জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এমন কাদের বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, সংবাদমাধ্যম নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে। কেন আমরা নির্বাচন করছি বা করছি না। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ প্রশ্নে দলের অবস্থান এবার স্পষ্ট করলেন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।
জানিয়েছেন, তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছেন। যদি ভিন্ন চিন্তা করেন, তাহলে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। নির্বাচন সঠিকভাব হতে হবে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (৪ নভেম্বর) দলের চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে নিজের লেখা বাংলাদেশে গণতন্ত্র সোনার পাথরবাটি দ্বিতীয় খণ্ড’ ও মিসেরিজ অব মিসকনসিভড ডেমোক্রেসি ভলিউম-টু’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
গত কদিন ধরেই নির্বাচনে নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে। গত ২ নভেম্বর ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় যে জাতীয় পার্টি ভোটে আসছে।
সেই বৈঠকে আলোচনায় জি এম কাদেরই এমন কথা বলেছেন বলে দলীয় চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাসরুর মওলার বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ হয়। দুদিন পর দলের চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সংবাদটিকে অসত্য’ দাবি করে তা সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
এর পরদিন দেলোয়ার জালালী বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানান, তার নেতা বলেছেন, আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গেই আছি। কী হবে তা এখনো কেউ জানে না, যদি নির্বাচন হয় তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘোষণা না দিয়ে চলে যাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছি, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জি এম কাদের এও বলেন, নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। যদি আমরা মনে করি, সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করব।
যদি বর্জন হয়, তাহলে সেই ঘোষণা দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই আলোচনা করেই নেবেন বলেও জানিয়ে দেন জি এম কাদের। বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেওয়া হবে, এই কারণে আমরা নির্বাচন করছি বা করছি না।
সরকারকে তত্ত্বাবধায়কের’ মতো হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলটির নেতা। তিনি বলেন, কাজ ভালো না করলে ‘কেয়ারটেকারকে’ পরিবর্তন করতে পারবে দেশের জনগণ। মানুষের ভোটাধিকার থাকবে এবং শাসকের সমালোচনা করার অধিকার থাকবে। সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবেই এখন সরকারপ্রধান যা বলবেন তাই সংসদে পাস হবে। এতে জবাবদিহিতা থাকে না।
এখনো সংবিধানে আছে দেশের জনগণ ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবে, যদিও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ভূলুণ্ঠিত করেছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র নেই’ এমন অভিযোগ তুলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের উদাহরণ দেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, বিবিসির দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, চার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বছরে আয় করছে একশ কোটি টাকা। ১৫ বছর হচ্ছে এটার লাইফ। এটা কি বাস্তবসম্মত হলো? তাহলে আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য চুক্তি কেন? প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে ‘দুর্নীতির সম্ভাব্যতা’ যাচাই করা হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেখানে বেশি দুর্নীতি করা যায়, সেই প্রকল্প দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও ‘কথা আছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারে। অথচ একই কোম্পানির ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনে ইতোমধ্যেই খরচ হয়েছে নাকি ১৬ বিলিয়ন ডলার।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। আমাদের দেশে ভারতের চেয়ে তিনগুণ বেশি খরচে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার বরিশালেও নাকি আরো একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। এমন দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার অবশ্যই আমাদের আছে।”
একুশে সংবাদ/প.আই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :