সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

তিস্তায় আবারো বেড়েছে ভাঙ্গন: আতংকে নদীপারের মানুষ

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০২:০৪ পিএম, ২৯ আগস্ট, ২০২৩

লালমনিরহাটের তিস্তা পানি বেড়ে সৃষ্ট তৃতীয় দফা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই আবারো শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। সদর উপজেলার বাগডোরা, খুনিয়াগাছ,  রাজপুর আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচাসহ তিস্তার তীরবর্তী এলাকার কমপক্ষে ৭ পয়েন্ট শুরু হওয়া এই ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বসতভিটা। হুমকিতে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা।

 

ভাঙ্গন কবলিতদের অভিযোগ ভাঙ্গনরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিবছরই নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের। বন্যার ভোগান্তি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারে নদী ভাঙ্গনের কবলে পরায় চরম হতশা ও আতংকে দিন কাটাচ্ছে তিস্তা পারের বাসিন্দারা।

 

মঙ্গলবার (২৯ আগষ্ট) দুপুরে জেলার হাতিবান্ধায় অবস্থিত ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১.৮৫ সেন্টিমিটার যা বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচে।এর আগে শনিবার (২৬ আগষ্ট) তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.২৫ যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। স্বল্প মেয়াদী এই বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার পর দূর্ভোগ না কাটতেই নদী ভাঙ্গনের কবলে পরছে এ অঞ্চলের মানুষ। 

 

তিস্তার পানি নেমে যাওয়ায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরার বাসিন্দা সাবের আলী জানান, তিস্তার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে আনার রুত কমে যায়। ফলে নদী ভাঙ্গনের শিকার হতে হয়। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এর ১০/১১ বার বাড়ি সড়িয়ে নিয়েছি। বর্তমানে যেখনে বাড়ি করেছি সেটিও এখন নদীর কিনারায় পরেছে। একই এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ রমিচা বেগম অশ্রুসিক্ত কন্ঠে জানান, তিস্তার ভাঙ্গনে আবাদিজমি,বসত বিলীন হয়েছে। নদী কেড়ে নিয়েছে স্বামীর কবর দেওয়া জায়গাটিও। প্রতিবছার নদীর খেলা থামাতে কেউ স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয় বলেও জানান তিনি। অশ্রুশিক্ত কন্ঠে জসিম মিয়া জানান, দিনমজুরি করে কিছু অর্থ জমিয়ে জমি ক্রয় করে সেখানে বাড়ি করেছি। যখন বাড়ির কাজ করি তখন নদী প্রায় অর্ধ কিলো দূরে ছিলো। কয়েকবছরের মধ্যে নদী বাড়ির কিনারায় চলে এসেছে। জসিম মিয়া জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসে দেখে যাচ্ছে। ভাঙ্গনতো চলছেই। বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে ঠেকাতেই আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। রাতের ঘুমটাও আসছে না।

 

খুনিয়াগাছের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান,- বন্যার পানি নামার পরপরই নদী আবার ভাঙ্গা শুরু করেছে। দুদিনে কয়েকটা বাড়ির জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আমার বাড়ীটা ঝুকিতে এখন। নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে না পারলে খুনিয়াগাছের বাগডোরা এলাকার আরো অনেক বাড়ীঘর, মসজিদসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদী ভাঙ্গনের কবলে পরতে পারে বলেও জানান তিনি। পার্শ্ববর্তী বাহাদুর পাড়ার বাসিন্দা মোফা মিয়া জানান, গতবছর নদী ভাঙ্গনে বাড়ি সড়িয়ে নিয়ছি। এবারেও নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। হয়ত আবার বাড়ি সড়িয়ে নিতে হবে।

 

একই রকম মন্তব্য করেন বাগডোরা, চন্ডিমারী, রাজপুরসহ ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজন। সকলের দাবি বন্যার সময় ত্রাণ বা অর্থ সহায়তা না দিয়ে নদীতে স্থায়ী বাধ নির্মাণ অথবা নদী খননের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের।

 

খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান মন্ডল বাদল বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যার পী নদী ভাঙ্গনে কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়েছে। হঠাৎ পানি বেড়ে আবার কমে যাওয়ায় তৃতীয় দফায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।

 

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের লালমনিরহাট জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু বলেন,তিস্তার গর্ভে পলি পরায় পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে অল্প পানিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আবার শুরু হচ্ছে তীব্র ভাঙ্গন। এতে প্রতিবছর ভূমিহীন ও গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনতে দ্রুতই স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তার।

 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, তৃতীয় দফায় তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকা বাগডোরা, চন্ডিমারী, মহিষখোচাসহ বেশকিছু পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা আপদকালীন কাজ হিসেবে এসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।

 

একুশে সংবাদ/স ক  

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর