সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

আজ নালিতাবাড়ীরর সোহাগপুর গণহত্যা দিবস

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

সোমবার (২৫ জুলাই) সোহাগপুর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে সোহাগপুর গ্রামে পাকিস্থানী হায়েনার দল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮৭ জন নিরীহ পুরুষ মানুষকে নির্মম ভাবে গুলি করে নির্বিচারে হত্যা করে। 

সেদিনের সেই হত্যাকাণ্ডে সকল পুরুষ মানুষকে একদিনে হত্যা করা হয়। এজন্য গ্রামকাসী এই গ্রামের নামকরন করে ‘সোহাগপুর বিধবা পল্লী’। সেদিনের সেই স্বজন হারা মানুষজনের গগণ বিদারী কান্না চিৎকারে সোহাগপুর গ্রামের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। আর সেই সংবাদ শুনে বঙ্গবন্ধু ব্যাথিত হয়েছিলেন। তাদের দুঃখে মর্মাহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পরবর্তী সময়ে তাদের অনুদান, নগদ অর্থ সাহায্য পাঠিয়েছিলেন।

পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় ১৫০ জনের পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ২৫ জুলাই সকাল ৭টা সোহাগপুর গ্রামের প্রফুল্লের দিঘি থেকে সাধুর আশ্রম পর্যন্ত এলাকা ঘিরে ফেলে। অর্ধদিন ব্যাপী তান্ডব চালিয়ে খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের আশ্রয়দাতাদের। এসময় প্রাণের মায়া ত্যাগে এগিয়ে যায় আলী হোসেন ও জমির আলী, কিন্তু বেশী দুর এগুতে পারেনি। এক রাজাকার গুলি করে দু’জনকেই হত্যা করে। এরপর শুরু হয় নারকীয় হত্যাকা। মাঠে কর্মরত রমেন রিছিল, চটপাথাং ও সিরিল গাব্রিয়েল নামে তিন গারো আদিবাসী তাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তারপর একে একে হত্যা করে আনসার আলী, লতিফ মিয়া, ছফর উদ্দিন, শহর আলী, হযরত আলী, রিয়াজ আহমেদ, রহম আলী, সাহেব আলী, বাবর আলী, উমেদ আলী, আছমত আলী, মহেজ উদ্দিন, সিরাজ আলী, পিতা-পুত্র আবুল হোসেন সহ আরো অনেকে। সকাল বেলা মানুষ গুলি কিছুই অনুমান করতে পারেনি। তাই গ্রামের মানুষ লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে রোপা আমন ধানের ক্ষেত লাগানোর জন্য অনেকেই মাঠে যাচ্ছিল, কেউ কেউ কাজ করছিল বাড়িতেই। সিরাজ আলী বসেছিল ক্ষেতের আইলে হঠাৎ গুলির শব্দে চমকে উঠে। তাকিয়ে দেখে বিলের ভেতর থেকে এগিয়ে আসছে ঘাতক রূপি হানাদার বাহিনী। 

ভয়ে সবাই দৌড়ে পালিয়ে যেতে চাইলেও হাসান আলী বলেন, তোমরা যার যার কাজ কর দৌড়ালে বরং গুলি করবে। কথা শেষ হতে না হতেই মুহুর্তেই হানাদার বাহিনী কিশোর সিরাজ আলী ছাড়া সবাইকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। সে দিন লাশ হলো সবাই, রক্তে লাল হলো আমন ধানের ক্ষেত। আস্তে আস্তে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চির নিদ্রায় শায়িত হয় সোহাগপুর গ্রামের মাটিতে। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়, ৫টি গুলি লাগার পরও মুমূর্ষ অবস্থায় মাটিতে পরেছিল রহম আলীর ছেলে সিরাজুল ও নাম নাজানা অপর একজন। চিরতরে থেমে গেল তার আর্তনাদ। ভীত শমসের আলী ও ছেলে হযরত আলী মাঠ থেকে দৌড়ে এসে ভয়ে আশ্রয় নিয়েছিল ঘরে। হানাদার বাহিনী তাদেরকে ঘর থেকে আনতে গেলে স্ত্রী লাকজান বেগম হানাদার বাহিনীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে স্বামী সন্তানের প্রাণ ভিক্ষা চায়। লোকজান বেগম কে পাকবাহিনী পায়ের বুট দিয়ে লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে শমসের আলীকে ধরে আনে, ভয়ে কাপছিল সারাদেহ! স্ত্রীর সামনেই গুলি করে ঝাঝরা করে দিল শমসের আলীর দেহ। একই ভাবে হত্যা করা হল তার ছেলেকেও। এভাবে সোহাগপুর গ্রামের সকল পুরুষ মানুষকে হত্যা করা হয়। পরবর্তী থেকে এ গ্রামের নাম হয় ‘সোহাগপুর বিধবা পল্লী’। এখানে কলাপাতা, ছেড়া শাড়ী আর মশারী দিয়ে কাফন পড়িয়ে ৪/৫ টি করে লাশ এক একটি কবরে দাফন করা হয়েছিল। আবার কোন কোন কবরে ৭/৮টি করে লাশও এক সাথে কবর দেওয়া হয়েছিল। এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জীবন্ত স্বাক্ষী রয়েছেন অনেকেই। সময়ের পাখায় ভর করে বছর ঘুরে আসে, সামনে নিয়ে আসে পেছনে ফেলে আসা স্মৃতি।

এদিকে সোহাগপুর বিধবা পল্লীতে শহীদের স্মরণে নাম ফলক স্মৃতি সৌধ ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি বীরকন্যা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকালে দুআ ও শহীদদের সম্মানে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভিন। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রসাশক সাহেলা আক্তার।

 

 

 

একুশে সংবাদ/আ.মো/এস.আই
 

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর