সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

হোটেল বয় থেকে জাল নোটের কারিগর

রাজধানীতে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার জাল নোট উদ্ধার

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ৪ জানুয়ারি, ২০২২
ছবি: একুশে সংবাদ

রাজধানীর পল্লবী থানাধীন এলাকা হতে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার জাল নোটসহ মুদ্রা জালিয়াতি চক্রের অন্যতম হোতা মোঃ ছগির হোসেন (৪৭) ও তার ২ সহযোগী’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে  জাল নোট তৈরীর সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানায়, গত ২৮ নভেম্বর ২০২১ তারিখ র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর মডেল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২৮ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা মূল্য মানের জাল নোটসহ জাল নোট তৈরী ও বিক্রয়কারী চক্রের সক্রিয় ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রটির মূলহোতা ও অন্যান্য সহযোগীদের সম্পর্কে জানা যায়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। 

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকার মিরপুর পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ জাল নোট তৈরী চক্রের মূল হোতা (১) মোঃ ছগির হোসেন (৪৭), পিতা-মোঃ আব্দুস সালাম, বরগুনা, (২) মোছাঃ সেলিনা আক্তার পাখি (২০), পিতা-মোঃ মান্নান হাওলাদার, বরিশাল ও (৩) মোঃ রুহুল আমিন (৩৩), পিতা-মৃত আব্দুল খালেক, ঝালকাঠী এই ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারের সময় আসামীদের নিকট হতে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা  মূল্যমানের জাল নোট, ৫টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর, ৩টি প্রিন্টার, ১টি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ারসহ জাল নোট তৈরীর বিপুল পরিমান সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তাদের অপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে।


গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরী করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্ মূল্যে জাল নোট বিক্রি করে আসছে। এ চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ ছগির হোসেন এবং অন্যান্যরা তার সহযোগী। গ্রেফতারকৃতরা আরো জানায় যে, তারা বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। এই চক্রের সাথে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে।

মোঃ ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেয়। পরবর্তীকে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয় করত। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয়ের সময় আসামী ছগির এর সাথে জনৈক ইদ্রিস নামক একজনের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইদ্রিস এর মাধ্যমে তার জাল নোট তৈরীর হাতেখড়ি হয়। প্রথমে সে জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীতে সে জাল নোট তৈরীর বিষয় রপ্ত করে। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। ১ বছর জেল খেটে পুনরায় সে ২০১৮ সাল হতে জাল নোট তৈরি শুরু করে। তৈরীকৃত জাল নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগী গ্রেফতারকৃত রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রয় করে। 

এ চক্রের মূলহোতা ছগির নিজেই স্থানীয় বাজার হতে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করে তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের ২ টি টিস্যু পেপার একসাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙ্গিন প্রিন্টারে ডিজাইনকৃত টাকা তৈরি করত। সে স্থানীয় বাজার থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দোকান হতে এসব জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদি ক্রয় করত। 

সে নিজেই প্রিন্টিং ও কাটিং করত। প্রিন্টিং এর কাজে অন্যান্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল নোট তৈরির পর সে তার অন্যান্য সহযোগীদের’কে মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে জাল নোট নিয়ে যেতে বলত। প্রতি ১ লক্ষ জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। তার সহযোগিরা মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ ও বিক্রি করত। টার্গেট বা চাহিদা অনুযায়ী ছগির প্রতিমাসে তার সহযোগীদেরকে বোনাসও দিত। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, করোনাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে ছগির নিজেও এ জাল নোট স্থানীয় বাজারে ব্যবহার করত; কয়েকবার সে সাধারণ জনগণের হাতে ধরাও পরেছিল বলে সে জানায়। 

আসামীরা সাধারণত কোন মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠানে তারা জাল নোট বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহার করত। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পমিান জাল টাকা তারা তৈরীর পরিকল্পনা করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে গ্রেফতারকৃত ছগির জাল নোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয়ে ফেলত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যাতে তাকে ধরতে না পারে সে জন্য গ্রেফতারকৃত ছগির ঘন ঘন বাসা পরিবর্তন করত।

 সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমানে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে আছে। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করত। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সাথে তার পরিচয় হয় এবং সে নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোট ব্যবসা শুরু করে।
 

অপর আসামী রুহুল আমিন মূলতঃ এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী। রুহুল আমীনের মাধ্যমে ছগিরের অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়ের মামলায় ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে জেলে ছিল এবং বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান রয়েছে। 


এদিকে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রুজুর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন এবং এই ধরণের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও র‌্যাবের জোড়ালো অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

একুশে সংবাদ/বেলাল/এইচ আই

অপরাধ বিভাগের আরো খবর