সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বিএনপির সভাপতি সেই  মমিন এখন জেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক!

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:২৬ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আল-আমিন এম তাওহীদ : একটানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ঐতিহ্যবাহি সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই সুযোগে দলে অনুপ্রবেশ এবং হাইব্রিডদের জয়গান আজ ভরপুর। বর্তমানে টব অব দ্যা ক্যান্ট্রি নোয়াখালী জেলা। সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক থেকে শুরু করে আলোচনা সমালোচনার তুমুল ঝড়।

গতকাল বিকেলে নতুন করে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ভাইরাল হয় নোয়াখালীর একটি রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য। সেই বক্তব্য এখন সমালোচনায় পরিনত হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন বিএসসি বক্তব্য দিচ্ছেন প্রতিবাদ সমাবেশে। 

ভাইরাল হওয়া ভিডিও বক্তব্যে বার বার খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। এরপর ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার তুমুল ঝড় উঠে। ক্ষোভে ফুসে উঠে আওয়ামী লীগের তৃণমুল থেকে উচ্চপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে খাইরুল আলম চৌধুরী সেলিমকে সভাপতি ও একরামুল করিম চৌধুরী এমপিকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি অসমাপ্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় আব্দুল মমিন বিএসসিকে। এরপর সম্প্রতি সময়ে কাদের মির্জা ও একরামুল চৌধুরী দুইগ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। 

মির্জা কাদের দাবি করেন, ত্যাগী আওয়ামী লীগ বঞ্চিত করে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী মনগড়া জেলা কমিটি করেছে। যার মধ্যে বেশিরভাগ জামায়াত বিএনপির লোকজন।

একপর্যায়ে দলের হাইকমান্ড থেকে দুইগ্রুপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এরপরও সেখানকার রাজনীতি থমথমে বিরাজমান। সেই বির্তকিত কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়লে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সেই জারিকৃত ১৪৪ ধারা অমান্য করে বিক্ষোভ মিছিল করে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সমর্থকরা। পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করলেও পরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে এমপি একরাম গ্রুপের লোকজন।

সেই প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনুপ্রবেশকারী আব্দুল মমিন বিএসসি। তাঁর বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রশ্ন তুলেন ছাত্রলীগ যুবলীগ করেনি হঠাৎ করে কিভাবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেলেন এই বিএনপির নেতা মমিন বিএসসি।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, আব্দুল মমিন বিএসসি কবিরহাট উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন বিএনপির দীর্ঘদিন সভাপতি দায়িত্বে ছিলেন। এরপর একরামুল করিম চৌধুরী এমপির পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ব্যক্তিগত গভীর সর্ম্পক গড়ে উঠে আব্দুল মমিনের। সেই সুবাদে ২০১৯ সালের জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে এই অনুপ্রবেশকারী জেলা আ.লীগের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন। এরপর চলমান ২০২১ সালের প্রস্তাবিত কমিটিতেও তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নাম রয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধরী তিনি আব্দুল মমিনকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করেন। দলের প্রবীণ ও ত্যাগীদের বঞ্চিত করে বেশিরভাগ বিএনপি জামায়াতকে  ওই কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। হাইব্রিড আব্দুল মমিন জন্ম থেকে বিএনপি করে আসছে, গতকাল বক্তব্যে বার বার খালেদা জিয়ার নাম বলেছেন তাঁর মানে হচ্ছে এখনো বঙ্গবন্ধুর খুনি জিয়ার প্রেম আব্দুল মমিনের ভিতরে বিদ্যমান। তিনি স্কুল শিক্ষক থাকা অবস্থায় সুন্দরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছে। সেই একজন বিএনপির নেতা কিভাবে দেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ হয় সেটি বোধগম্য নয়। আবার তাঁর নাম বর্তমানে প্রস্তাবিত কমিটিতেও রয়েছে যা ভবিষ্যৎ আওয়ামী লীগের জন্য হুমকি।

নোয়াখালী জেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, খুন সন্ত্রাসের রাজনীতি যেন পুনরায় পদ পদবিতে না আসে এবং বিএনপি জামায়াত থেকে আসা হাইব্রিডদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। এসকল বিএনপি জামায়াতকে যারা দলে স্থান দিয়েছে তাদেরকেও বহিস্কারসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তারা।

গোপনসূত্রে জানাযায়, ২০১৯ সালে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আব্দুল মমিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরে ঠাঁই পান। এরপর শিক্ষক থেকে হয়ে উঠেন বেপরোয়া। চাকরির নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন তদবিরসহ নানা অভিযোগ। নিজের ভাগ্য বদলানোসহ গড়ে তুলেছেন সম্পদ। শুধু এখানেই শেষ নয় তাঁর আত্বীয় স্বজন পরিবারের ১২ জন সদস্যকে চাকরি দিয়েছেন।

সাবেক বিএনপির নেতা নব্য জেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন বিএসসি নোয়াখালীর কালামুন্সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ডান হাত হিসেবে রয়েছেন এই হাইব্রিড নেতা। অনুপ্রবেশকারী আব্দুল মমিন’রাই একমাত্র সাংসদ একরামুল চৌধুরীর ভরসা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি জামায়াত থেকে এভাবে আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীরা আজ জায়গা করে নিয়েছেন। দলের রাজপথে থাকা কর্মীদের স্থান না দিয়ে মোটা অংকের বিনিময় এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এসব হাইব্রিডদের জায়গা দিচ্ছেন কিছু জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতারা। এগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ আরো ভয়াবহ হবে। আগামিতে দলকে টিকিয়ে রাখতেখুব কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিদের হাতেও দলের সবকিছু দায়িত্ব দেওয়া ঠিক না। বঙ্গবন্ধু যাদেরকে লালন পালন করেছিলেন সেই মুশতাক, জিয়াই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। সেই ভুল আওয়ামী লীগ দল সামনের দিকে করবে না বলে আশা করি।

রাজনীতি বিভাগের আরো খবর