সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

জামালপুরে ট্রেনে চাঞ্চল্যকর খুন ডাকাতি ৫ জন গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে চাঞ্চল্যকর খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৫ জন পেশাদার ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৪ র‌্যাব জানায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান ৯.৫০ ঘটিকার সময় ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন জামালপুর স্টেশনে পৌঁছালে ট্রেনের যাত্রীরা ট্রেনের ছাদ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে ট্রেনের ছাদ থেকে গুরুতর আহত তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। আহতদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার দুজনকে মৃত ঘােষণা করে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, ডাকাতির মাধ্যমে তাদের হত্যা করা হয়। উক্ত ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলার রেলওয়ে থানায় গত ২৪/০৯/২০২১ তারিখে ধারা- ৩৯৬ পেনাল কোডে একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয় যার মামলা নং-০৫/১৩ এই ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উক্ত চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনা সংঘটনের সাথে সাথেই র‌্যাব-১৪, ময়মনসিংহ গােয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পারিপার্শ্বিকতার বিচার ও নিহতের বিভিন্ন বিষয় পর্যালােচনা ও বিশ্লেষণ করে নিবিড় তদন্তপূর্বক র‌্যাব-১৪ ঘটনার রহস্য উন্মােচন করে।  এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১৪ গােপন সংবাদের ভিত্তিতে খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১। আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬)-কে ময়মনসিংহের শিকারীকান্দা এলাকা থেকে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে আজ ২৬ সেপ্টেম্বর  রাত আনুমানিক ১ ঘটিকার সময় গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে লুণ্ঠন হওয়া মােবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চেইন অপারেশনের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামী ২। মাকসুদুল হক রিশাদ (২৮), পিতা-মন্জু ৩। মােঃ হাসান (২২), ৪। রুবেল মিয়া (৩১), ৫। মােহাম্মদ (২৫), পিতা- সাব্বির খান তাদের গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে লুষ্ঠিত মােবাইল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে, তাদের দেখানাে জায়গা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব জানায়  এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৪ জন পেশাদার ডাকাত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে। রিশাদ, হাসান এবং

স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সাথে যােগ দেয় মােহাম্মদ ও তার একজন সহযােগী। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগি’র ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মােবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির একপর্যায়ে ভিকটিম মৃত মােঃ সাগর মিয়া. ও নাহিদ বাধা দিলে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে ভিকটিমদ্বয়ের মাথায় এলােপাথারীভাবে আঘাত করে। মৃত সাগর ও নাহিদ যখন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়ে তখন ডাকতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঢােকার পূর্বে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন হতে নেমে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও গােয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং এই চক্র নিয়মিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। এরা ঢাকার কমলাপুর, এয়ারপাের্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন হতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠত এবং তাদের কিছু সহযােগী গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশন হতে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত। ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। তারা ছােট ছােট উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করত। এই ছােট ছােট উপ-গ্রুপগুলাে কেউ টার্গেট শনাক্ত করত, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুষ্ঠিত মােবাইল ও অন্যান্য লুষ্ঠিত

মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত আর বাকীরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে তাদের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখত। উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রিশাদ, স্বাধীন, মােহাম্মদ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত ছিল, হাসান টার্গেট শনাক্তের কাজে যুক্ত ছিল, রুবেল লুষ্ঠিত মােবাইল ও অন্যান্য লুণ্ঠিত মালামাল স্বল্পমূল্যে এই চক্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং অন্যদের কাছে বেশী মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করত। পাশাপাশি সে এই চক্রের পৃষ্ঠপােষক বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, রিশাদ এই সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হােতা। তার নামে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার মামলা নং-০২/৩০ তাং-০৯/১১/২০১৯  ধারা-৩৯২ দন্ডবিধি ও ময়মনসিংহ সদর থানার মামলা নং-২২ তাং-৫/১০/২০১২ ধারা-১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ১(ক) মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সে ২ বছরের অধিক সময় কারাগারে ছিল। এদিকে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানায় র‌্যাব।

 

একুশে সংবাদ/বেলাল দেওয়ান/আশিক

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর