সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ভ্যাকসিন দেওয়ায় প্রতারণা, গ্রেফতার ৪ 

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

একটি চক্র খুদে বার্তা ছড়িয়ে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন দ্রততম সময়ে প্রাপ্তির আশ্বাস প্রদানের নামে প্রতারণার অভিযোগে ৪ প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। করোনা মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে অনেক উন্নত দেশের চেয়ে আমরা সফল। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে করোনা মোকাবেলার অংশ হিসেবে দেশবাসী টিকাদান কর্মসূচী গৃহিত হয়। বিশ্বে গত ৪ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ হতে টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়। সেখানে গুটি কয়েক দেশের মধ্যে আমরা অন্যতম, যারা এক মাসের কম সময়ে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করি। 

গত ২৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ প্রথম টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয় এবং ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখ হতে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচীর শুরু হয়। করোনা মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, চিকিৎসক একযোগে ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

                                                                                                                              

সরকারের টিকাদান কর্মসূচীর মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যারা এ সংক্রান্ত যে কোন অপপ্রচার, গুজব ও প্রতারণা চালাবে তাদের রুখতে র‌্যাব সচেষ্ট থাকবে।

র‌্যাব জানায়, বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কিছু প্রতারক রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে অবস্থান করে বিদেশগামী টিকা প্রার্থীদের দ্রুত এসএমএস প্রদানের নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। উক্ত প্রতারণার খবর বিভিন্ন ইলেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উক্ত প্রতারণায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস দল গতকাল ১ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় মুগদা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-১) মোঃ নুরুল হক (৪৭), পিতাঃ মৃত রমজান আলী, গ্রাম-কৃষ্ণরামপুর, ডাকঘর- মাইজদি কোর্ট, থানা-সুধারাম (সদর), জেলা-নোয়াখালী, ২) মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩০), পিতাঃ মৃত ইদ্রিস মিয়া, গ্রাম-দক্ষিণ খানে বাড়ী,ডাকঘর-শর্শদী বাজার, থানা-সদর, জেলা-ফেনী, ৩) মোঃ ইমরান হোসেন (২৩), পিতাঃ আব্দুল গণি প্রধান, গ্রাম-ফতেপুর, ডাকঘর-এনায়েত নগর, থানা-মতলব উত্তর, জেলা-চাঁদপুর, ৪) মোঃ দুলাল মিয়া (৩৭), পিতাঃ মোঃ ইয়াকুব আলী, গ্রাম-উত্তর বত্রিশ হাজারী, ডাকঘর-চাপারহাট, থানা-কালীগঞ্জ, জেলা-লালমনিরহাট। সেসময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়, যা প্রতারণায় ব্যবহৃত হতো।

র‌্যাব জানায় গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে, টিকাদান কর্মসূচী শুরু হওয়ার পর থেকে গ্রেফতারকৃতরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের এসএমএস নিয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করে। খুদে বার্তা ছড়িয়ে প্রচারণা চালিয়ে তারা এই অর্থ আত্মসাৎ করত।

দ্রুততম সময়ে টিকাদানের এসএমএস পাঠিয়ে দেওয়ার নামে টিকা প্রতি আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। কেহ এসএমএস স্বাভাবিক নিয়মেই পেত আবার কেহবা প্রতারিতও হয়েছে। এদিকে গ্রেফতারকৃতরা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানায়, চক্রের মূল হোতা হচ্ছে ধৃত নুরুল হক, সাইফুল এবং ইমরান হাসপাতালের সামনে দাড়িয়ে থেকে ভিকটিমদের এসএমএম দ্রুত পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাতো। 

অতঃপর প্রার্থীদের নুরুল হকের নিকট নিয়ে যাওয়া হতো। নুরুল হক তখন ভিকটিমের সাথে টাকা নিয়ে দর কষাকষি করত। টাকার পরিমান নিয়ে ভিকটিমের সাথে বোঝাপড়া হয়ে গেলে, তাকে দুলালের নিকট নিয়ে যাওয়া হত। টাকার পরিমানের উপর নির্ভর করে দুলাল ভিকটিমকে আশ্বস্থ করত,
কতদিনের মধ্যে এসএমএস পাওয়া যাবে।

গ্রেফতারকৃতরা আরো জানায়, বিশেষত বিদেশগামী যাত্রীরাই ছিল এই চক্রের মূল টার্গেট। চক্রটি রাজধানীর মুগদা, শাহবাগ, রমনা, শেরেবাংলা নগর মিরপুর, মহাখালী ইত্যাদি এলাকায় সক্রিয় ছিল। এভাবে চক্র দুইশতাধিক ভিকটিমকে প্রতারিত করেছে। এছাড়াও চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ ও এসএমএস এর মাধ্যমে একটি খুদে বার্তা প্রচার করত। যাতে লিখা ছিল “যারা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করছে কিন্তু এসএমএস পাইতেছে না তাদের ১ দিন এ টিকা নিয়ে দেয়া যাবে। যারা নতুন তাদের ৪ দিন এর মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন করে টিকা নিয়ে দেয়া যাবে (মোবাইল নম্বর ও রেফারেন্স কপি লাগবে। যে কোন জেলা হতে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে।

গ্রেফতারকৃত নুরুল হক দীর্ঘদিন প্রবাসী ছিল। ২০১৮ সালে দেশে ফেরত এসে ভিসা জটিলতায় আর যেতে পারেনি। ইমরান হোসেন একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকুরীরত। 

গ্রেফতারকৃত সাইফুল ইসলাম রমনা এলাকায় চা বিক্রেতা (দোকানদার)। সে একটি সরকারী সংস্থায় আউটসোর্সিং হিসেবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিল। সেসময় ফর্ম পূরণের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকুরীচ্যুত হয়। 

দুলাল মিয়া একটি হাসপাতালের আউটসোর্সিং চালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অবস্থান ও পেশার কারণে বিদেশগামীদের সাথে সংযোগ তৈরী হয়। র‌্যাব জানায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

একুশে সংবাদ/বেলাল

অপরাধ বিভাগের আরো খবর