সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ভুমিকম্পের আপাদমস্তক

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ২২ জানুয়ারি, ২০২২
ছবি: একুশে সংবাদ

ভুমির কম্পন থেকে ভুমিকম্প শব্দটির উৎপত্তি। আমরা প্রায়ই ভুমিকম্প নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখিন হই। বই-পুস্তকে পড়ে ভুমিকম্প সম্পর্কে মোটামোটি একটা ধারণা সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু কেন তৈরি হয় এই ভুমিকম্প? কেনই বা আগে থেকে জানা সম্ভব হয় না এই দুর্যোগের সম্পর্কে? কীভাবে নির্ধারণ করা হয় এর মাত্রা? উৎসুক মানুষের মন এসব প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করার চেষ্টা চলবে আজ।


ভুমিকম্পের কারণঃ-
আমরা যে মাটি দেখি আমাদের পায়ের তলায় তার নিচে আছে টেকটনিক প্লেট। এটাকে সহজ ভাষায় বললে বলা যায় বড় শিলা খন্ড, যা ভু-গর্ভস্থ ম্যাগমা থেকে আমাদেরকে পৃথক করে রেখেছে। যদি কখনও এই ম্যাগমা অতিরিক্ত চাপের ফলে কোন ছিদ্র পথ দিয়ে বের হয়ে আসে তখন তৈরি হয় ভুমির কম্পন। এছাড়াও একটা প্লেটের উপর অন্য একটি প্লেট থাকার কারণে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত চাপের ফলে কিছু প্লেটের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ধসে যায়। এসময়ও ভুমিতে কম্পনের সৃষ্টি হয়। ভুমিকম্প বেশির ভাগ সময়ই হয়ে থাকে টেকনটিক প্লেটের এই স্থান চুত্যির কারনে। ভূগর্ভস্থ স্থান যেখানে শিলা প্রথমে ভেঙে যায় তাকে ভূমিকম্পের ফোকাস বা হাইপোসেন্টার বলা হয়। ফোকাসের ঠিক উপরে (ভূ-পৃষ্ঠে) স্থানটিকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল বলা হয়।


ভুমিকম্পের স্থায়িত্বকালঃ
ভুমিকম্পের স্থায়িত্বকাল অন্য যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে অনেক কম। যখন কোন মানুষ বলে যে, আমি ১০ সেকেন্ড যাবত ভুমিকম্প অনুভুত করেছি, তখন ওই মানুষটি শুধু তার মতামত দিচ্ছে। ভুমিকম্প আসলে শুরু হয়েছে আরো আগে থেকেই। ভুমিকম্প কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্ট গুলা থেকে জানা যায় ৫ মিনিট পর্যন্ত ভুমিকম্প হতে পারে। এর বেশিও হতে পারে, তবে তা বিরল। এটি এতোই অল্প সময় হয় যে কিছু বুঝে উঠার আগেই সব ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়।


ভুমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণঃ
ভূমিকম্প একটি সিসমোগ্রাফিক নেটওয়ার্ক দ্বারা রেকর্ড করা হয়। নেটওয়ার্কের প্রতিটি সিসমিক স্টেশন সেই সাইটের মাটির গতিবিধি পরিমাপ করে। ভূমিকম্পে একটি পাথরের একটি ব্লকের উপর দিয়ে অন্য খন্ডের স্খলন শক্তি নির্গত করে যা ভূমিকে কম্পিত করে। এই কম্পনটি মাটির সংলগ্ন অংশটিকে ধাক্কা দেয় এবং কম্পন সৃষ্টি করে এবং এইভাবে শক্তি ভূমিকম্প হাইপোসেন্টার থেকে একটি তরঙ্গের মধ্যে ভ্রমণ করে।


ভুমিকম্প মাপার কয়েকটা পদ্ধতিঃ
১. মাত্রা হল ভূমিকম্পের আকারের সবচেয়ে সাধারণ পরিমাপ। এটি ভূমিকম্পের উৎসের আকারের একটি পরিমাপ এবং আপনি যেখানেই থাকুন না কেন বা কম্পন কেমন অনুভূত হোক না কেন এটি একই সংখ্যা। রিখটার স্কেল হল মাত্রা পরিমাপের একটি সেকেলে পদ্ধতি, টেলিসিসমিক পরিমাপ পদ্ধতি ভূমিকম্পের জন্য আর ব্যবহার করা হয় না। রিখটার স্কেল রেকর্ডিংয়ে সবচেয়ে বড় কম্পনটি (প্রশস্ততা) পরিমাপ করে, তবে অন্যান্য মাত্রার স্কেল ভূমিকম্পের বিভিন্ন অংশ পরিমাপ করে। ইউএসজিএস বর্তমানে মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল ব্যবহার করে ভূমিকম্পের মাত্রা রিপোর্ট করে, যদিও গবেষণা এবং তুলনার উদ্দেশ্যে অন্যান্য অনেক মাত্রা গণনা করা হয়।


২. তীব্রতা হল ভূমিকম্পের কারণে কম্পন ও ক্ষয়ক্ষতির একটি পরিমাপ। এই মান অবস্থান থেকে অবস্থানে পরিবর্তিত হয়।
কেন জানা যায় না আগে থেকে?
ভুমিকম্প যেকোন সময় যেকোন জায়গা থেকেই উৎপন্ন হতে পারে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করতে পারে শুধু টেকনটিক প্লেটের জিওগ্রাফিকাল অবস্থা দেখে এবং কিছু সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অবস্থা বিবেচনা করে। তবুও বলা কঠিন যে, ভুমিকম্প কখন হবে। বিজ্ঞানীদের পক্ষে এতটুকুই বলা সম্ভব হয়েছে যে, কোথায় কোথায় বেশি ঝুকি আছে। তাছাড়া ভুমিকম্পের আগাম বার্তা পাওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতের জন্য এখনো বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যদি তারা সফল হতে পারেন, তাহলে ভুমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।

জানা-অজানা বিভাগের আরো খবর