সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের শেষ কিংবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে এরইমধ্যে সারাদেশে নিজ নিজ সংসদীয় এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রায় ১৮শত প্রার্থী। এ তালিকায় রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যরাও (এমপি)।
এরইমধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ সংসদীয় আসন চষে বেড়াচ্ছেন এবং নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে দিন-রাত অবিরাম ছুটে চলেছেন ভোটার ও দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মন জয় করতে। ইচ্ছেমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন দুস্থ-অসহায় গরীব- দুঃখিদের জন্য। এককথায় বলতে গেলে দ্বাদশ নির্বাচনে দুস্থ-অসহায়দের পাশে নৌকার টিকিট প্রত্যাশীরা। তবে শত ফুলের মধ্য থেকে সবচেয়ে ভালো ফুলটি বেছে নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন আর কে পাচ্ছেন না বিষয়টি এখনো কারোর জানা নেই। কিন্তু প্রত্যেক প্রার্থীই মনোনয়ন পাচ্ছেন এমনটি বলে নিজ নিজ সংসদীয় আসনে ভোট চাচ্ছেন এবং প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন মনোয়নপ্রত্যাশী সবাই। প্রচারে নেমে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিজেদের ছবি দেখিয়ে দাবি করছেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিষয়টি এমন যে, একটি ছবিই হয়ে যাচ্ছে মনোনয়নের কথিত সিগন্যাল। এককথা বলতে গেলে আগামী নির্বাচনে সবাই নৌকার মনোনয়নে এমপি হতে চাই। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ গত বুধবার (২১ জুন) কার্যনির্বাহী বৈঠকের সভায় বলেছেন, ফুল ফুটতে দেন। শত ফুলের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ ও ভালো ফুলটি বেছে নেওয়া হবে। তবে বির্তকিতদের আর নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুসিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তবে কিছু কিছু মন্ত্রীর ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা, অযোগ্যতার কারণে আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলের অধিকাংশ নেতারা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শত ফুল থেকে ক্লীন ইমেজের একজনকে প্রতিটি সংসদীয় আসনে বেছে নেওয়া হবে বলে সম্প্রতি গণবভনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে যাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক-কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে, তাদের মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এখন লক্ষ্য হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যত কাছাকাছি থেকে একটা ছবি তোলা যায়। গণভবনে বা গণভবনের বাইরে, যেখানেই হোক। দলীয় সভাপতিকে পা ছুঁয়ে সালাম করছেন, এরকম একটি ছবি তোলা সম্ভব হলে তো পোয়াবারো। সেই ছবি দিয়ে ব্যানার-পোস্টার করা, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা পূরণ হয়। নিজের এলাকার জনগণের কাছে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকার প্রমাণ দেখাতে সেই ছবিই তো যথেষ্ট।
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ফটোগ্রাফারদের কদরও বেড়ে গেছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে। দলের হাইকমান্ডের নজর কাড়তে এখন থেকেই মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন গতবারের মনোনয়নবঞ্চিতরা। বিভিন্ন দিবস ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। সামর্থ্য অনুযায়ী দুস্থ ও অসহায়দের সহযোগিতা করছেন। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট চার মনোনয়নবঞ্চিত নেতাও এখন নিজ এলাকায় বেশ সক্রিয়। প্রতিনিয়ত তারা মাঠেই অবস্থান করছেন।
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনে নৌকার মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর। এলাকাবাসিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার তাকে নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন কুমিল্লা-১ আসনে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুরের বিকল্প নাই। এরইমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে অসহায় গরিবদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সকাল-বিকাল এলাকাবাসীর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা। ইতিমধ্যে নৌকায় ভোট চেয়ে তিনি পথসভা করেছেন দাউদকান্দি-মেঘনা সদরের অলিগলিতে বসবাসরত বাসিন্দাদের কাছে।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান আলোচিত (সাবেক) পুলিশ অফিসার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ দেশের আলোচিত মামলাগুলোর তদন্ত করেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় একাধিক পুরস্কারও। বিপিএম, পিপিএম (বার) উল্লেখযোগ্য। আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সাবেক এই পুলিশ অফিসারকে এবার কিশোরগঞ্জ-২ আসনে নৌকার কাণ্ডারি হিসেবে মনোনীত করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে আব্দুল কাহার আকন্দ আওয়ামী লীগ সরকারের নানা দৃশ্যমান উন্নয়ন তুলে ধরছেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে সাধ্যমতো গরিবদের পাশাপাশি দলের অসচ্ছল নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ-২ আসনের স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধাদের এককাতারে নিয়ে এসেছেন তিনি। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে নৌকায় আগামী ভোট চেয়ে ভোটারদের ধারে ধারে যাচ্ছেন আব্দুল কাহার আকন্দ।
দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে দিনরাত সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে নৌকার প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন ঢাকা-৫ (যাত্রাবাড়ি-ডেমরা ও আংশিক কদমতলী) আসনের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব মশিউর রহমান মোল্লা সজল। তিনি ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত চার বারের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার জেষ্ঠ্যপুত্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেতে প্রায় একদশক যাবত সোনারগাঁও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার। শুধু তাই নয়, নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী এই নেতা প্রতিনিয়ত কর্মি-সমর্থকদের নিয়ে পৃথক পৃথক জনসংযোগ, উঠোন বৈঠক, মোটরসাইকেল শোডাউন, বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা, দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা, মিছিল, সমাবেশে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের প্রচারপত্র বিলিসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় এলাকার উন্নয়নের জন্যই তিনি আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হতে চান।
সূত্রাপুর-কোতোয়ালি নিয়ে গঠিত ঢাকা-৬ আসনে বর্তমানে সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। এই আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়ন চান ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী। ঢাকা-৬ নির্বাচনী এলাকায় ৫২ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন কর্মী হিসেবে এলাকাবাসির কল্যানে নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর ছিলেন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করেছেন রণাঙ্গনে। রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মকর্মেও সমান মনোযোগী তিনি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলছেন, মনোনয়ন পেলে তিনি উদ্ধার করবেন তার এলাকার সংসদীয় আসনটি, যেটি এখন জাতীয় পার্টির দখলে।
আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেন। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে। দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থিতার জন্য দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, মনোনয়ন পাবেন কি পাবেন না সেটি তার চিন্তার বিষয় নয়, এটি নিয়ে চিন্তা করবেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি দলের জন্য কাজ করছেন, কাজ করে যাবেন।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি জোর আর পেশিশক্তি দিয়ে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি করতে হয় ভালোবাসা দিয়ে। ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করা যায়। মানুষের ভালোবাসায় আমি জনপ্রতিনিধি হয়েছি। তবে আল্লাহর রহমতের প্রতিও তার অনুরাগের কথা বলেন এই রাজনীতিক। নেতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না কাউন্সিলর মন্নাফী, আমি বিরোধের রাজনীতি করি না। আমার কারো সঙ্গে বিরোধ নেই। আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের কল্যাণে আমি কাজ করি।
তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন ও ধারণ করি। আমি এটা বিশ্বাস করি-কোনো পরিশ্রমই বিফলে যায় না। ৫২ বছরে ধরে এই জনপদে আমার বিচরণ। এখানকার প্রতি ইঞ্চি জায়গা এবং মানুষের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই জনপদ আমাকে বিমুখ করবে না।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি মতবিনিময় ও ওঠান বৈঠক করে বেশ ব্যাপক সাড়া জানিয়েছেন তিনি। সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরে এলাকায় প্রচার-প্রচারনাও চালাচ্ছেন ব্যাপকভাবে। তার প্রত্যাশা জননেত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য মনে করলে তাকে এবার নৌকার মনোনয়ন দিয়ে এলাকাবাসির কল্যানে কাজ করার সুযোগ করে দিবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, বর্তমান এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। বড় দলে এ ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে, থাকবে। তাতে সংগঠন চাঙ্গা হয়। কিন্তু এ প্রতিযোগিতায় যখন দলের বিরুদ্ধে দলের নেতারাই কথা বলবেন, সেটা বিশৃঙ্খলা। আওয়ামী লীগ প্রতিযোগিতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে, বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেয় না।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে দক্ষতা, যোগ্যতা, রাজনৈতিক ত্যাগ ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। দলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরাও মানুষের দুঃখ ও কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আগামী দ্বাদশ নির্বাচন করার জন্য আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, প্রতিনিয়ত ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। একইসুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ দলগতভাবে সর্বাত্মক প্রস্তুত। জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার এলাকার জনগণ আমাকে ভালোবাসে।
একুশে সংবাদ/শ.ই.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :