সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

উপহারের ঘর পেয়ে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে ঘোড়াঘাটের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:০৩ পিএম, ৪ এপ্রিল, ২০২৩

চারদিকে সবুজ ফসলের মাঠ। মাঝখানে রঙিন টিনের কয়েকটি ঘরের উপরে রোদের ঝিলমিল খেলা। রঙিন টিনের এসব ঘরে নতুন করে বাঁচবার স্বপ্ন বুনছে তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় প্রথমবারের মত স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দ্যোগে হিজরা সম্প্রদায়ের ৫ জনকে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। সেখানে গড়ে উঠেছে হিজরা পল্লী।

 

উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের রানীগঞ্জ কশিগাড়ী গ্রামে দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বিরাহিমপুর    গ্রামের  ধারঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই পল্লী। সেখানে ঘর পেয়েছে আমজাদ হোসেন, শিলা, কাজলী, সজনী ও জোসনা।

 

তারা সবাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। ঘরের পাশাপাশি সরকারী বা বেসরকারি  ভাবে তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা গেলে স্বস্থি ফিরবে তাদের সকলের মাঝে, এমনটাই দাবি তাদের। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তৃতীয়লিঙ্গের ৫ জনকে দেয়া হয়েছে ঘর। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে তাদেরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার রঙিন ঘর হস্তান্তর করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাফে খন্দকার সাহানশা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম।

 

তৃতীয় লিঙ্গের হবার কারণে জন্মের পর থেকেই বাবা-মা, পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এসব মানুষ। মাথা গোঁজবার নির্দিষ্ট কোন ঠাঁই ছিল না তাদের। শান্তিতে এক পলক ঘুমাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়  মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকত তারা। তবে ভাড়া বাড়িতেও দীর্ঘদিন থাকবার সুযোগ হতো না। নানা অজুহাতে বাড়ি থেকে বের করে দিত ভাড়া বাড়ির মালিক। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে সমাজের অবহেলিত ছিন্নমূল এসব মানুষ হয়েছে জমির মালিক। পেয়েছে নিজস্ব বাড়ি। নতুন বাড়িতে তারা শুরু করেছে বাঁচার লড়াই, বুনছেন নিজের স্বপ্ন।

 

নিজ বাড়িতে তারা দেশি-বিদেশী নানা জাতের কবুতর, হাঁস মুরগী পালন করছে। বাড়ির উঠোনে চাষ করছে শাকসবজি ও ফলমূল। তারা সবাই হতে চায় আত্মনির্ভরশীল। একসময় সকাল হলেই তারা ছুঁটতেন হাট-বাজার, রাস্তাঘাট কিংবা যানবাহনে। লক্ষ্য মানুষের কাছে থেকে হাত পেতে কিছু টাকা উত্তোলন করা। তাদের কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গি সহ নানা বিষয় নিয়ে মানুষের অভিযোগের অন্ত ছিল না।  আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়ে সেই তারা এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায় নিজের স্বপ্নের বাড়িতে। সময় কাটে পশুপাখি ও হাসমুরগি পালন করে। পেটের খোরাক জোগাতে এখন তাদের ভরসা বিয়ে, আকিকা, অন্নপ্রাশন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাড়ি। এসব বাড়িতে নাচগান করে বিনোদন দেয় তারা। বিনিময় খুশি করে কেও কেও কিছু টাকা উপহার দেন। তা দিয়ে কষ্টে চলছে তাদের জীবন।

 

তৃতীয় লিঙ্গের আমজাদ ও কাজলী বলেন, ‘এক সময় বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াতাম। মানুষজন আমাদেরকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিত। আজ আমরা নিজস্ব জায়গায় ঘুমাতে পারছি। মাননীয়   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে  ধন্যবাদ জানাবার ভাষা আমাদের জানা নেই। তারা কান্না জড়িত  কন্ঠে বলেন, আল্লাহ যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে অনেক দিন বেঁচে এবং সুস্থ রাখুক। আমরা দোয়া করি।

 

শিলা নামে আরেকজন বলেন, ‘আমরা হিজরা  সম্প্রদায়ের লোকজন আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছি। পেটের দায়ে মানুষজনকে আমরা আগে বিরক্ত করতাম। মানুষও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করত। অনেক সময় তাদের মারপিটের শিকার হতাম। এখন আমরা একটি স্থায়ী কর্মসংস্থান চাই। আশা করি আমাদের মানবতার মা  জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টরা আমাদের বিষয়টি সুনজরে দেখবেন। ঘোড়াঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাফে খন্দকার সাহানশা এবং ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের দুঃখ কষ্ট জেনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপহারের রঙিন ঘর  ভূমিহীন ৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কে দেওয়া হয়েছে। ‘তৃতীয় লিঙ্গের ৫ জনকে নিয়ে এই উপজেলায় প্রথমবারের মত হিজরা পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। এতে সমাজে স্বস্থি ফিরেছে। পর্যায়ক্রমে এই উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের সবাইকে সুশৃঙ্খল পল্লীতে বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে।’

 

৩ নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান সাজ্জাত  হোসেন বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আগামীতে সরকারের সহযোগিতায় তাদের কর্মসংস্থান এবং জীবনমান উন্নয়নে সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।’

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর