারীর গল্প শোনাই।

জীবনভর পাপে ডুবে ছিল। আল্লাহকে ডাকেনি কোনো দিন। ধর্মকর্মে ছিল চরম অনাগ্রহ। নারী হলেও হৃদয় ছিল পাথরের মতো। মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। ফেরেশতারা ধরেই নিয়েছে উত্তপ্ত জাহান্নামের লাকড়ি হবে এ নারী। আল্লাহর খেলা বোঝা দায়। মৃত্যুর পর ভয়ংকর এ পাপীই হয়ে গেল জান্নাতের মেহমান। কীভাবে? নিজেই প্রশ্ন করলেন রসুল (সা.)। সাহাবিদের অভ্যাস, জানা সত্ত্বেও খুব একটা উত্তর দিতেন না। বলতেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন। এটা আসলে বিনয়েরই প্রকাশ। শুধু বিনয় না, একজন শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্যও এমনই হওয়া উচিত। নিজের জ্ঞানের বহর না দেখিয়ে শিক্ষক থেকে জেনে নেওয়া। সাহাবিরা তা-ই করলেন। বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনি এবং আপনার প্রভু আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন। রসুল (সা.) বললেন, একদিন একটি বিড়াল খুব পিপাসার্ত ছিল। নারীটি কুয়োর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হয়তো পাপ করে এসেছে, অথবা না। পিপাসায় ঝুলে যাওয়া বিড়ালের জিব দেখে নারীটির মনে দয়ার ফুল ফুটল। কুয়ো থেকে পানি তুলে বিড়ালকে পান করাল। বিড়ালের জীবন বেঁচে গেল। আল্লাহর কাছে নারীটির জন্য দোয়া করল। ব্যস! কপাল খুলে গেল তার। মাত্র একটি ভালো আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে জান্নাতে জায়গা করে দিলেন। সুরা বাকারার ১৭৭ নম্বর আয়াতে পুণ্যের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ ইমানের পরই মানুষকে সাহায্যের কথা বলেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, অসহায়, মুসাফির ও সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থদানে। নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায়ের মধ্যে। ওয়াদা রক্ষায়। দুঃখকষ্ট, বালা-মুসিবত ও সত্যের পথে যে-কোনো দুর্যোগে ধৈর্যধারণ করায়। যারা তা করবে, তারাই প্রকৃত সত্যানুসারী ও আল্লাহ-সচেতন। সৃষ্টিকে খাবার খাওয়ানো স্রষ্টার কাছে কেন এত প্রিয় কখনো ভেবে দেখেছেন? মুসলিমে বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘সব সৃষ্টি আমার পরিবার।’ এ গ্রন্থেরই আরেক হাদিসে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষকে খাওয়ানো মানে আমাকেই খাওয়ানো।’ কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাকে-আপনাকে ডেকে বলবেন, হে আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান! ক্ষুধার্ত-অভুক্ত পেটে তোমার দুয়ারে হাত বাড়িয়েছিলাম খাবার পাওয়ার আশায়। তুমি তখন বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে। এ কথা শুনে আমাদের চোখ কপালে উঠে যাবে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলব, হে পরোয়ারদেগার! আপনি জগতের রিজিকের মালিক! রব্বুল আলামিন! আমি অধম আপনাকে কীভাবে খাওয়াব? তখন আল্লাহ বলবেন, দুনিয়ার জীবনে অভুক্ত মানুষ যখন তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, তাকে খাবার দিলেই আমাকে খাওয়ানো হতো। তখন আমরা আফসোস করে বলব, হায়! সেদিন যদি ওই অভুক্তকে জঞ্জাল ভেবে ধমক দিয়ে বিরক্ত হয়ে তাড়িয়ে না দিতাম!

একুশে সংবাদ/ বা.প্র/ রখ

ধর্মচিন্তা বিভাগের আরো খবর