সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

চলতি মাসেই যাত্রা শুরু করবে টাইটানিকের চেয়ে ৫ গুণ বড় প্রমোদতরি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

চলতি মাসের ২৭ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরি ‘আইকন অব দ্য সিজ’। এটি টাইটানিকের চেয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বিশাল। রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন প্রমোদতরির দৈর্ঘ্য ৩৬৫ মিটার বা প্রায় ১ হাজার ২০০ ফুট। এর আনুমানিক ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন। ওজন ধারণের ক্ষমতা বোঝাতে বলা যায়, প্রমোদতরিটি দুটি সিএন টাওয়ারকে ভাসিয়ে রাখতে পারবে।

কানাডার টরন্টোয় অবস্থিত সিএন টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ৫৫৩ মিটার বা ১ হাজার ৮১৫ ফুট। অন্যদিকে, ১৯১২ সালে তখনকার সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল টাইটানিক। এর দৈর্ঘ্য ছিল  ৮৫২ ফুট এবং এর ওজন ছিল ৪৬ হাজার ৩২৯ টন যা আইকন অব দ্য সিজের পাঁচ ভাগের একাংশের চেয়ে কিছু কম ছিল।  

প্রায় ১১১ বছর আগে বিপুল উৎসাহ-কৌতূহল নিয়ে সেই টাইটানিক জাহাজে চড়েছিলেন হাজারো মানুষ। প্রথম যাত্রাতেই আটলান্টিকে ডুবে যায় সেই ঐতিহাসিক জাহাজ। কত শোকগাথা, গল্পগাথা, চলচ্চিত্র সেই জাহাজকে ঘিরে। দিন গেছে, তারপর টাইটানিকের চেয়ে আরও বড় জাহাজ এসেছে। কিন্তু টাইটানিকের মতো বিশ্ববাসীর মনের গভীরে আর কোনোটিই সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। চলতি মাসের ২৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামি উপকূলবর্তী ক্যারিবীয় সাগরে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রমোদতরিটি। মালিকপক্ষের দাবি, এই প্রমোদতরি নিয়েও মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। অল্প সময়ের মধ্যেই সেই প্রথম যাত্রার রেকর্ডসংখ্যক টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

ফিনল্যান্ডে এই প্রমোদতরি তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো সাগরেও চালানো হয়েছে। গত বছর অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রমোদতরিটি হস্তান্তর করা হয়।

বিশাল এই প্রমোদতরিতে প্রায় ৫ হাজার ৬১০ যাত্রী ও ২ হাজার ৩৫০ ক্রু থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এতে থাকছে একটি ‘ওয়াটার পার্ক’। এটিই হতে যাচ্ছে সমুদ্রে ভাসমান বিশ্বের বৃহত্তম ‘ওয়াটার পার্ক’। এর নাম রাখা হয়েছে ‘ক্যাটাগরি সিক্স’। এই পার্কে রেকর্ডসংখ্যক ছয়টি ‘ওয়াটার স্লাইড’ যুক্ত থাকবে। তবে যেসব অতিথি অবকাশে আরও বেশি রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চাইবেন, তাদের জন্য প্রমোদতরিতে থাকছে সাতটি পুল ও নয়টি ঘূর্ণিজলের ব্যবস্থা।

এরই মধ্যে যাত্রার জন্য জাহাজটিকে নোঙ্গর করা হয়েছে ফ্লোরিডার মিয়ামি বন্দরে। ২৭ জানুয়ারি পূর্ব ও পশ্চিম ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বিশ্বের সবচয়ে বড় এই ক্রুজ জাহাজটি। জাহাজটি পরিচালনা করছে র‌য়্যাল ক্যারিবিয়ান।

বিশালাকৃতির এই জাহাজে প্রায় পাঁচ হাজার ৬১০ জন যাত্রী এবং দুই হাজার ৩৫০ জন ক্রুর থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এতে থাকা ‘ক্যাটাগরি সিক্স’ নামে ওয়াটার পার্কটি হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ওয়াটার পার্ক। যাত্রীদের দাপাদাপি করার জন্য এতে থাকবে রেকর্ডসংখ্যক ছয়টি ওয়াটার স্লাইড। তবে যারা একান্তে বিলাসী অবসর কাটাতে চান তাদের জন্যও প্রমোদতরিতে থাকছে সাতটি পুল এবং ৯টি ওয়ার্লপুল।

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ফিনল্যান্ডের মেয়ার তুর্কু শিপইয়ার্ডে জাহাজটি তৈরির করার কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি সেখান থেকেই এই বিশালাকার জাহাজটির ট্রায়াল রান হয়েছে। ট্রায়াল রানে কয়েকশ মাইল পথ ভ্রমণ করেছে আইকন অব দ্য সিজ। রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের তথ্যমতে, প্রমোদতরিটি প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয় গত ২২ জুন। আর এই পরীক্ষামূলক চালনাতেই ‍‍`আইকন অব দ্য সিজ‍‍` সমুদ্রের বুকে কয়েকশ মাইল পথ পরিভ্রমণ করে।

ক্যারিবীয়ান সাগরের পূর্ব এবং পশ্চিম পথ ধরে নিয়মিত এক সপ্তাহের একেকটি সফর করার কথা ক্রুজ শিপটির। বাহামায়, কোকোকে নামে রয়্যাল ক্যারিবীয়ান সংস্থার নিজস্ব একটি দ্বীপ আছে। সাত রাতের এক রাতে অতিথিদের সেই স্থানেও নিয়ে যাওয়া হবে। সাত রাতের ইস্টার্ন ক্যারিবিয়ান ট্রিপে মায়ামি, ফিলিপ্সবার্গ, শার্লট আমালি এবং কোকোকে; অথবা, ব্যাসেটেরে, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, শার্লট আমালি এবং কোকোকে ভ্রমণ করা যাবে। আর ৭ রাতের পশ্চিম ক্যারিবিয়ান ট্রিপে থাকবে মায়ামি, রোটান, কোস্টা মায়া, কোজুমেল এবং কোকোকে ভ্রমণ।

জাহাজটিতে ২৮টি বিভিন্ন ধরনের কেবিন থাকছে। ৮২ শতাংশ কক্ষে তিন বা তার বেশি অতিথি থাকতে পারবেন। ৭০ শতাংশ কক্ষের সঙ্গে থাকছে বারান্দা। জাহাজটিতে খাওয়া-দাওয়া, পানাহার ও বিনোদনের জন্য থাকছে ৪০ এরও বেশি রকমফের। এসব সুযোগ-সুবিধার অনেক কিছুই যাত্রীদের মূল ভাড়ার সঙ্গেই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যাত্রীদের জন্য এতে থাকবে ২০টি ডেক এবং আশপাশের আরও আটটি এলাকা। ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয়েছে দ্য আইকন অব দ্য সিজ-এর টিকিট বুকিং। তখনই মাথাপিছু টিকিটের দাম ছিল এক হাজার ৫৩৭ ইউএস ডলার। বিলাসবহুল এই জাহাজে বর্তমানে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার সবচেয়ে সস্তা টিকিটের দামই এক হাজার ৮৫১ ইউএস ডলার। সবচেয়ে দামি স্যুটের ভাড়া ১০ হাজার ৮৬৪ ডলার। দ্য আইকন অব দ্য সিজ-এর পূর্ব ক্যারিবিয়ান ভ্রমণের সাত দিনের প্যাকেজও রয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর