সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সন্তু লারমা সহযোগীতা করছে না এটা ভুল, হলুদ সাংবাদিকতা বন্ধ করুন

প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ২ ডিসেম্বর, ২০২০

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, জনসংহতি সমিতিকে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন বানানোর চেষ্টা, সাংবাদিক নামধারীরা মুখোসপড়ে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীর ক্যাম্পের ছবি দেখানো হয়েছে এটিএন নিউজ ও ৭১ টিভিতে। এসব মুখোশসপড়া সাংবাদিকরা আসলো কিভাবে সেখানে গেলো কিভাবে। কথা হলো দেশ বিদেশকে দেখানো হচ্ছে জনসংহতি সমিতি গনতান্ত্রিক দল বলে অথচ তারা অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ সংগঠন এবং তারা দেশের জন্য হুমকী। এসব হলো হুলুদ সাংবাদিকতা। পার্বত্য চট্টগ্রামে হলুদ সাংবাদিকতা অনেক দেখেছি। হলুদ সাংবাদিকতা ছেড়ে গঠনমুলক সাংবাদিকতায় আসুন। পার্বত্য চুক্তি শুধু আদিবাসি বা পাহাড়িদের জন্য নয়। 

বুধবার (০২ডিসেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত পার্বত্য চুক্তির ২৩তম বর্ষপূতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌখিন চাকমার সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, টিআইবি’র সদস্য অ্যাডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ভানু মারমা, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার পিসিপির সভাপতি জগদীশ চাকমাসহ অংগ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।


রাঙ্গামাটি আসনের সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেন, সরকারের সাথে পার্বত্য চুক্তি বাতিলও হয় নাই, আবার ঝুলেও আছে। বাইরে বলা হচ্ছে-চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আসলে চুক্তি’র সবগুলো ভিতরে ভিতরে বস্তা বন্দি। সরকারের প্রশাসন যন্ত্রে যেমন প্রগতিশীল রয়েছে তেমনি উগ্রবাদীরাও রয়েছে। তিনি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়ন হলে কি এমন ক্ষতি হবে। এখানকার অধিবাসীরা তাদের ভূমির অধিকার ফিরে পাবে। এটাই তাদের চাওয়া। পাহাড়ের জন্য সরকারের যে নীতি সেটাই আসল।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে না, জেলা পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে না। জেলা পরিষদগুলোতে দলীয়করণ করার মাধ্যমে গম চাল বরাদ্দের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সমস্যার সমাধান না করে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র। পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে ভূমি বিভাগ হস্তান্তর করা হয়নি। ডিসি-এসপিরা সমতলের ন্যায় তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। ডিসি নিজে স্থায়ী সনদপত্র প্রদান করছে। বিধিমালা হয় নাই অথচ ভুমি কমিশন করা হয়েছে। বন,পরিবেশ,স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ ভুমি অধিকার এখনো বাস্তায়ন হয়নি।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার সময় এখানে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো। কারণ উপজাতি অঞ্চল হিসেবে এটা ভারতের রাজ্য থাকার কথা। কংগ্রেসের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলকে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাকিস্তান সরকার ক্ষমতায় এসে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ বাঁধ দিয়ে পাহাড়িদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। ৫৪ হাজার একর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এক লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। 

তিনি বলেন, শরণার্থীদের ঘরে খাবার নাই, জায়গা নাই। কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। অথচ এখানে শরণার্থী বিষয়ক ট্রাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের কি কাজ। তারা শরণার্থীদের জন্য কি করছে। এটা উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানে-ওখানে নিরাপত্তা বেস্টনি নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষ স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে পারে না। পাশ্ববর্তী মিজোরামে প্রবেশ করতে হলে তাদের পাস লাগে। এখানে তা লাগে না। এটাতো উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হতে পারে না। বাইরের যেকোন মানুষ এখন ঠেগামুখ পর্যন্ত চলে যাচ্ছে।

সাবেক এ এমপি বলেন, পর্যটনের নামে এখানকার অধিবাসীদের বাস্তচ্যুত করা হচ্ছে বান্দরবানের মুরং জাতিদের উচ্ছেদের পাঁঁয়তারা চলছে। এ্যামোনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে পার্বত্য চট্ট্রগাম বিষষক মন্ত্রী বীর বাহাদূর ঊশৈসিং এমপিকে এ ব্যাপারটি দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। 

তিনি আক্ষেপের সাথে আরও বলেন, চুক্তি করা হলেও পাহাড়ে কোন অভিভাবক নেই। আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানকে প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদা দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে কোন কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, সন্তু লারমা নাকি চুক্তি বাস্তবায়নে কোন সহযোাগিতা করছে না। এটা হলো ভুল ধারণা। চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্যই তো আমাদের সংগ্রাম। সেইদিন সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে সব ছেড়ে দিয়ে চুক্তি করেছি। শান্তির পথে ফিরে এসেছি। কিন্তু পাহাড়ে এখনো চাঁদাবাজি চলছে। তারা কারা আপনারা খুঁজুন। 

তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, চুক্তি কি, কোন উদ্দেশ্যে প্রণয়নের জন্য নাকি তা থামিয়ে রাখার জন্য করা হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ সহজ-সরল, তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারাও স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। দূরুত্ব সৃষ্টি করবেন না, মহৎ উদেশ্যে নিয়ে এগিয়ে আসুন। দেখবেন শান্তি ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, রাজা ত্রিদিব রায়কে রাজাকার বলা হচ্ছে। যে কারণে তার মরদেহ এখানে আনতে দেওয়া হয়নি। রাজা ত্রিদিব রায়ের দাদাকে ভারতে আটকে রাখা হয়েছিলো সেই সময়ে। যে কারণে তিনি যুদ্ধে যেতে পারেন নি। মং সার্কেলের রাজা যুদ্ধে যাওয়ার কারণে তাকে আজ মুক্তিযোদ্ধা বলা হচ্ছে। এটিএন নিউজ এবং ৭১ টেলিভিশনে দেখলাম, সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে কিভাবে চাঁদাবাজি করছে তা দেখাচ্ছে। সত্যি কথা হলো মানুষ এসব বুঝে। হলুদ সাংবাদিকতা পরিহার করুন। সত্যটাই লিখুন। উগ্রবাদীরা সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝাচ্ছে। ভুল তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পথভ্রষ্ট করছে।

একুশে সংবাদ/এআরএম

সারাবাংলা বিভাগের আরো খবর