সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

রাজধানীতে প্রতিদিন ৩০০ মোবাইল ছিনতাই

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

রাজধানীর বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীদের মোবাইল, ল্যাপটপ, ব্যাগসহ দামী জিনিসপত্র ছোঁ-মেরে নিয়ে যাওয়া চক্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকজন। চক্রে মহাজন হিসেবে পরিচিত এই কয়েকজনই ছিনতাইকৃত পণ্য কিনে নিয়ে নির্ধারিত স্থানে বিক্রি করেন।

 

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর উত্তরখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন মহাজনসহ এই চক্রের ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

 

গ্রেফতাররা হলেন- মিজান, আমিরুল ইসলাম বাবু, শরিফ হোসন, হৃদয়, রাজ, সুমন, সোহেল বাবু, হৃদয়, মনিরুজ্জামান, নাজমুল, মনির, ইমরান, ফারুক, আশরাফুল ইসলাম সজিব, আরিফ ও হাসান।

‘মহাজনের’ নেতৃত্বে ছোঁ-মারা পার্টি, দামি মোবাইল খুলে যন্ত্রাংশ বিক্রি

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি নম্বর বিহীন মোটরসাইকেল, ৫০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল, ৪টি চাকু, দুই জোড়া স্বর্ণের দুল এবং নগদ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ করা হয়।

 

ডিবি জানায়, রাজধানীতে ছোঁ-মারা এই পার্টির প্রায় ১০০ সদস্যের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের দিনপ্রতি অন্তত ৩টি মোবাইল ছিনতাইয়ের টার্গেট থাকে। সে হিসেবে ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত ৩০০ মোবাইল ছিনতাই হয়।

 

বাস-ট্রেন বা প্রাইভেটকারে চলাচলরত যাত্রীরা মোবাইলে কথা বলার সময় জানালা দিয়ে ছোঁ-মেরে  নিয়ে যায় চক্রটি। এছাড়া গাড়ির জানালা দিয়ে যাত্রীদের বা পথচারীদের ব্যাগ, স্বর্ণের চেন, ল্যাপটপও নিয়ে যায় তারা।

 

ছিনতাইয়ের পর নামমাত্র দামে মোবাইলসহ বিভিন্ন পণ্য ‘মহাজনের’ কাছে বিক্রি করে তারা। এরপর ‘মহাজনরা’ নির্ধারিত দোকানে সেসব বিক্রি করেন।

 

এসব দোকানি তুলনামূলক কমদামী মোবাইল ক্ষেত্রে খুচরা বাজারে বিক্রি করলেও দামী মোবাইলের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করেন। অনেক ক্ষেত্রে দামী মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি, আবার কখনো দেশের বাইরেও পাচার করে দেন।

 

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

 

তিনি বলেন, ‘উত্তরখানে বিসমিল্লাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামে একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ছোঁ-মারা পার্টির দল নেতা ও চোরাইমাল ক্রয়-বিক্রয়কারীসহ চক্রের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটির নেতৃত্বে মহাখালী থেকে টঙ্গী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ১৫-১৬ টি স্পটে ছিনতাই কার্যক্রম চলতো।’

উদ্ধারকৃত মোবাইলসহ ডিবি সদস্যরা

চক্রের নেতা মিজান, জয়, বাবু ও শরীফের নেতৃত্বে ছিনতাইকারীরা বাস, প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীদের কাছ থেকে ছোঁ-মেরে মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও গলার চেনসহ মূল্যবান মালামাল কেড়ে নেয়। এরপর সেসব চোরাইমাল ক্রয়-বিক্রয়কারী সুমন, ফারুক ও আশরাফুল ইসলাম সজিবের মাধ্যমে বিসমিল্লাহ মোবাইল সার্ভিসিং নামেও ওই দোকানে বিক্রয় করতো।

 

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। সাধারণত মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতেই তারা ছিনতাই করে। কখনো কখনো দলনেতা তথা মহাজনরাই তাদেরকে মাদক সরবরাহ করে। যাতে তাদেরকে দিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যায়। চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলে তাদের জামিন করানো এবং পরিবারকে অর্থ সহায়তাও করে থাকে এই মহাজনরা।’

 

চক্রের প্রায় ১০০ সদস্য প্রতিদিন ছিনতাইয়ের জন্য বের হয়। তাদের প্রতিদিন অন্তত ৩টি মোবাইল ছিনতাইয়ের টার্গেট থাকে। তাহলে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মোবাইল ছিনতাই করে থাকে।

 

ডিবি প্রধান বলেন, ‘ছিনতাইকৃত এসব মোবাইলের মধ্যে দামী হলে সবকিছু আলাদা করে যন্ত্রাংশ বিক্রি করে, কখনো বাইরে পাঠিয়ে দেয়। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

 

এ সমস্যা সমাধানে আমাদের মূলে যেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করলে জামিনে বের হয়ে আবার এ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এজন্য তাদের শাস্তির পাশাপাশি রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমাদেরও অন্ধকার জায়গা এড়িয়ে চলা কিংবা গাড়িতে চলাচলের সময় জানালার পাশে ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া উচিৎ।’

 

একুশে সংবাদ/প্রে.রি/এসএপি

অপরাধ বিভাগের আরো খবর