সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হতাশা কাটিয়ে শাহীন এখন সফল ফ্রিল্যান্সার

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩
মো. শাহীন

তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়া গ্রামের মো. শাহীন আজ স্বাবলম্বী। পাশাপাশি ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তিনি।

শাহিন জানান, ২০ বছর বয়সে তার বাবা বাহাউদ্দিন মারা যান। আর্থিক সংকটের কারণে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াটা কষ্টকর হয়ে ওঠে। তবুও অদম্য শাহীন হাল ছাড়েননি। পিতার সরকারি চাকুরি হতে অবসরের টাকা দিয়ে সংসারের ব্যয়বহনের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যান। বর্তমানে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে স্নাতকোত্তর করছেন তিনি।

ফ্রিল্যান্সিং পেশাটি নিয়ে মো. শাহীনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি তার ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসার কারণ, কিভাবে আসতে হয়, কাজ কিভাবে করা উচিৎ, এ পেশায় প্রতিবন্ধকতা ও তার জীবনের চড়াই-উৎরাইসহ আগ্রহী তরুণদের জন্য বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন।

শাহীন বলেন, ২০১৬ সালে মানিকগঞ্জ শহরে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর একটি লিফলেট দেখে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। লিফলেটে দেয়া ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করি। এরপর অনলাইনে একটা পরীক্ষা নেওয়া হয়। দুই দিন পরে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছি বলে আমাকে জানানো হয়। এর দুইদিন পরে মৌখিক পরীক্ষা দেই। সর্বমোট ৫ হাজার রেজিস্ট্রেশন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে হরিরামপুর উপজেলা থেকে আমি একাই ছিলাম।

আমাদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল ২ মাস। প্রতি সপ্তাহে ৬ দিন ৪ ঘন্টা ক্লাস করি। ক্লাস শেষে বাসায় এসে ক্লাসের কাজ জমা দিতে গভীর রাত হয়ে যেতো।

শাহীন জানান, এই পেশায় আগ্রহের প্রধান কারণ হচ্ছে নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তবে, রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতাও। তিনি বলেন, অনলাইনেও যে আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তা বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ জানে না বললেই চলে। বর্তমানে আমার প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় হয়। প্রথমে আমার গ্রামের লোকেরা মনে করতো যে আমি কোন অবৈধ উপায়ে উপার্জন করছি কিনা।

কর্মহীন বেকারদের উদ্দেশ্যে মো. শাহীন বলেন, বর্তমানে চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। অনলাইনে প্রচুর কাজ রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তাই চাকরির পেছনে না ঘুরে, সঠিক পথে পরিশ্রম করে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা একাগ্রতা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারলে বেকারত্ব ঘোচানো সম্ভব।

‘বেকারত্বকে না বলি, ঘরে বসে আয় করি’ স্লোগানে শাহীন বলড়া বাজারে ২০১৭ সালে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে ট্রেনিং সেন্টার খুলেন। তার কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশের কাজ করছেন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার শিক্ষার্থী আয় করেছে প্রায় ২০ লাখ ডলার।

মো. শাহীন

শহিনুরের প্রতিবেশী মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, অল্প বয়সে শাহীনের এই সাফল্যে আমরা গর্ববোধ করি। তাকে সবরকম ভালো কাজে পাশে পাই। সে এগিয়ে যাবে, তার মাধ্যমে অনেকের বেকারত্ব ঘুচবে এই প্রত্যাশা আমাদের।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, আমি জেনেছি শাহিনুর একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোন সাপোর্ট প্রয়োজন হলে আমরা তার পাশে থাকবো। এছাড়া, আমাদের বেকার যুবকরা যেন ফ্রিল্যান্সিং এ উদ্বুদ্ধ হয় এবং বেকারত্ব ঘুচাতে ভূমিকা রাখে এজন্য শাহিনুরের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে।


একুশে সংবাদ/এসআর

তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের আরো খবর