AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ কারাজীবন


Ekushey Sangbad
ড. মুহম্মদ মনিরুল হক
০১:৪৬ পিএম, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩
বঙ্গবন্ধুর সর্বশেষ কারাজীবন

১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল, বঙ্গবন্ধু তখন পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দি। ওয়াশিংটনের ‘নিউজ উইক’ সাময়িকী বঙ্গবন্ধুকে ‘পোয়েট অব পলিটিপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। মিয়ানওয়ালি কারাগারের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল এমন একটি ক্ষুদ্র কনডেমড সেলে, যেখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুর কয়েদি নম্বর ছিল ৭৩। একটি হালকা খাট, পুরোনো স্যান্ডেল, পানির জগ ও একটি ময়লা কম্বল ছিল তাঁর সম্বল।

 

মিয়ানওয়ালি কারাগারে বঙ্গবন্ধু আটক ছিলেন ৯ মাসের অধিক। বিচারকার্যের জন্য তাঁকে লায়ালপুর আদালতেও নেওয়া হয়েছিল। নির্জন, অন্তরীণ, একাকী সেলে জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি বঙ্গবন্ধুর কাছে তখন কোনো খবর পৌঁছাত না, কোনো খবর দেওয়াও হতো না। সেল থেকে তিনি শুনতে পেতেন সেনাবাহিনীর মহড়ার গোলাগুলির শব্দ। ইয়াহিয়ার নির্দেশে সামরিক আদালতে একটি প্রহসনের বিচার হয়। সে বিচারে ১৯৭২ সালের ৪ ডিসেম্বর সামরিক আদালত বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দি শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সেলের সামনে কবর খুঁড়তেও দেখেন।

 

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হতে পারে- এমন খবর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অনেকবারই পেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তারের আগেও তিনি জানতেন তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। তখনও তিনি নিজের নিরাপদ আশ্রয়ের কোনো চেষ্টা করেননি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে সর্বশেষ গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। এর আগে থেকেই, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে কার্যত বাংলাদেশ চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। এ সময়গুলোতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তাণ্ডবলীলার খবরও তিনি পেয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার পরামর্শও পেলেও বঙ্গবন্ধু আত্মগোপন করেননি।

 

২৫ মার্চ সকাল-সন্ধ্যাই ছিল ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে মিছিল আর মানুষের ঢল। ২৫ মার্চ রাত ৯টার কিছু পরে ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে ফোন করলে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমি পালিয়ে যাব না, আমি পালিয়ে গেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকায় সব লোককে মেরে ফেলবে। আমাকে খুঁজতে গিয়ে জ্বালিয়ে দেবে ঢাকার সব বাড়িঘর।’ ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া রচিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থ পাঠে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাত ১১টার দিকেও বঙ্গবন্ধু বাসার নিচতলা থেকে ওপরে ওঠেননি। এম এ ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনা ৩২ নম্বর বাসা ত্যাগের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু কোথায় যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘আমার অন্যত্র চলে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাই তারা আমাকে মারতে চাইলে এ বাসাতেই মারতে হবে।’

 

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় যেখানে রাখা হয়েছিল টিক্কা খানের নির্দেশে গ্রেপ্তারের পর সেখানেই আটক রাখার সিদ্ধান্ত হলেও বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে নেওয়া হয় ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি ভবনে। তার পর ক্যান্টনমেন্টের ১৪ ডিভিশন অফিসার্স মেসের একটি সিঙ্গেল কক্ষে। বন্দি মুজিবের শক্তিকেও টিক্কা খান ভয় পেতেন। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ভবনের চারতলার একটি কক্ষে আটক রাখা হয়েছিল। মুজিবপ্রেমী বাঙালিদের আক্রমণের ভয়ে ভিতু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে আকাশ পথে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়ে যায়। তার পরের দিন বঙ্গবন্ধুকে নেওয়া হয় পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালি কারাগারে।

 

১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর পাকিস্তানের ৯০ হাজারের বেশি সৈন্য বাংলাদেশে বন্দি হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য বিশ্ব জনমত ও নেতৃবৃন্দের চাপ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। নিরাপত্তার জন্য মিয়ানওয়ালি কারাগার থেকে ১৬ ডিসেম্বরের পর বঙ্গবন্ধুকে নেওয়া হয় তৎকালীন প্রিজন গভর্নর হাবিব আলির সরকারি বাংলোতে। সেখান থেকে ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নেওয়া হয় রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শাহুল্লাতে।

 

১৬ ডিসেম্বরের পরও পাকিস্তানের স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিষয়ে আপস করার জন্য ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর ওপর বিভিন্ন রকম চাপ ও কলাকৌশল প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে টলাতে পারেননি। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি রাতে ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। রাত ১টার সময় পিআইএর একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শোক, কান্না ও বিজয়ের আনন্দে উপস্থিত লাখ লাখ জনতা তাঁকে অভিবাদন জানান। সেদিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবরও খোঁড়া হয়েছিল। আমি মুসলমান, মুসলমান মাত্র একবারেই মরে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের নিকট নতিস্বীকার করবো না।’

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বশেষ গ্রেপ্তার, বন্দিত্বস্মৃতি, মুক্তিলাভ এবং প্রত্যাবর্তন মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশপ্রেমের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সর্বশেষ কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!