সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বিলুপ্তির পথে কাশবন

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:১০ পিএম, ৭ অক্টোবর, ২০২২
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার বুইচিতলার পদ্ম বিল থেকে তোলা ছবি

শরৎ শুভ্রতার ঋতু। ঋতু অনুসারে ভাদ্র-অশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরতে গ্রামবাংলার প্রকৃতি অপরূপ রূপে সেজে ওঠে। মাঠেঘাটে, নদীর তীরে দেখা যায় শ্বেতশুভ্র কাশবন। যে সৌন্দর্য অতুলনীয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে কাশফুল। নদীর ধার, খাল-বিল-জলাশয় ঘিরে ঘন কাশবন এখন আর বাতাসে দোল খায় না। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো একটার সঙ্গে আরেকটা।

 

এ সময় মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো। কবি জীবনান্দ দাস শরৎকে দেখে কবিতায় বলেছেন, ”বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে যাই না আর”। শরতের এই অপরূপ রুপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত নেন। শরৎ মানেই প্রকৃতি, শরৎ মানেই নদীর তীরে তীরে কাশফুলের সাদা হাসি।

 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার বিভিন্ন এলাকার মাঠগুলোতে এক সময় প্রচুর কাশবন দেখা যেত। শুধু সৌন্দর্যের উপকরণই নয়, গ্রামবাংলার কাশফুল গাছ শুকিয়ে ঘরের বেড়া ও ছাউনিও তৈরি করা হয়। অথচ এর সংরক্ষণে নেই কোনো উদ্যোগ। উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা, মদনা, কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নদীর ধারে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু কাশফুল রয়েছে। তবে কোন কাশবনের সন্ধান মেলে নি। বিলুপ্ত প্রায় কাশবন।

 

জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশের মাঠে-ঘাটে কাশফুল ফুটতে দেখা যায়। এমনকি প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এদেশে কাশফুল ছিল। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল ও পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশ বনের ঝাড় বেরে ওঠে। কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম (Saccharum spontaneum)। এটি উচ্চতায় সাধারনত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। নদীর তীরে ফুলফোটা শ্বেতশুভ্র কাশবন দেখতে খুবই সুন্দর। এর আদিবাস রোমানিয়া। যা ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। চিরল পাতার দুই ধারে খুবই ধার। পালকের মতো নরম এর সাদা ফুল। কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ।

 

নদীর দুই ধারে, আইলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। এখন গ্রামবাংলায় বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেখানে এখন তৈরি হয়েছে মৌসুমী ফসলের ক্ষেত।

 

দর্শনা সরকারি কলেজের প্রভাষক প্রফেসর মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, শরৎ শুভ্রতা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। আর এই শুভ্রতা মানুষের মনকে করে পবিত্র। তাইতো ঋতু বা প্রকৃতির কাছে শুধু চাইলেই হবে না, নগরায়নের প্রভাব থেকে সবাইকে কাশবন রক্ষায় দায়িত্ব নিতে হবে।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

ফিচার বিভাগের আরো খবর