AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ উপদলীয় সংঘাতের জন্য ‍‍`পংকজ-বার্তা‍‍`


Ekushey Sangbad
সাইফুর রহমান তপন
০২:৫৩ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
আওয়ামী লীগ উপদলীয় সংঘাতের জন্য ‍‍`পংকজ-বার্তা‍‍`

গাধা নাকি ঘোলাজল পান করে। এটা কেন করে- সে সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। সমস্যা হলো কোনো মহামহিম গাধাও এখনো পর্যন্ত কাউকে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানায়নি। তাই বলে অবশ্য বিষয়টি দুর্জ্ঞেয় রয়ে যায়নি। আমাদের মতো এমন ‘বিশেষজ্ঞ’র দেশে গাধা বিশেষজ্ঞও একবারে কম নেই (লেখক নিজেও কম যান না!)। এই স্বনামধন্য গাধা বিশেষজ্ঞদের মতে, গাধা যে ইচ্ছে করেই ঘোলাজল পান করে, তা নয়। গাধা আসলে পরিষ্কার জলই পান করতে চায়। কিন্তু নিজের মূর্খতার কারণে শেষ পর্যন্ত সেটা ঘোলা হয়ে যায়।

 

ব্যাপারটা খোলাসা করেই বলা যাক। সাধারণত গাধারা নদী, পুকুর, ডোবা, খাল-বিলের জল পান করে থাকে। জল পান করতে নেমে গাধা মনে করে, জলটা যথেষ্ট পরিষ্কার নয়। এরপর গাধা তার নিজস্ব স্টাইলে জল পরিষ্কারের নামে সেখানে কিছুক্ষণ লাফালাফি, দাপাদাপি করে। এতে জল খুব দ্রুতই ঘোলা হয়ে যায়। এরপর গাধা নিশ্চিন্তে সে জল পান করে। গাধা তার নির্বুদ্ধিতা বা খাসলতের কারণেই ঘোলাজল পান করে।

 

আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা গাধার চেয়ে অধম। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা যে গাধার চেয়ে অধম এতথ্যটা তারা নিজেরা জানেই না। কেউ যদি জানানোর চেষ্টা করে, তাহলে ক্ষমতাসীন দলের উগ্র সমর্থকদের মতো খেপে যান।

 

‘গাধা’ সম্বোধনটা তাই পরম শ্রদ্ধেয় মা-বাবা আর প্রিয়তমা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো মুখ থেকে কখনোই কেউ আশা করেন না। এগুলো সাধারণ জ্ঞানের কথা। এগুলো জেনে রাখা ভালো। কেননা সাধারণ জ্ঞানে ভালো না হলে এ যুগে ‘অসাধারণ’ হওয়া যায় না। যাক, এসব তত্ত্বকথা। আমাদের দেশের মানুষ জেনে-শুনে-বুঝে ঘোলাজল পান করতে চায় না বটে; কিন্তু ওয়াসা কিংবা নদী-পুকুর-যেখানে ঘোলাজলই একমাত্র সম্বল-সেখানে পরিষ্কার জল পান করাটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অনন্যোপায় হয়ে অনেকে ঘোলাজল পান করতে বাধ্য হলেও আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ‘ঘোলা জলে মাছ শিকার’ করতে ভীষণ পছন্দ করে। বিশেষ করে চতুর মানুষেরা। আর এ কথা কে না জানে যে, আমাদের সমাজে চতুর মানুষের সংখ্যাই বেশি? ঘোলা জলে মাছ শিকারের অবশ্য অনেক সুবিধা আছে। এতে নিজের ইচ্ছের বাস্তবায়ন করা যায়। যদি ইচ্ছে হয় যে মাছ ধরব না, তাহলে তা-ই করা যায়। আবার ইচ্ছে হলে খানিকক্ষণ হাত চালিয়ে বলে দেওয়া যায়, এখানে মাছ নেই। আবার ইচ্ছে হলে দু-একটি ছোট মাছ ধরাও যায়। জল ঘোলা হলে মাছ ধরা না-ধরা, মাছ পাওয়া না-পাওয়া, এমনকি মাছ থাকা না-থাকা নিয়ে যা খুশি তা-ই বলে দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে শিকারি যা বলবে, তা-ই সই। শিকারির কথাকে মিথ্যে প্রমাণ করা কঠিন।

 

কিন্তু জল যদি পরিষ্কার হয় এবং গভীরতা কম হয়, তাহলে যে কেউ বলতে পারে, জলের নিচে কি মাছ আছে, কোথায় আছে? কারণ পরিষ্কার জলে মাছের গতিবিধি বা বিচরণ দেখা যায়। শিকারি যদি ইচ্ছেমতো বড় মাছের জায়গায় ছোট মাছ ধরেন অথবা মাছ না-ধরেন, তাহলে এ ব্যাপারে অতি-উত্সাহীরা কথা বলেন বা আপত্তি তোলেন। শিকারি এক্ষেত্রে মাছ ধরা নিয়ে, মাছ থাকা না-থাকা নিয়ে মনগড়া বক্তব্য রাখার সুযোগ বড় বেশি পান না। প্রতিশ্রুত মাছ ধরতে সে বাধ্য হন। কিন্তু কোনোরকমে জলটা যদি একবার ঘোলা করা যায়, তাহলে আর কোনো দায়দায়িত্ব থাকে না। কারো কাছে জবাবদিহিও করতে হয় না। সেজন্য মতলববাজরা সব সময় ঘোলা জলতে মাছ শিকার করতে চান।

 

আমাদের দেশের রাজনীতিতে ঘোলা জলতে মাছ শিকারের প্রবণতা অসম্ভব বেশি। রাজনীতিবিদরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘোলা জলে মাছ শিকারের আগ্রহ দেখান। এতে তাদের সুবিধে হয়। ইচ্ছেমতো মাছ ধরতে পারেন। স্বার্থের অনুকূলে না হলে মাছ ধরা থেকে বিরতও থাকতে পারেন। একে অন্যকে দায়ী করতে পারেন। সেজন্য তারা সবার আগে জল ঘোলা করার ব্যাপারে মনোনিবেশ করেন। জল যথেষ্ট ঘোলা হলেই কেবল তারা মাছ ধরতে প্রস্তুত হন। পছন্দের মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে তারা জলেই নামেন না। চুপচাপ বসে থাকেন। অথবা ‘মাছ পাওয়া যাচ্ছে না’-বলে ঘোষণা দেন।

 

বর্তমানে ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে চলছে ‘জল ঘোলা’ করার একটা প্রবণতা। অনেকে এ চুক্তি না হওয়ার জন্য দায়ী করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আবার অনেকে বলছেন, মমতার ওপর দায় চাপিয়ে আসলে সুচতুর মোদি সরকার বাংলাদেশকে ঠকাতে চায়। এদিকে আরেক শ্রেণির মানুষ সরাসরি শেখ হাসিনাকে দায়ী করে ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতির’ কারণেই এই চুক্তি হচ্ছে না বলে মন্তব্য করছেন। সব মিলিয়ে জল পুরোমাত্রায় ঘোলা বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

 

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের পক্ষ থেকে কুশিয়ারা নদীর রহিমপুর পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশকে ১৫৩ কিউসেক জল প্রত্যাহার করতে দিতে ভারতের রাজি হওয়াকে দেখানো হচ্ছে। উনিশ শ ছিয়ানব্বই সালের গঙ্গা চুক্তির পর এই প্রথম ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগিতে রাজি হয়েছে।

 

কিন্তু কুশিয়ারার ১৫৩ কিউসেক জলকে সমালোচনার তাপে বাষ্প বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরের প্রধান আলোচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তার জল। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, তিস্তা ব্যারেজের ফলে তিস্তার জল বাংলাদেশে বইয়ে দেওয়ায় প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক পথে যে বিঘ্ন তৈরি হয়েছে ও জল ছাড়ার একচেটিয়া অধিকার যে ভারতের হাতে চলে গেছে, সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় চাষের প্রয়োজনীয় জল পাওয়াই বাংলাদেশের প্রধান দাবি।

 

বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী এবারও এই চুক্তি হচ্ছে না বলে শীর্ষ কূটনৈতিক পর্যায়ে আগেই জানানো হয়। তার পরও সমালোচকরা বসে নেই। অবশ্য গঙ্গা-তিস্তা নদীর জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিরোধ জন্মলগ্ন থেকেই চলছে। এক্ষেত্রে অভিযোগের তির সব সময়ই ভারতের বিরুদ্ধে। তিস্তার জল বণ্টনসংক্রান্ত চুক্তিটি ২০১১ সালে চূড়ান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরম বিরোধিতার কারণে স্বাক্ষর করা হয়নি। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘৬৬ বছর জুড়ে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যা আমরা মিটিয়ে দিয়েছি। রাজ্যের স্বার্থ আমাকে দেখতে হবে। বাংলার কল্যাণকে অক্ষুণ্ন রেখে বাংলাদেশকে সাহায্য করা হবে।’ এই বক্তব্যও গত কয়েক বছরে তার ভূমিকার মধ্যে এটা স্পষ্ট যে, তিস্তার জল বণ্টন চুক্তি নিয়ে তিনি জল ঘোলা করার নীতিই গ্রহণ করেছেন!

 

যদিও নদীর জল নিয়ে এমনটা হওয়ার কথা নয়। তখনই কথা হয়, যখন নদীর জল, আকাশের হাওয়া, প্রাকৃতিক অরণ্য, পাহাড়ের বরফ এমন সব নৈসর্গিক ও স্বাভাবিক বিষয়ের ওপর রাষ্ট্র তার দখল কায়েম করে। সমুদ্রের জলের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর দখলদারি জারি করেই সাম্রাজ্যবাদী তত্পরতা শুরু হয়।

 

অনেকে বলেন, তিস্তা ব্যারাজ যদি না হতো তা হলেই তো এই সমস্যা তৈরি হতো না। তিস্তার জল মহানন্দায় ফেলে মহানন্দার খাত দিয়ে গঙ্গায় ফেলার পরিকল্পনা থেকে তিস্তা ক্যানাল কাটা হয়েছে। এরপর থেকেই তিস্তা দিয়ে বাংলাদেশে জলপ্রবাহ কমতে শুরু করেছে।

 

এখন ভারতের রাজনীতিকদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, তিস্তার মতো মহত্ নদীকে নদীতে ফিরিয়ে দিন। আপনারা ঘোষণা করুন, নদীকে আটকাবার জন্য ব্যারাজ থাকবে না। নদী ব্যারাজহীন, নদী তার প্রাকৃতিক প্রবাহ পথে ফিরে যাক। নদী কেন এমন সীমান্ত মানবে, যে সীমান্ত সে নিজে তৈরি করেনি?

 

আশা করি, তিস্তার জল নিয়ে জল ঘোলা করার খেলা সংশ্লিষ্ট সবাই বন্ধ করবেন। কেননা জল ঘোলা করার এই প্রবণতা অত্যন্ত অমর্যাদাকর। এটা হচ্ছে ‘গাধার কাণ্ড’। মানুষই যদি গাধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তাহলে গাধারা কী করবে? মানুষের না থাক, গাধাদের তো একটা ইজ্জত আছে!

 

লেখক : রম্য রচয়িতা

 

একুশে সংবাদ.কম/জা.হা

Link copied!