সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

পেকুয়ায় ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ১৭ আগস্ট, ২০২২
ছবি সংগৃহীত

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ভুল চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলছে। এসব ভুয়া চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে মানুষের পাশেপাশি গবাদিপশুর মৃত্যু হচ্ছে। এসব ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিদিন ভুল চিকিৎসায় যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এসবের দায় নিবে কে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।

তথ্যঅনুসন্ধানে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পেকুয়া আলহাজ্ব কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের পশ্চিম পাশে একটি ফার্মেসীতে চেম্বার করেন প্রদীপ কুমার সুশীল নামের একজন ব্যক্তি। তিনি আসলে ডুলহাজারা খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হসপিটালের একজন চিকিৎসকের সহযোগি হিসেবে কাজ করতেন। তার নেই কোন সরকারী অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রী। তার পরও সে ডাক্তার সেজে রোগীদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।তার ভূল চিকিৎসার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন শেখেরকিল্লা ঘোনা এলাকার ওসমান বাদশার মেয়ে ও স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী আয়েশা ছিদ্দিকা। ভুল চিকিৎসায় অবশেষে সেই স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। 

মগনামা কাজী মার্কেট এলাকায় চেম্বার করেন লব্বায়িক নামক ওষুধের দোকানে সাইফুল ইসলাম নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। তার নেই কোন সরকারী বা অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি। সে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং সাথে বিভিন্ন রোগের পরিক্ষা নিরীক্ষা ও করে যাচ্ছেন যা আইনবহির্ভূত। তার নেই কোন ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং ল্যাবের অনুমোদন। সে নিজেই সবকিছু। চেম্বারের পিছনে সামান্য ল্যাবের সরঞ্জাম দিয়ে নানা রোগের পরীক্ষা করে এসবের রিপোর্ট দেন আজেবাজে। তার ভুল চিকিৎসার কারণেও এক মহিলা মৃত্যু হয়েছে সম্প্রতি। 

এদিকে ভুয়া চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আর্থিক দণ্ডের বিধান করার নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করেন। আবেদনে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি ও রেজিস্ট্রার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যসেবা একটি মৌলিক অধিকার। এ সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিসীম। 

কিন্তু কিছু ভুয়া চিকিৎসক প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এতে করে অনেক রোগীর মূল চিকিৎসা তো হচ্ছেই না, উপরন্তু শারীরিকভাবে স্থায়ী অক্ষমতাসহ মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছেন। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে নিবন্ধনকৃত একজন মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে তার নাম বা পদবির সঙ্গে নিবন্ধনকৃত মর্মে কোনো শব্দ, বর্ণ বা অভিব্যক্তি ব্যবহার করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট আইনে যে সাজার বিধান রয়েছে তা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিএমডিসির প্রচলিত আইন ২৮ (৩) ও ২৯ (২) ধারা সংশোধন করে ভুয়া চিকিৎসকের সাজা ৩ বছর ও জরিমানা ১ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আর্থিক দণ্ড বাড়ানোর আর্জি জানানোর পাশাপাশি এ মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন,ভুয়া চিকিৎসায় ক্ষতিগ্রস্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ওই ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শীঘ্রই ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালন করা হবে।

 

 

একুশে সংবাদ/এস.জু/এস.আই
 

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর