AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

তাহেরীকে নিয়ে মুখ খুললেন মামুনুল হক


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৭:৫০ পিএম, ১৯ মার্চ, ২০২১
তাহেরীকে নিয়ে মুখ খুললেন মামুনুল হক

বাংলাদেশের সমালোচিত বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহিরি সম্প্রতি একটি বয়ানে সুরে সুরে বলেছেন- "আল্লাহর ধন রাসুলকে দিয়া, আল্লাহ গেলেন গায়েব হইয়া,  রাসুলের ধন খাজায় পাইয়া,শুয়ে আছেন আজমিরী। কেউ ফিরেনা খালি হাতে, খাজা তোমার দরবারে"।

এই বিষয়ে আল্লামা মামুনুল হকের কাছে জানতে চাও হয়েছে যে, কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে এজাতীয় কথার বিধান কি এবং কোরআন হাদিস এসব কথা কীভাবে মূল্যায়ন করে?

উত্তরে মামুনুল হক একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন, এতে তিনি বলেন- "গানের নামে সমাজে এই জাতীয় কিছু কথা প্রচলিত রয়েছে, সহজেই কিছু মানুষ এগুলো আলোচনা করে থাকে। এবং অতি সম্প্রতি কেউ কেউ এটি আলোচনা করে আবারো মানুষের সম্মুখে নিয়ে এসেছেন। এখানে যে কথাগুলি রয়েছে মূলত সেটি গান।

আজমিরে আল্লাহর ওলি বুজুর্গ খাজা মইনুদ্দিন চিশতী রহ. এর কবর রয়েছে, তার অবদান ও কীর্তি আমাদের এই পাক-ভারত উপমহাদেশে একটি কিংবদন্তি, লক্ষ লক্ষ মানুষ যার উছিলায় পথ প্রদর্শনে ইমানের আলো পেয়েছিল, আমরা এই উপমহাদেশের মুসলমান তার কাছে চির ঋণী। 

ইসলাম এই সমাজে এই মাটিতে এই জাতিতে প্রচারের ক্ষেত্রে এক বিশাল অনবদ্য ভূমিকা তার রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। 

তবে এটিও আবার আমরা জানি যে, মইনুদ্দিন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ আমাদের উপমহাদেশে আল্লাহর দ্বীন প্রচার করতে আসা অনেক বুযুর্গানে দ্বীন শাহজালাল ইয়ামানি সহ খানজাহান আলী, শাহ আমানত শাহ এ জাতীয় আরো অনেক বুজুর্গদের কবরকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে  একশ্রেণীর ভক্ত ও অনুসারীরা এমন সব কার্যকলাপ শুরু করেছেন, যেগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে অনেকটাই স্পষ্ট শিরক্ , আর এর মধ্যে অধিকাংশই হলো বিদা'আত।  কাজেই সেই সকল শিরিক এবং বিদাত এর দায় অবশ্যই মরহুম সেই সকল বুজুর্গ আল্লাহর ওলিদের উপর বর্তাবে না, বরং তাদের সেই অযোগ্য সকল অনুসারীদেরকে এর দায় বহন করতে হবে, যারা বুযুর্গের কবরকে শিরক ও বিদআতের আখড়া সাজিয়েছে।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে-
এই গান সুনির্দিষ্ট যে কথাগুলো দিয়ে সাজানো হয়েছে, সেই কথাগুলোর ওপর ভিত্তি করে আসলে কোন ব্যক্তি সম্পর্কে অথবা এই কথাগুলো সম্পর্কে আমাদেরকে যদি শরীয়তের বিধান আলোচনা করতে হয়, তাহলে শুধু কথার বাহ্যিক শব্দের উপর আলোচনা করাটাই যথেষ্ট নয় বরং যে এই কথাগুলো যে লিখেছে এবং বলছেন, তার উদ্দেশ্য ও নিয়ত কি, সেই উদ্দেশ্যের সাথেও এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যেমন আলোচ্য গানটিতে তিনটি কলি হয়েছে, "আল্লাহর ধন রাসুলকে দিয়া, আল্লাহ গেলেন গায়েব হইয়া"

