সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় ট্রেনের আগুন ও করুণ মৃত্যু

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একটি বগি থেকে মা, শিশুসন্তানসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার জানান, আগুনের খবর ভোর পাঁচটা ৪ মিনিটে পাওয়া গেছে। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট পাঁচটা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ প্রহরায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সকাল ছয়টা ৪৫ মিনিটে আগুন নির্বাপণ হয়।

এ সময় একটি বগি থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহগুলোর মধ্যে একটি শিশু, একজন নারী ও দুইজন পুরুষ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার ৩ বছরের ছেলে ইয়াছিন। বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৫টায় ট্রেনে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নেত্রকোণার হাবিবুর রহমান হাবিব। হাবিবুরের চোখের সামনে ট্রেনের ভেতরে আটকা পড়ে পুড়ে মারা যায় বোন ও ৩ বছরের ভাগনে।  

নিহত নাদিরার ভাই হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ‘তাদের বাড়ি নেত্রকোণার সদর উপজেলার বরুনা গ্রামে। ঢাকার তেজগাঁও তেজতুরী বাজার এলাকায় থাকেন। নাদিরার স্বামী মিজানুর কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করেন। গত ৩ ডিসেম্বর তারা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই গত রাত ১২টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস করে রওনা দিয়েছিলেন ঢাকায় ফিরতে। ভোরে তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। সঙ্গে ছিলেন তার বোন নাদিরা ও তার দুই ছেলে ইয়াসিন (৩) ও ফাহিম (৮)।’

হাবিবুর আরও জানান, ‘তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেনের পেছনের সিট থেকে আগুন জ্বলে উঠে। মুহূর্তেই আগুন পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে দৌড়ে তিনি ফাহিমকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামতে পারলেও ভেতরে আটকা পড়েন ইয়াসিন ও তার মা নাদিরা। তাদের আর কোনোভাবেই বের করতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিস তাদের মরদেহ বের করে।’

ট্রেনটি অপর এক যাত্রীর নাম বকুল আক্তার। তিনি মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনটিতে ঢাকায় আসছিলেন। বকুল আক্তার জানান, ‘আগুনের কারণে তিনি তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে নেমে আসেন। ট্রেনে তার সঙ্গে ছেলে খোকন ও নাতনি শারমিন (২) ছিল। তিনি ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন যাত্রীদের বরাত দিয়ে জানান, ‘ট্রেনটি নেত্রকোণা থেকে ঢাকায় আসছিল। বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর যাত্রীরা পেছনের বগিতে আগুন দেখতে পান। পরে তারা চিৎকার করতে শুরু করেন। এরপর চালক ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামান।

গত ১৩ ডিসেম্বর ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়ার চিলাই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় এক যাত্রী নিহত এবং ট্রেনের লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টারসহ কয়েকজন যাত্রী আহত হন।

একুশে সংবাদ/এসআর

জাতীয় বিভাগের আরো খবর