সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ভারতে যাচ্ছে মোরেলগঞ্জের সুপারি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৮:০৯ পিএম, ১১ নভেম্বর, ২০২২

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ! সুন্দরবনের পাশ দিয়ে পানগুছি নদীর তীরে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যে অনন্য মোরেলগঞ্জের উৎপাদিত সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের  সুপারি মানসম্পন্ন হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারতেও এর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। 

 

বিশেষ করে ভারতের হুগলি, গুজরাটের কয়েকটি এলাকায় আমাদের অঞ্চলের সুপারির বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই এখান থেকে শত শত মণ সুপারি ভারতে চালান দেওয়া হয়। প্রতি মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়।

 

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে,উপজেলায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা ২৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ২শতটি। একটি  গাছে গড়ে ৩ থেকে ৪ কাধি সুপারির ফলন ধরে। কোন কোন গাছে সর্বনিন্মে ৫ কেজি আবার কোন কোন গাছে ৮ থেকে ১০ কেজি সুপারি ফলন হয়। লবণাক্ত এ উপজেলার ভূমির অবস্থান উচু ও বিলান, নিচু ও বিলান জমির পরিমাণ বেশী।

 

উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে রামচন্দ্রপুর,চিংড়িখালী,বনগ্রাম ইউনিয়নে  সুপারি গাছের পরিমাণ বেশী। সুপারির ভরা মৌসুমে হাট-বাজারে কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হচ্ছে।তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই সুপারি চাষীদের কোন প্রশিক্ষণ আজ অবদি এই উপজেলায় দেখা যায় নি,এমনকি  সুপারি চাষীদের কোন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয় না।

 

উপজেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে বড় একটি অংশ কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা, আমড়া, লেবু,শসা নারকেল, পান, সুপারিসহ নানা ধরনের পণ্যের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। নদীমাতৃক এই উপজেলার উৎপাদিত পণ্য দিন দিন দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

 

বছরজুড়ে সুপারির ব্যবসা চলমান থাকলেও মূলত বছরের আশ্বিন ও কার্তিক মাস সুপারির ভরা মৌসুম। এ সময় উপজেলার সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের যেমন: গুলিশাখালী, খাওলিয়া, পঞ্চকরন, বলইবুনিয়া, দৈবজ্ঞহাটি, চিংড়িখালী, তেতুলবাড়িয়া, জিউধারা, পাঁচগাও, পোলেরহাট সহ অন্তত ১৫ টি হাটে সুপারি বেচাকেনা হয়।

 

শুক্রবার (১২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে উপজেলার পৌর শহরের প্রধান হাট ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৯ টার মধ্যেই অস্থায়ী হাটে ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সুপারি নিয়ে বিক্রেতারা মোরেলগঞ্জে  আসছেন। হাটে তিন ধরনের সুপারি আসে। এগুলো হলো কাঁচা-পাকা, শুকনো এবং খোসা ছাড়ানো। এর মধ্যে কাঁচা-পাকা সুপারি ‘কুড়ি’ হিসেবে বিক্রি করা হয়।

 

২১০টি সুপারিতে এক কুড়ি হয়, বর্তমান হাটে এর মূল্য ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এ ছাড়া শুকনা সুপারির প্রতিমণ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা এবং খোসা ছাড়ানো সুপারি প্রতি মণ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় আড়তদাররা এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এক শ্রেণির বেপারী এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে বস্তায় ভরে ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট,লক্ষীপুর সহ  দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেন।

 

খুলনা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের সীমান্তবর্তী অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে ভারতের গুজরাট সহ কয়েকটি এলাকায় চালান দেন। উপজেলার কয়েকশত মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং গ্রামের হাজার নারী-পুরুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসায় জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

 

কথা হয় মোরেলগঞ্জ বাজারে সুপারি বিক্রি করতে আসা নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের জহির উদ্দিনের সাথে, তিনি গ্রাম থেকে সুপারি সংগ্রহ করে হাটে এনে বিক্রি করেন। তিনি জানান এ বছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, আইলা, আম্ফানসহ বিগত কয়েক বছরের ঘূর্ণিঝড়ে এই এলাকার বহু সুপারিগাছ নষ্ট হওয়ায় বাজারে সুপারি কম, কিন্তু দাম বেশি।

 

তিনি অভিযোগ করেন ফলন বৃদ্ধিতে সরকারের  কৃষি অফিস থেকে তাদের কোন পরামর্শ বা সহায়তা করা হয় না, খুলনার বড় বড় পাইকার আমাদের কাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে ভারতে পাঠায়, মোবাইল ফোনে বাগেরহাটের একজন পাইকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন প্রতি সপ্তাহে হাটে অন্তত কয়েক লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। বর্তমানে আমাদের জেলার সুপারি ভারতে যাচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী এ প্রতিবেদককে  জানান, সুপারি এ অঞ্চলের একটি অর্থকারী গুরুত্বপূর্ণ ফসল। তাছাড়া এ এলাকার সুপারির মানও ভালো। এই অঞ্চলের সুপারি এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, সুপারি চাষিরা তাদের প্রশিক্ষণ ও অনন্য সুবিধাদির জন্য লিখিত অবেদন করলে সেটা উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সুপারি চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।

 

একুশে সংবাদ/পলাশ

অর্থ-বাণিজ্য বিভাগের আরো খবর