স্বাভাবিকভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তো আলিমুল গায়েব, আল্লাহ-রাসুলকে ধন দিয়ে গায়েব হয়ে যাওয়া, ধন দেওয়ার পরে গায়েব হয়ে যাওয়া এই জাতীয় কোন বিষয় তো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, আল্লাহ তো আলিমুল গায়েব, আল্লাহ গায়েব হয়ে যাওয়ার কি অর্থ!? এটি একটি গোলক ধাঁধার মত বিষয়। 

আর দ্বিতীয় যে বিষয়, "রাসুলের ধন খাজায় পাইয়া, শুয়ে আছেন আজমিরী"।

রাসুলের ধন খাজা মইনুদ্দিন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি পেয়েছেন, এর স্বাভাবিক অর্থ আমরা ধরতে পারি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী পেয়েছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানী ইলম এসেছে রাসুলের নিকট।  রাসুল থেকে সেটি পরম্পরায় সনদের মাধ্যমে উম্মতের আলেমসমাজ মুহাদ্দিসীনগণ সেটিকে তারা গ্রহণ করেছেন। এবং সেটি পর্যায়ক্রমে তাওয়ারুছ ও ধারাবাহিকতার মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে গ্রহণ করেছেন, নবীজির পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য রেখে যাওয়া সেই আমানতগুলো পরবর্তী যুগের উম্মতের আলেমরাও গ্রহণ করেছেন, রাসুলের ধন দ্বারা যদি এখানে বোঝানো হয়ে থাকে রাসুলের সেই ওহীর ইলিম, তাহলে পর্যাক্রমে খাজা মইনুদ্দিন চিশতীও পেয়েছেন, এটি আপত্তিকর কোনো কথা নয়। 
তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে ফুয়ুজ ও বারাকাত, উলূম মাআরিফ ও হাদিস অন্যান্য আলেমদের মত মইনুদ্দিন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি পেয়েছেন। এটাতে সন্দেহ বা আপত্তিকর কোনো কিছু আমি দেখছি না। 

কিন্তু এর পরের কলি সেটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, "কেউ ফিরে না খালি হাতে, খাজা তোমার দরবারে"। অর্থাৎ মইনুদ্দিন চিশতী রহ. কে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে যে, তার দরবার থেকে কেউ খালি হাতে ফিরে না, যেই তার কাছে যায়, তার থেকে কিছু পায়। মইনুদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আল্লাহর ওলী। আমরা আশা করছি যে, তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট অত্যন্ত সম্মানিত এবং মহান ব্যক্তি।

কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করার পরে কোন মানুষের কোন উপকার করা, কারো ক্ষতি করা কোনটি উনার এখতিয়ারের ভেতরে নেই।
সুতরাং "কেউ ফিরে না খালি হাতে, খাজা তোমার দরবারে" এটা মূলত আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের শান এবং আল্লাহ আল্লাহর যে মান, আল্লাহ যে ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু এই চেতনার সঙ্গে এই কথার বাহ্যিক অর্থের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।  আল্লাহ কোন বান্দার কাছে কোন বান্দাকে মুখাপেক্ষী করেননি, ইসলামে এরকম কোন নির্দেশনা নাই। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুস্পষ্ট হাদিস রয়েছে ইবনে আব্বাস থেকে সেখানে রাসূল বলেন- 
«يا غلام إني أعلمك كلمات: احفظ الله يحفظك احفظ الله تجده تجاهك إذا سألت فاسأل الله وإذا استعنت فاستعن بالله (صحيح سنن الترمذي-২৪৪০
ইমাম তিরমিজির বর্ণিত হাদিসটির শেষাংশে আল্লাহর রাসুর বলেন- যখন তুমি কিছু চাইবে, তখন আল্লাহর কাছে চাইবে, যখন সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন আল্লাহর সাহায্য নিবে। সুতরাং যেখানে আল্লাহর রাসুল সাঃ মানুষদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন, আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য নিতে, আল্লাহর কাছে তাওফিক চাইতে, কিছু চাইলে আল্লাহর কাছে চাইবে, সেখানে  একজন মৃত মুসলিম ব্যক্তির কবর থেকে 'কেউ ফিরে খালি হাতে' এ জাতিও কথা অবশ্যই আপত্তিকর,  এবং ক্ষেত্র বিশেষে এটি শিরকের কথায়ও পরিণত হতে পারে। 

তবে কেউ এটি বলার কারণে তাকে সরাসরি মুশরিক আখ্যা দেওয়া জটিল বিষয়, ইসলামি শরিযতের আলোকে, কোন ব্যক্তি যখন কোন কথা বললে, সেই কথার যদি অনেক রকম মর্মের সম্ভাবনা থাকে, আর সে মর্মগুলোর কোন একটি মর্ম যদি কাফের অথবা শিরক আখ্যায়িত না করার অবকাশ থাকে, তাহলে আগে থেকে মুমিন পরিচিত  ব্যক্তিকে, শুধু এমন একটি কথার কারণে মুশরিক বলার কোন সুযোগ নেই। কাউকে মুশরিক আখ্যা দিতে চাইলে 
সুস্পষ্ট আরো প্রমাণ দরকার, সুস্পষ্ট তার কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া প্রয়োজন। 
সুতরাং আলোচ্য যে গান, এতে শিরকি কিছু বক্তব্য রয়েছে, বা শিরকের দিকে মানুষকে দাবিত করতে পারে, অনেক মানুষ এর দ্বারা শিরকে নিমজ্জিত হয় বা হয়েছে, এ জন্য প্রত্যেক মুমিনকে এধরণের কতাবার্তা থেকে বিরত থাকা অবশ্যই কর্তব্য, এধরণের কথা কোনভাবেই মুখে উচ্চারণ করা সঠিক নয়। 

তবে এধরণের কথার কারণেই, একজন মানুষকে তার নিয়ত ও উদ্দেশ্য কী, সেটা পরিপূর্ণ অবহিত না হয়ে, শুধু তার কথার বাহ্যিক অর্থে মুশরিক আখ্যায়িত করা সেটিও ইসলামি শরিয়তের তাকফিরের উসূলে কাফির বলার ক্ষেত্রে যে কঠুর নীতিমালা রয়েছে, সেই নীতিমালার আলোকে এটি কোনভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। 

প্রিয দর্শক,
আমাদের এ বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে আমরা সুস্পষ্ট করতে চাই যে, কোন আলেম বা কোন ব্যক্তি একথাগুলো বলেছেন, শুধু এ কথা বলার কারণেই ব্যক্তিকে সুস্পষ্ট মুশরিক আখ্যায়িত করে না। এটি ইসলামের নীতিমালার সাথে সঙ্গাতপূর্ণ।  

এ বিষয়ে আমাদেরও তাড়াহুড়া না করে আরো সতর্ক হওয়া চাই। আর যারাই এ কথাগুলো বলেন সমাজে লোকসমাগমে, তাদের এসব কথা থেকে বিরত থাকা উচিত। এই কথাগুলো বাহ্যিক অর্থের দিকে শিরকের ধাবিত হওয়ার ব্যপকভাবে আশঙ্কা রয়েছে। এবং অনেক অর্থ অনুযায়ী তা শিরকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

যেখানে আল্লাহ সকল ক্ষমতার মালিক, একমাত্র আল্লাহই সকল মানুষে সকল হাজাত পূরণ করতে পারেন, তিনিই বান্দার সকল কিছু দিতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া সকলই আল্লারই মুখাপেক্ষী।  যারা নিজেরা আল্লাহ মুখাপেক্ষী, তারা কীভাবে অন্যের সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

সকলের হাত ভরে দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো থাকতর পারে না। কাজেই "কেউ ফিরে না খালি হাতে, বাবা তোমার দরবারে", এই কথাটি অত্যান্ত গর্হিত আপত্তিকর। যদিও এর কোন ব্যখ্যা থাকতে পারে, যে ব্যখ্যার আলোকে সুস্পষ্ট শিরক হবে না। কিন্তু বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী এতে শিরকের সুস্পষ্ট পয়গাম পাওয়া যায়, শিরকের দিকে আহবান পাওয়া যায়। 
কাজেই এধরণের বক্তব্য প্রত্যেক মুমিনকে পরিহার করা কর্তব্য। 


একুশে সংবাদ/যা/আ

Link copied!