সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কুবির আড়াই হাজার ছাত্রীর জন্য মাত্র একটি আবাসিক হল

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হলে সিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই হাজারের বেশি ছাত্রীর বিপরীতে আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন মাত্র ৩০৩ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ ছাত্রীই আবাসন সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আবাসন সংকটের কারণে বেশিরভাগ ছাত্রীর বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাত হাজার। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য তিনটি আবাসিক হল থাকলেও আড়াই হাজারের বেশি ছাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলে ছাত্রীদের থাকার জন্য রয়েছে মাত্র ১৮০ টি আসন। ১৮০টি আসনের বিপরীতে অবস্থান করছেন ৩০৩ জন ছাত্রী। নিচের তলার ৬টি রুমে ৮ জন করে এবং উপরের প্রতি তলার রুম প্রতি ৬ জন করে গাদাগাদি করে থাকছেন ছাত্রীরা। হলে অবস্থানরত এক ছাত্রী জানান, অধিকাংশ রুমেই ডাবলিং অর্থাৎ বিছানা ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে। এমনকি দুইটা রুমে ১২ জন করেও থাকছেন। যারফলে প্রায়ই নানারকম অসুখের সম্মুখীন হতে হয় তাদের।

ফয়জুন্নেছা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাবরিনা আলম বলেন, “প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হয়েও সিঙ্গেল সিট পাওয়া মুশকিল।

অপরদিকে গণরুম গুলোর আরও বেহাল দশা। এমন অস্বাস্হ্যকর পরিবেশে বসবাস করার ফলে প্রায়ই নানারকম অসুখের সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে  করোনা পরবর্তী সময়েও যদি এমন অবস্হা বহাল থাকে শিক্ষার্থীরা মারাত্নক স্বাস্হ্যঝুঁকিতে পড়বে বলে আমি মনে করি। তাই অতিদ্রুত আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”

হলের আবাসন সংকটের কারণে অনেকেই শহরের বিভিন্ন মেসে থাকছেন৷ পরিবহন সংখ্যা কম হওয়ায় ক্যাম্পাস যাতায়াতেও নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। মেসগুলোতে থাকতে ছাত্রীদের অতিরিক্ত দুই থেকে তিন হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে। এমনকি মেসে থাকায় নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা অনেকের৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, “হলে পর্যাপ্ত সিট না থাকায় আমাদের ক্যাম্পাস থেকে দূরে শহরে থাকতে হয়। বাসের সংখ্যা কম থাকায় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাছাড়া অনেকসময় আমাদের ইভটিজিংয়েরও শিকার হতে হয়।”

অন্যদিকে ছাত্রীদের জন্য নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের কাজের যেন শেষ নেই৷ ১৮ মাসে কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও ৪৫ মাস পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর৷ কবে নাগাদ সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে প্রশাসন দ্রুতই কাজ হবে বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। 

২০১৭ সালের মার্চে এ হলটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলে প্রকল্পটির কাজ পায় আবদুর রাজ্জাক জেবিসিএ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি শেষ করতে তাদের ১৮ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ৪৫ মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে একটিমাত্র ছাত্রী হল হওয়ায় অধিকাংশ ছাত্রীই আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেনা। কিন্তু বিষয়টা আমাদের জানা থাকলেও কিছু করা সম্ভব হচ্ছেনা। নতুন আরেকটি ছাত্রী হল হচ্ছে, সেটার কাজ সম্পন্ন হলে আবাসিক সুবিধা বাড়বে।” 

নতুন ছাত্রী হলের কাজের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ঠিকাদারের বিল আটকে থাকায় কাজে কিছুটা ধীরগতি হয়েছিল। শীঘ্রই বিল পরিশোধ করা হবে, আশাকরি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।”

একুশে সংবাদ/ ইরফান / এস

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর