AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সর্বত্র যুদ্ধ সত্ত্বেও জি-৭ কেন শান্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না?


Ekushey Sangbad
সুমৃৎ খান সুজন
১০:৪১ পিএম, ২১ মে, ২০২৩
সর্বত্র যুদ্ধ সত্ত্বেও জি-৭ কেন শান্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতার শিকারে পরিণত হয় জাপানের হিরোশিমা শহর। মজার ব্যাপার হলো, প্রায় আট দশক পর সেই শহরেই গত শুক্রবার (১৯ মে) শুরু হয় বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট গ্রুপ অব সেভেনের (জি-৭) শীর্ষ সম্মেলন। 

 

১৯৪৫ সালে পারমাণবিক বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়া শহর হিরোশিমা ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে আবারও। এমতাবস্থায় হিরোশিমার ‘পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন শক্তি’ প্রত্যক্ষ করে বিশ্বনেতাদের উচিত হবে চলমান বৈশ্বিক সংকটের উত্তরণ ঘটিয়ে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠার ওপর বেশি করে জোর দেওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, বিশ্বনেতারা কি ‘বিশ্বশান্তি’ নিয়ে আদৌ ভাবছেন?


আজকের বিশ্বে আমরা কী দেখছি? বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সংঘাত-সংঘর্ষ ক্রমাগত দানা বাঁধছে। রক্তপাত বয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনে। সুদানে চলছে গন্ডগোল। ইথিওপিয়া রয়েছে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পথে। তাইওয়ান নিয়ে চলমান ‘ঝামেলা’ শেষ করা যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি অঞ্চল একধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।


২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন-সার্বভৌম ইউক্রেনের মাটিতে বোমা ফেলে যে সংঘাতের সৃষ্টি করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, তা সর্বাত্মক রূপ ধারণ করে ব্যাপক রক্ত ঝরিয়ে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে সংকট ক্রমশ জট পাকিয়ে উঠছে, তাতে করে বলতে হয়, ‘শান্তির রাস্তা’ থেকে বহু দূরে ছিটকে পড়েছে বিশ্ব! ইউক্রেন কিংবা সুদানের গৃহযুদ্ধের আগুনের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিশ্বনেতাদের মাথায় ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠা নিয়ে খুব একটা চিন্তা আছে বলে মনে হয় না!


এ কথার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই, ‘নিজের ভূমি’ রক্ষা করা হবে, সন্ত্রাসীর শিকড় উপড়ে ফেলা হবে, ‘নতুন মাতৃভূমি’ তৈরি করা হবে, একসময়কার নিজের অঞ্চল পুনরুদ্ধার করা হবে, জনগণকে রক্ষা করা হবে, জনস্বার্থে ‘চূড়ান্ত বিজয়’ ছিনিয়ে আনা হবে—এ ধরনের নানা কথা, প্রতিশ্রতি সামনে রেখে শুরু করা হয় অন্য দেশ ও অঞ্চলে হামলা-হাঙ্গামা। এর ফলে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যা ব্যাপক প্রাণহানিসহ বয়ে আনে চরম ক্ষয়ক্ষতি! আমরা দেখেছি, নিজের অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করেন পুতিন। এর পরে সংঘর্ষ ও বোমা-বারুদের আঘাতে ইউক্রেনে শুধু প্রাণই ঝরছে! মানুষের বাসস্থান থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল প্রভৃতি এমনভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, গোটা ইউক্রেন দীর্ঘস্থায়ী ধ্বংসযজ্ঞের নিচে চাপা পড়তে চলেছে।


মানতে হবে, সুদান কিংবা ইউক্রেনের মতো প্রত্যক্ষ সংঘাতের ঘটনা না ঘটলেও বিশ্বের বহু অঞ্চল আজ সংঘাতের জ্বালামুখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, কোনো একটি পক্ষের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সহিংসতার অবসানের কোনো লক্ষণ নেই! এমনকি কার্যকর আলোচনা, শান্তিচুক্তি, সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন করে সমন্বিত সমাজ গঠনের চিন্তা তথা যুদ্ধের রাস্তা থেকে ফিরে এসে সংকটের সমাধান এবং নিবিড় ও পুনরুদ্ধারমূলক প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়েও কোনো ধরনের উদ্যোগ ও কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না বিশ্বেনেতাদের পক্ষ থেকে। এই চিত্র বিশ্বের জন্য কি আদৌ ভালো কোনো সংবাদ?


প্রশ্ন হলো, সংঘাত-যুদ্ধ থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটবে বিশ্বের? দুঃখজনকভাবে আমরা দেখে আসছি, শান্তির জন্য যে বিনিয়োগের কথা বলা হয়, তা কেবল নিচের দিকেই নামছে। বিশেষ করে বিগত ১৪ বছরে বিশ্বব্যাপী ১০টি শান্তিচুক্তি সত্ত্বেও বহু দেশে শান্তি বিনির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। সেফারওয়ার্ল্ড ও মার্সি কর্পসের সাম্প্রতিক ব্রিফিং অনুযায়ী, বেসামরিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, সংঘাত প্রতিরোধ ও সংকট সমাধানের প্রশ্নে নির্ধারিত বাজেট কাটছাঁট করছে খোদ যুক্তরাজ্য। হিসাবমতে, ২০১৬ থেকে ২০২১-এর মধ্যে শান্তি স্থাপন তহবিলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে; বেড়েছে প্রতিরক্ষায়। সুইডিশ সরকার যারা বহু শান্তি-বিনির্মাণ সংস্থাকে উল্লেখযোগ্য তহবিল সরবরাহ করে থাকে, ২০২২ সালে দেশের অর্থনীতি ২ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি সত্ত্বেও তারা ‘টেকসই’ শান্তির জন্য নির্ধারিত তহবিলের ৪০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই সংবাদ কি বিশ্বের জন্য আদৌ স্বস্তির? তাছাড়া প্রশ্ন থেকেই যায়, শান্তি প্রতিষ্ঠার পেছনে খরচ না করে এই বিপুল অঙ্কের অর্থ কোন বিশেষ কাজে লাগানো হচ্ছে? এসব অর্থ যাচ্ছে কোথায়? এমনটা কি ধরে নেওয়া ঠিক হবে না যে, এই বিপুল অর্থের বেশির ভাগই খরচ করা হচ্ছে কেবল প্রতিরক্ষা বাজেটের উন্নয়নে?


