বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর কোন ১০ দফা নয়, এখন দফা একটাই, সেটা হলো হাসিনার পদত্যাগ। তিনি বলেন, ফয়সালা হবে রাজপথে। সেই বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে, যেই বাংলাদেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে পেয়েছি, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
শনিবার (২০ মে) বিকেলে লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শর্তহীন মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আয়োজিত লালমনিরহাটের কালেক্টরেট মাঠে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নূরলদিনের মতো কারাগার থেকে জেগে ওঠার ডাক দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। অসহায় জাতিকে তিনি বারবার জাগিয়ে তুলেছেন, কোন দিন আপোষ করেননি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের আমলে জনগনের কোন উন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে সব আওয়ামীলীগের। ব্যাংক, টিসিবি, টিআর, কাবিখা রাস্তা –ঘাট সবই তাদের দখলে। এখন আমাদের দাবি হচ্ছে অবৈধ ফ্যসিবাদ সরকারের পদত্যাগ। এরপর নিরপেক্ষ তত্বাবাধায়ক সরকারের অধীনে নিবার্চন।
কৃষক আন্দোলনের নেতা নুরল দীনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের এই এলাকায় তার বাড়ি ছিলো। যিনি কৃষক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন- কোনটে বাহে জাগো সবায়। আজকে আবার সেই ডাক এসেছে। আজকে আবার কারাগারের অভ্যান্তর থেকে গৃহবন্দী থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বলেছেন- রাজনীতির এই খেলার ফয়সালা হবে রাজপথে। টেক ব্যাক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম। সেই বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছিলেন এবারেও সেরকম লড়াউ হবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে গড়তে,গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি ত্রিদেশীয় বিদেশ সফরের কঠোর সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, ‘মানে মানে কেটে পড়েন। সময় শেষ হয়ে গেছে। আমাদের ৬শরও বেশি নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীসহ শত শত নেতাকর্মীকে ঘুম করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীর শিশু সন্তানের মতো অসংখ্য শিশু তাঁর বাবার জন্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আজও অপেক্ষা করছে। অসংখ্য স্ত্রী অপেক্ষা করছে তাদের স্বামীর জন্য। এই বুঝি তাঁর স্বামী ফিরে আসছে।’
বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে এই সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সরকার ১০ টাকায় চাল খাওয়াতে চেয়েছিল, পারে নাই। ঘরে ঘরে চাকরি দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই চাকরিও দিতে পারে নাই। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্দ্ধগতিতে দেশের সাধারণ মানুষ আজ অসহায়। সারের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। মানুষ মাছ খেতে পারে না, মাংস খেতে পারে না।’
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘সরকার রাতের অন্ধকারে জনগণের ভোট চুরি করেছে। এই সরকারকে দেশের মানুষ চায় না। বিদেশের কোনো সরকারও চায় না।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচন কিন্তু ২০১৮ সালের মত হবে না।। বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি করে না। দেশের হাজার হাজর কোটি টাকা বিদেশে পাচার, খুন,ঘুমসহ সকল অপকর্মের হিসেব দেশের ১৭ কোটি জনগণ নিবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রুমিন ফারহানা বলেন, অনেক নেতাকর্মীর রক্ত ঝাড়িয়েছে সরকার, আর নয়।দেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে শিখিছে,সাধারণ মানুষ ও বিদেশের সরকারও এই সরকারকে চায় না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এর বাহিরে কোনে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না দেশে।জনগণ তাদের অধিকার আদায়ে বিএনপির সাথে রয়েছে। আপনাদের পালানোর কোনো পথ থাকবে না। আওয়ামীলীগ ৭৫ এর পরবর্তী ২১ বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিলো উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, ভোট ভিক্ষা চেয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ভুলে গেছেন। কিন্তু এবার আবার আওয়ামীলীগ ১শ বছর ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির জনসমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিষ্টার হাসান রাজিব প্রধান, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন বাবুল, সদর বিএনপির আহবায়ক মমিনুল হকসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
একুশে সংবাদ/জ.ব.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :