সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ঝাড়

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:৩০ এএম, ৬ জুন, ২০২৩

আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশঝাড়। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং জীববৈচিত্র ধ্বংস হওয়া রোধে সহায়ক এই বাঁশঝাড় এখন প্রায় বিলুপ্ত পথে। বাঁশের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য কুঠির শিল্পও। এ শিল্পের সাথে জড়িতরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।

 

গ্রামীণ জনপদে একসময় বাঁশঝাড় ছিল না এমনটা কল্পনাও করা যেতো না। যেখানে গ্রাম সেখানে বাঁশঝাড় এমনটিই ছিল স্বাভাবিক। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ের ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। বিশ্বে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে । বাংলাদেশে জংলি ও আবাদি প্রকৃতির ২৬ প্রজাতির বাঁশ জন্মে। কিন্তু বনাঞ্চলের বাইরেও এখন যেভাবে গ্রামীণ বৃক্ষরাজি উজাড় হচ্ছে তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এ বাঁশঝাড়।

 

বাঁশ একটি ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। বাঁশের বিস্তৃতি অতি ব্যাপক। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কম বেশী এটা জন্মায় । এ দেশের বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিকট বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম । গৃহ নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ, হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশের রয়েছে বহুল ব্যবহার ।প্রকৃতপক্ষে বাঙালির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশ। জন্মের পর বাঁশের চাঁছি দিয়ে নাড়ি কাটা হয়। তারপর বাঁশের তৈরি দোলনায় দোল খায় বাঙালি শিশুরা। মৃত্যু’র পর বাঁশের খাটিয়ায় তুলে বাঙালি শেষযাত্রা করে। কবরের ওপরে বাঁশ বিছিয়ে তারপর মাটি দেওয়া হয়। বাঙালির দোলনাও বাঁশের, সমাধিও বাঁশের।

 

বাঁশসহ বৃক্ষ নিধনের ফলে দৈনন্দিন জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। অথচ জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং জীববৈচিত্র ধ্বংস হওয়া রোধে সহায়তা করতে পারে এই বাঁশ গাছই । বাঁশ গাছ অন্য যে কোন গাছের তুলনায় দ্রুত গতিতে ক্ষতিকর কার্বন গ্যাস শুষে নিতে সক্ষম এবং এর শিকড় মাটি ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করতে পারে। জেলার জনজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প। এক সময় এ গ্রামীণ জনপদে তৈরি হতো হাজারো বাঁশের পণ্য সামগ্রী । ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ কেটে গৃহিণীরা তৈরী করতেন হরেক রকম জিনিস। অনেকে এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বাঁশের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্য ‘কুটির শিল্প। প্রকৃতপক্ষে বাঁশ শিল্পের স্থান অনেকটাই প্লস্টিক সামগ্রী দখল করে নিয়েছে। 

 

ঝিনাইদহ থেকে আসা বাশেঁর ব্যাপারি আলী সেখ বলেন, মূল্যবৃদ্ধির ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ ঘর-বাড়ি তৈরি সহ বাশজ শিল্পের সাথে জড়িতরা পরেছে বিপাকে। ফলে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।কিছুদিন আগেও একটি বাঁশের দাম ছিল ১৫০ টাকা সেই বাঁশের দাম বেড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

বোয়ালমারী উপজেলার ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালিপদ চক্রবর্ত্তী জানান, এক সময় ফরিদপুর  জেলায় ৯৯ শতাংশ ঘর ছিল বাঁশের খুঁটির উপর নির্ভরশীল।  এছাড়াও ঘরের বেড়া, চালা, অবকাঠামো নির্মাণ রান্নাঘর ও কৃষি ক্ষেতসহ পরিবারের অনেক কাজেই বাঁশের ব্যবহার ছিল গুরুত্বপূর্ণ । 

 

তিনি আরও বলেন,  পাকা ঘরবাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট, ছাদ ঢালাইসহ অন্যান্য কাজে বাঁশের ব্যবহার ছিল অপরিহার্য্য।ইতি পূর্বে জেলায় অনেক বাঁশ ঝাড় ছিল। কিন্তু যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার ব্যাপকহারে গঠিত হওয়ায় বসত বাড়ীর জন্য বাঁশঝাড় কেটে ফেলা হচ্ছে।

 

একুশে সংবাদ.কম/সম

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর