সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

দেশের প্রথম লাভ পয়েন্ট: লাভ লক করে চাবি ফেলে দেন হ্রদে

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ভালোবাসার জন্য কতশত গল্প রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। আপন রূপে নিজের ভালোবাসা প্রকাশে হাজারো কাণ্ড করেছে তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু রাঙামাটিবাসী এক যুগলকে স্মরণীয় করে রেখেছে নিজের বিবেক ও ভালোবাসার তাড়নায়।

এমনি এক দম্পতির মর্মান্তিক মৃত্যুকে ঘিরে যে আবেগ সৃষ্টি হয়েছে সেটা স্মরণ করে রাখতে শহরের অদূরে পলওয়ের পার্কে স্থাপন করা হয় দেশের প্রথম লাভ পয়েন্ট। যা এখন ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এখাকার শোকগাঁথা পড়ে কেউ হয় আপ্লুত কেউবা খুঁজে পান নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রেরণা। আর ভালোবাসার উপলব্ধি প্রকাশে এমন নির্মাণ বলে মত কর্তৃপক্ষের।

পলওয়ের পার্ক কৃর্তপক্ষ জানায়, দিনটি ছিল ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ মধ্য দুপুর। আমেরিকা প্রবাসী আলাউদ্দিন পাটোয়ারী ও তার নববধূ আইরিন সুলতানা লিমা হ্রদের শান্ত নীল জলের স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে বোট ভাসায়। বোটটি মধ্য হ্রদে আসতে হঠাৎ ক্ষণিকের এক দমকা হাওয়ায় সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায়। বাতাসের তীব্রতায় উল্টে যায় বোট। আর দুইদিন পর পলওয়ের পার্কের অদূরে হ্রদের শান্ত জলরাশিতে ভেসে উঠে দম্পতির মরদেহ।

তবে মৃতদেহ ভেসে উঠার পর সবার নজরে যে দৃশ্যটি দৃষ্টি কাড়ে সেটা হলো স্বামী-স্ত্রী একে-অপরের সঙ্গে আলিঙ্গনরত অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ মৃত্যুর মুহূর্তেও প্রিয়তমা স্ত্রীকে ছেড়ে যায়নি এক সময়ে সাঁতারে পুরস্কার পাওয়া স্বামী আলাউদ্দিন। দুইজনেই মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করেছেন আলিঙ্গনরত অবস্থায় থেকে। মৃত্যুও যাদেরকে আলাদা করতে পারেনি।

অবশেষে আলাউদ্দিন-লিমার এই মর্মান্তিক ঘটনা এবং বিপদের সময়ে সঙ্গীকে ফেলে না গিয়ে একে-অপরের আলিঙ্গন থাকার স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশে ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর রাঙামাটির পলওয়েল পার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে লাভ পয়েন্ট উদ্বোধন করা হয়। লাভ পয়েন্টে প্রেমিক যুগল কিংবা দম্পতিরা তাদের ভালোবাসার বন্ধন সারাজীবন অটুট রাখার নিদর্শন স্বরূপ লাভ লক করে চাবি ফেলে দেন হ্রদে।

ভুলেন না নিজেকে ফ্রেম বন্দী করতে। এক যুগলে মর্মান্তিক মৃত্যুকে স্মরণীয় করে রাখতে এমন স্থাপনা নির্মাণ করে রাঙামাটিবাসী ও প্রশাসন যে উদারতা অকৃত্তিম ভালোবাসার নজির স্থাপন করেছেন তাতে মুগ্ধ আগত পর্যটকরা। যার ফলে তার জানতে পেরেছে এই কাহিনী। লাভপয়েন্টে দম্পতির শোকগাঁথা পড়ে দর্শনার্থীরা হন রোমাঞ্চিত।

রাঙামাটি পলওয়েল পার্কে বেড়াতা আসা দম্পতি মো. সোহেল রানা ও নার্গিস সুলতানা জানান, এই লাভ পয়েন্টের বিষয়ে অনেক শুনেছি। অনেকবার আসতে চেয়েও সময় সুযোগের অভাবে আসতে পারিনি। এবার সময় বের করে এসেছি এবং তাদের জীবনের গল্পকাথা পড়ে অবাক হয়েছি। আলা উদ্দিন সাঁতার জানার পরও স্ত্রীকে বাঁচাকে গিয়ে নিজের জীবনকে উৎসগ করলেন। এটি আসলেই সত্যিকারের ভালোবাসা। ভালোবাসা এমনি হওয়া উচিত।

আরেক পর্যটক নাছির উদ্দিন জানান, আমি চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছি রাঙামাটিতে। আসার পর শুনলাম পলওয়েল পার্কে লাভ পয়েন্ট নামের একটি স্থান আছে। শুনার পর দেখার ইচ্ছার জাগলো। তাই আসলাম এবং কিছু ছবি তুলে রাখলাম। প্রিয় মানুষের জন্য মানুষ কত কিছুই না করে থাকে। মানুষ আজীবন তাদের এই ভালোবাস স্মরণ রাখবে।

রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, পলওয়েল পার্ক বর্তমানে পর্যটকদের কাছে বিনোদনের একমাত্র কেন্দ্র। তার অন্যতম লাভ পয়েন্ট। বিশেষ করে নববিবাহিতদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানটি। এবং বিশেষ বিশেষ দিবসে পর্যটকদের সমাগম আরও বৃদ্ধি পায়। সকলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই স্থাপনাকে আরও দৃষ্টিনন্দন করতে প্রশাসন কাজ করছে।


একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর