সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হারানোর ৪৭ বছর পর মা বাবাকে ফিরে পেতে চায় টুনি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ২৯ জুলাই, ২০২১

প্রায় ৪৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া টুনির বিস্তারিত ঠিকানা মনে নেই। তার বাবার নাম আকেন, মায়ের নাম সালেহা, বড় ভাই বিলাত হোসেন, মেঝো ভাই মোহন ও ছোট ভাই তালেব হোসেন বাড়ি ফরিদপুর। কিন্তু ফরিদপুরের কোন থানা ও গ্রাম এসব তার মনে নেই। বর্তমানে স্বামী সন্তানসহ নরসিংদীর পলাশে বসবাস করছেন তিনি। হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট টুনি মা বাবা ও ভাই বোনকে ফিরে পেতে চায়।

টুনি ও ডাংগা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল জানান, দরিদ্র পরিবারের ৭ বছরের টুনি প্রায় ৪৭ বছর আগে প্রতিবেশী এক ধনী চাচীর সাথে চিকিৎসা করাতে ঢাকায় আসে। এরপর সেই নারী ডাক্তারের কাছে তার চিকিৎসার কথা বললে ডাক্তার জানান, এতো ছোট শিশুকে অপারেশন করানো যাবেনা। ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে হবে। 

তারপর টুনিকে ওষুধ কিনে দিয়ে ওই নারী তার বাসুর ও দেবরের সাথে ঢাকায় রেখে দুই তিন মাস পর ফিরে আসবে বলে রেখে যান। এদিকে দেবর ভালো মানুষ না থাকার কারণে একদিন বাসার বাহিরে আসলে আর বাসায় ফিরতে পারেন নি। বাড়ি ফিরার সকল পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায় টুনির। 

তারপর নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরনগরদী এলাকার বকুল নামে একজন ঢাকায় চাকরি করার সুবাদে তাকে কান্নারত অবস্থায় ওয়ারী এলাকায় দেখতে পায়। পরে ছোট্ট শিশুটি কোন বাসা থেকে আসলো সেটি জিজ্ঞেস করলে বলতে পারিনি। যে বাসা থেকে টুনি ফিরে আসলো সে বাসায় ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলো বকুল। কিন্তু যে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো সেটি মনে করতে পারিনি। টুনিও সেখানে গেলে মারধর করবে ভেবে যেতে চায়নি। পরে বকুল তাকে খাবার ও নতুন জামা কিনে দেন। 

পরের দিন সকালে ঢাকা থেকে টুনিকে নিয়ে আসে পলাশের চরনগরদীতে। এখানেই সে এক বছর থাকার পর ১৯৭৫ সালে চলে আসে ডাংগায়। এখানে আসার পর প্রয়াত সৈয়দ তোফায়েল উদ্দিনকে বাবা ও তার সহধর্মিণীকে মা বলে ডাকে। তারাও টুনিকে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করতে থাকে। বিয়ের বয়সে পদার্পণ করলে টুনি। তোফায়েল উদ্দিন বিয়ে দিলেন তার পালিত কন্যা টুনিকে। তার স্বামী ও মেয়েকে দিলেন বাসস্থান। জীবিকা নির্বাহের জন্য দিলেন রিকশা। এভাবে চলতে থাকে তাদের সংসার। বর্তমানে তিন সন্তানের জননীও হলেন টুনি।

এদিকে অচেনা পৃথিবীর গোলকধাঁধায় হারিয়ে গেলেন অচেনা শহরে। তারপর কেটে গেলো দীর্ঘদিন, দীর্ঘ মাস। মায়ের চিরচেনা মুখ,পরিবার, সব সময়ের পরিক্রমায় অচেনা হয়ে গেলো আজ। তবে এখনো মনে আছে মা-বাবা ভাই বোন ও ফরিদপুরের নামটি। তার ই সূত্র ধরে মা-বাবা, ভাই বোনকে ফিরে পেতে চায় টুনি। তাদের ফিরে পাওয়ার আকুতি নিয়ে হাজির হয়েছেন সংবাদমাধ্যমে।


একুশে সংবাদ/সাব্বির/ব

ফিচার বিভাগের আরো খবর