সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ভাবনায় অনুসন্ধান করতে হবে: উপাচার্য

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:৩৬ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ভাবনায় অনুসন্ধান করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে হলে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। তারাই আগামীর সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলবে। সেই প্রত্যাশার জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা যখন বিশ্বব্যবস্থাকে বিবেচনা করব, তখন আজকের যে নবাগত শিক্ষার্থী তার সামনে এক অনন্য সুন্দর পৃথিবী। এই সুন্দর পৃথিবীতে আপনি অনেক কিছু পেয়েছেন যার চ্যালেঞ্জ আপনাকে মোকাবেলা করতে হতো। আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের জন্য সেটি সাজিয়ে-গুজিয়ে রেখে গেছেন। এমন একটা চমৎকার সমাজ রেখে গেছেন যেখানে বাকি জীবন আপনি সুন্দর যাত্রায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন।’

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে উত্তর সিটি করপোরেশনের অডিটোরিয়ামে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত স্প্রিং সেমিস্টার ২০২৪ এর নবীন শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।  

শিক্ষার্থীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘মানুষ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন গ্রাম, পঞ্চায়েত ছেড়ে একত্র হয়েছে, যুৎবদ্ধ হয়েছে, নগররাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা জাতিরাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সংঘবদ্ধ হয়েছে। আমরা এখন চাই এই সংঘবদ্ধ মানুষেরা মিলে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি। আমরা এমন পৃথিবী চাই না যেখানে একরাতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শরণার্থী বানাবে। আমরা এমন পৃথিবী চাই যেখানে কোনো মানুষ নিরন্ন থাকবে না, অসহায় শিশু-নারীকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করবে না। আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি অনেক ঋণ আছে। আমাদের ভালো থাকার জন্য তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সেটি আমাদের মনে রাখতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গোটা ভাবমূর্তি তৈরি হবে শিক্ষার্থীদের দ্বারা। জ্ঞান অর্জনের বিষয়গুলো কেমন করে জানবেন সেগুলো যদি আপনাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা ধরিয়ে দেন, তাহলে আগামীর পথচলায় আপনার উৎকর্ষতা নিয়ে যেখানে পৌঁছাতে চান, সেই সুউচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারবেন। কিন্তু দৃষ্টি রাখতে হবে টেকসই সমাজ বিনির্মাণের। অন্যথায় আমরা এগিয়ে যাবো ঠিকই, আমাদের উন্নয়ন ঘটবে ঠিকই এবং আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাবে ঠিকই কিন্তু যে মানুষটি পৌঁছাবে না, তার জন্য সমাজ অসম, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে পারে। আমরা  সেটি চাই না।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বলেছে দুর্নীতি হয়েছে, অর্থায়ন করা যাবে না। আমরা তাদের সাথে বিরোধে যাইনি। শুধু বলেছি, আমাদের নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু করবো। পদ্মাসেতু শুধুই সেতু না, এটা আত্মমর্যাদা, এটাই বাংলাদেশ। আমরা শান্তিপ্রিয়ভাবে পাহাড়ের বন্ধুদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। কোনো ধরনের বিরোধ হয়নি। সমুদ্রসীমা জয় করেছি, সিটমহল সমস্যা সমাধান করেছি কোনো ধরনের বিরোধ ছাড়াই। উত্তর বাংলায় কিছুদিন আগেও মঙ্গা ছিল সেটি দূর হয়েছে। আমরা আত্মমর্যাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে মডেল হয়েছি। আমরা চাই, আমাদের সন্তানেরা আগামীর পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেবে।’

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘সভ্যতার যাত্রায় আমরা যা কিছু করেছি তার সবকিছু শুভ ও সুন্দর? এমনকি পরিবার ও ধর্ম যা কিছু করেছে তার সবকিছু কি সুন্দর? যদি তাই হবে তাহলে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের পিতা যখন অধিক আয়ে তার স্ত্রী আর সন্তানের ভরণপোষণ করে, আমরা কি আত্মজিজ্ঞাসা করি এ আয় সবটা সততার কিনা। আমাদের নৈতিক শিক্ষায় মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। এই তরুণ প্রজন্মকেই নেতৃত্ব দিতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে যেন সুন্দর পৃথিবীতে আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমরাই বাংলাদেশ।’ এছাড়া দেশের মুক্তিযুদ্ধ, পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সম্পর্ক, বাংলাদেশের অন্যদের প্রতি শান্তি প্রিয় সম্পর্কের বার্তা, দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রা, প্রকৃতির সাথে মানুষের আচরণ ও বৈশ্বিক জ্ঞানবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক আলোচনা করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস ছবুর খান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নবাগত শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. মোয়াজ্জম হোসেন। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের মধ্যে থাকছে- বই মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের স্মৃতিচারণ, শিক্ষানুরাগী, খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাহিত্য আড্ডা, আলোচনা সভা ও পিঠা উৎসব। এছাড়াও গুলশান ক্যাম্পাসে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে।


একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
 

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর