শিশুরা আল্লাহপ্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তাদেরকে জীবনের ঐশ্বর্য বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। তাদের সুশিক্ষা দিয়ে ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা গেলে, মৃত্যুর পরও এর সুফল পাওয়া যায়।
মানুষ স্বভাবতই অনুকরণপ্রিয়, আর শিশু হলে, সেটা তো বলার বাহিরে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপখাইয়ে বেড়ে ওঠে তারা।একটি শিশুকে তার পরিবার, প্রতিবেশি দারুণভাবে প্রভাবিত করে । যেসব শিশু ভালো পরিবেশে বড়ো হয়, তারা চরিত্রবান হয়, হয় বিদ্যান ও বুদ্ধিমান । গুনাহমুক্ত পরিবেশে শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যত্নবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে।
একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত।
এর জন্য শিশুকে এমন পরিবেশে রাখা উচিত, যেখান থেকে সে আদব-আখলাক সামাজিকতা, কথাবার্তা সবকিছু উত্তম ভাবে শিখতে পারে। যেমান- শিশুর সামনে দান করা, তাকে দিয়ে দান করানো, এতে ছোটবেলা থেকেই তারা দানের প্রতি উৎসাহিত হবে । তার সামনে তেলাওয়াত করা, ইসলামিক বই পড়া।
ছোট সন্তানের ক্ষেত্রে অধিক বিলাসিতার অভ্যাস না করা। ছেলে হোক বা মেয়ে তার সব বায়না পূরণ করতে হবে না । কারণ এতে অভ্যাস ও স্বভাব মন্দ হয়। রাগ, মিথ্যা কথা, হিংসা, চুরি, খামাখা নিজের কথার উপর জেদ, ও বেহুদা কথা বলা, বেশি হাসাহাসি করা, প্রতারণা এগুলো থেকে কৌশলে কঠোরভাবে বাধা দেওয়া, যাতে সে এরদ্বারা আঘাত না পায়, আবার তা থেকে বিরত থাকে। ছোটবেলা থেকে এগুলোর প্রতি অনিহা সৃষ্টি হলে, বড়ো হয়ে এরকম কাজ করবে না। আর এ কাজগুলো ছোট বেলা থেকেই করতে হবে খুব মনোযোগের সহিত।
ইমাম গাজালি রহ. বলেন " শিশু হচ্ছে মা-বাবার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আমানত। শিশুর পবিত্র আত্মা সব রকমের গ্লানি থেকে মুক্ত একটি সাদা খাতা। নির্মল ক্যানভাস ও উর্বরভূমি" ।
সন্তানের ভালো কাজের একটা অংশ যেমন মা-বাবা পেয়ে থাকেন, তেমনি সন্তানের পদস্খলনের দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হলে তারা বলবে, কিভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেল? তখন তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার ফলে।’ (ইবনে মাজাহ) মানবশিশু ছোট সময় যা শেখে সারা জীবন তা তার হৃদয়ে বদ্ধমূল থাকে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমল জারি থাকে।
এক. সদকায়ে জারিয়া (চলমান পুণ্য। দুই. ওই জ্ঞান, যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়। তিন. সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (নাসায়ি, হাদিস: ৩৬৫১) অর্থাৎ নেক সন্তান মা-বাবার শ্রেষ্ঠ অর্জনগুলোর একটি।
তবে সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে মা-বাবাকে প্রথম থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পিতা-মাতার পূর্ণতা যেমন সন্তানের আগমনে, তেমনি পিতা-মাতার সার্থকতা হচ্ছে সন্তানের যথাযথ পরিচর্যা করার মধ্যে।
রাসুল সা. বলেন "সন্তানের জন্য পিতার পক্ষ থেকে ভালো আদব- শিষ্টাচার শিক্ষাদান অপেক্ষা উত্তম কোনো উপহার নেই (তিরমিজি) জনৈক ব্যক্তি উনার সাথী কে জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনার সন্তান কে কতোদিন বয়স থেকে ইসলামি শিক্ষা দেওয়া শুরু করেন?
জবাবে উনি বললেন, ৪০ দিন পর থেকে। এটা শুনে উনি অবাক হয়ে বললেন ৪০ দিন তো অনেক দেড়ি, ওর জীনবের অনর্থক ৪০ দিন কেটে গেলো ইসলামি শিক্ষা ছাড়া । বরং বাচ্চা জন্মের পর থেকেই তাকে ইসলামি শিক্ষা দেওয়া শুরু করতে হবে, জন্মের পর প্রথম যে গোসল টা দেওয়া হবে, সেটা যাতে সুন্নাত তরিকায় হয়, যে পোষাক পড়ানো হবে সেটা যাতে সুন্নাত তারিকায় পড়ানোই হয় ।
একটা শিশুর প্রথম শিক্ষক হলেন তার মা । মা যদি আলোকিত মানুষ হন, মানবিক গুণে তার হৃদয় থাকে সজ্জিত, তাহলে তার কোলের শিশুটিও সুন্দর জীবনের অধিকারী হবে, হবে আলোকিত একজন মানুষ।
তাই উদাসীনতা নয়; মা-বাবার জন্য দোয়া করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে ছোট সময়েই। আপনার-আমার সবার পরিবারে দ্বীন-চর্চা হোক, শিশুকে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলার অনকূল পরিবেশ তৈরি করে দেই। আগামীর পৃথিবী হোক সুন্দর। নৈতিক বলে বলীয়ান হোক আমাদের আগামী প্রজন্ম।
লেখক:যাকওয়ানুল হক চৌধুরী
সিলেট
একুশে সংবাদ/প
আপনার মতামত লিখুন :