গত মার্চ মাসে যুক্তরাজ্য ঘোষণা করেছে, আগামী পাঁচ বছরে ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো হবে। অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার, স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে প্রতিরক্ষা খাতে মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপে এতটা বিপুল ব্যয় আগে কখনো দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই ২০২৩ সালে প্রতিরক্ষা ব্যয় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে সুইডেন। ২০২৮ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে সুইস সরকারের। প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জাপানও। সত্যি বলতে, সামরিক ব্যয়ের প্রশ্নে জাপানের পথ ধরেই হাঁটছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ।


এভাবে বিভিন্ন দেশের ‘প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি’ বিশ্বের জন্য বড় পরিবর্তন বয়ে আনছে। এমনও দেখা যাচ্ছে, যেসব দেশ আগে শান্তি স্থাপনের স্বার্থে অর্থ ব্যয় করত বেশি বেশি, তারা এখন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মজবুত করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলে শান্তি বিনির্মাণ কর্মসূচি গুটিয়ে গিয়ে সংঘাত প্রতিরোধের পথ ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা বিশ্বশান্তির জন্য এক অশনিসংকেত!


এখন কথা হলো, দেশগুলো এই পথে হাঁটছে কেন? বেশির ভাগ দেশই রাশিয়া ও চীনের বিষয়কে মাথায় রেখে বৈশ্বিক নিরাপত্তার বাস্তব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অনুভূত হুমকির ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ থেকেই মূলত এ ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন বিশ্বব্যবস্থার জন্য ছিল একটি বড় ধাক্কা। পশ্চিমা অনেক দেশ রাশিয়ার ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরের চারপাশে চীনের সামরিক কৌশল সহিংস সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এই ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা উদ্বেগকে বড় করে দেখাটা বাড়াবাড়ি নয় বটে। কিন্তু এক্ষেত্রে অন্য যুক্তিও আছে। আজকের বিশ্বে বিশেষভাবে মনে রাখা জরুরি, যখন এই বৃহত্তর সমস্যাগুলোকে শুধু ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোকে দেখা হয়, কেবল তখনই সরকারগুলো সামরিক ও সুরক্ষা সরঞ্জামের দিকে ঝোঁকে। এবং বাস্তবিক অর্থে, এর ফল তেমন একটা ভালো হয় না, যতটা মনে করা হয়।


ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, হিংসাত্মক সংঘাতের কারণে ২০১৯ সালে বিশ্বে খরচ হয় ১৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী জিডিপির ধসে যাওয়া ঠেকাতে এই বিপুল অর্থ ব্যয় করার কথা। যদিও এক্ষেত্রে বেশির ভাগ খরচ হয়েছে সামরিক খাতে। বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা যায়,  বিশ্বব্যাপী অমানবিক পরিস্থিতির ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী ‘অযাচিত সংঘাত-সংঘর্ষ’। সত্যিকার অর্থেই, সংঘাত প্রতিরোধ করে শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলা এমন এক দরকষাকষির কাজ, যা মোটেই সহজ নয়। কিন্তু তার পরও বসে থাকলে কেবল সংঘাতই বাড়বে। সুতরাং, টেকসই শান্তির পথের সন্ধান করতে হবে বিশ্বনেতৃত্বকে।


হিরোশিমায় জি-৭-এর মিটিংয়ের যে ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। সুতরাং, এ ধরনের সম্মেলন, মিটিংগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরাকার শান্তি স্থাপনের ওপর। ভূরাজনীতির এই নতুন যুগে নেতাদের অবশ্যই এ বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, বৈশ্বিক মঞ্চে তাদের অবশ্যই শান্তিকে রাজনীতির থেকে বেশি সুযোগ দিতে হবে। এর অর্থ, বিশ্বব্যাপী শান্তি বিনির্মাণে বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি বিনির্মাণে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য দূতাবাস ও রাজধানীতে সংঘাত বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ও সিদ্ধান্তমূলক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে জাতিসংঘকেও। ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’ নিয়ে এগোতে হবে বিশ্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে। জি-৭ দেশগুলোকে অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলার সঙ্গে সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষের পরিবর্তে শান্তি স্থাপনে দেশগুলোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা খুঁজে বের করা। মোদ্দা কথা, শান্তিকে আরো গুরুত্বসহকারে নিতে হবে বিশ্বসম্প্রদায়কে, যেখানে অনকে বড় ভূমিকা পালন করা উচিত বিশ্বনেতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে।


লেখক : শান্তি স্থাপনে কাজ করা এনজিও ‘কনসিলিয়েশন রিসোর্সেস’-এর নির্বাহী পরিচালক ও ইউরোপিয়ান পিস বিল্ডিং লিয়াজো অফিসের চেয়ারম্যান।


আলজাজিরা থেকে অনুবাদ : সুমৃৎ খান সুজন।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!