AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ধর্ষণ বেড়ে গেল কেন?


Ekushey Sangbad
এহ্‌সান মাহমুদ
০৫:২০ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ধর্ষণ বেড়ে গেল কেন?

একটা সময়ে পত্রিকার পাতা খুললেই এসিড নিক্ষেপের খবর পাওয়া যেত। এসব খবরে বেশিরভাগই থাকত নারীর আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ। স্কুলপড়ূয়া কিশোরী, কলেজপড়ূয়া তরুণী, মধ্যবয়সী নারী- কেউই এসিড আক্রান্তের বাইরে ছিলেন না। মুহূর্তেই ঝলসে যেত সুন্দর অবয়ব। এসিড হামলার ঘটনা একটা সময়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। সেই সময়ে পুরুষরাও আক্রান্ত হয়েছেন- এমন খবর সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে। তবে এসিড হামলার বেশিরভাগ হতো নারীর বিপক্ষে। অবশেষে এলো আইন। ২০০২ সালে প্রথমে এসিড অপরাধ দমন আইন এবং পরে এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন করে এসিড সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে রেডিও, টেলিভিশনে এসিডবিরোধী বিজ্ঞাপন নিয়মিত প্রচার করা হতো। পাশাপাশি সামাজিকভাবেও এসিডের বিরুদ্ধে অবস্থান শক্ত হয়েছিল ধীরে ধীরে। শুরুর দিকে তেমন সাফল্য না এলেও পরে কঠোর আইনের ভয়াবহতা এবং প্রয়োগের মাধ্যমে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা কমতে শুরু করেছিল। বর্তমানে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা প্রায় শূন্যের কোটায় বলা যায়।

 

এসিড যেভাবে মহামারির মতো দেখা দিয়েছিল, এখন ধর্ষণ সেভাবে নতুন ভয়ের কারণ। নারীর এখন সার্বক্ষণিক আতঙ্কের নাম ধর্ষণ। কী ঘরে কী বাইরে- সবখানেই নারী যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হতে পারেন। তবে সম্প্রতি একটি বিশেষ ধরনের ধর্ষণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ধর্ষণের ধরন নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। 'বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে' দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিশ্নেষণ করে এমনটা দেখা গেছে। গত জুলাই মাসে যশোরে প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক কিশোরী। চলতি বছরেই পঞ্চগড়ে বেড়াতে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আটক করা হয়েছে দু'জনকে। নোয়াখালী সদর উপজেলায় বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী। ২০১৭ সালে নোয়াখালীর সেনবাগে বেড়াতে এসে এক গৃহবধূ (২২) ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ওই গৃহবধূর স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এমন আরও যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেখা গেছে পরিচিত বন্ধু বা স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার পরে স্থানীয়রা তাঁদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। বিষয়টা এমন নয় যে, একা এক নারীকে পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। নারীর সঙ্গে অন্য পুরুষ থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

 

ধর্ষণের সব ঘটনার খবর আমরা জানতে পারি না। চলমান বাস্তবতায় জানা সম্ভবও নয়। দেশে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৭৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৪ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ছয়জন। সংস্থাটির তথ্য বলছে, দেশের প্রায় সব কয়টি জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়, ৪৭টি। এরপর নারায়ণগঞ্জে ৩৭, চট্টগ্রামে ২৭, গাজীপুরে ২২ ও নোয়াখালীতে ১৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আসক বলেছে, গত ছয় মাসে ৮০৭ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১৫২ শিশু, আত্মহত্যা করেছে ২৬ শিশু, বিভিন্ন সময়ে ৫৬ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ১৩ শিশুর এবং ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।

 

ধর্ষণবিষয়ক আরও তথ্য জানা যাবে পুলিশ সদরদপ্তরের একটি প্রতিবেদনে চোখ রাখলে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ৭ হাজার ৩৫০টি মামলা হয়, যার মধ্যে ৩ হাজার ৫২৩টি ধর্ষণের। বাংলাদেশ পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছর ধর্ষণের মামলা ১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ১০ হাজার ৪০৮টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ধর্ষণের মামলা ছিল ৩৮ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ৪৩ শতাংশ, ২০২০ সালে প্রায় ৪৮ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৪৯ শতাংশ মামলা ছিল ধর্ষণের। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এই হার ৪৮।

 

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে কলের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ১১ হাজার ৯৫৯টি কল এসেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ৬১৯, ধর্ষণচেষ্টা ৩১৪, যৌন নির্যাতন ২৬৮, ধর্ষণের হুমকি ৩১ এবং উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির ১ হাজার ৯টি অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগে ২০২১ সালে ১২ হাজার ১৬৯, ২০২০ সালে ৬ হাজার ৩৩১, ২০১৯ সালে ৩ হাজার ১১৫ এবং ২০১৮ সালে ২ হাজার ২৯২টি কল আসে।

 

পত্রিকায় প্রকাশিত খবর, বেসরকারি সংস্থার জরিপ, পুলিশ সদরদপ্তরের রেকর্ড- এসব তথ্য কেবল দেশে ধর্ষণের সংখ্যা বুঝতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারা দেশে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বিধান করে যে আইন হয়েছে, তার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। কিছুতেই ধর্ষণ কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতা, দীর্ঘসূত্রতা এবং দোষীদের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। অপরাধীদের যে কোনো ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের জবাবদিহি, প্রয়োজনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ধর্ষণের মামলার যে দীর্ঘসূত্রতা, তা বন্ধ করা না গেলে আইনের সুফল পাওয়া যাবে না। অতীতে এসিড সন্ত্রাস বন্ধে গৃহীত আইনের কঠোরতা নিয়ে যেভাবে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা, নাটিকা-কথিকা প্রচার করা হয়েছিল, ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা বিষয়ে এমন কোনো উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। অনেক সময় দেখা যায়, জনমানসে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলেও আইন ভাঙার শাস্তির ফলেও অনেকে আইন মেনে চলেন। তাই ধর্ষণের পরিণতি হিসেবে ধর্ষকের সর্বোচ্চ বিচারের বিষয়টি প্রচারণার সামনে নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষাও ছড়িয়ে দিতে হবে।

 

একুশে সংবাদ.কম/জা.হা

Link copied!