AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তেলের মূল্য বৃদ্ধি, জনগণের স্বার্থ দেখবে কে


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৭:৫২ পিএম, ৫ মে, ২০২২
ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তেলের মূল্য বৃদ্ধি, জনগণের স্বার্থ দেখবে কে

বিশ্ব বাজার বা আন্তর্জাতিক বাজারের ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়েছেন দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের অবস্থা শোচনীয়।

অপরদিকে একই অজুহাতে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে সুফল তুলে নিচ্ছেন দেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। যারা প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের পকেট কেটে ক্রমেই বিত্তবান হয়ে উঠছেন। সর্বশেষ ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি এ কথারই সাক্ষ্য দেয়।  এর সঙ্গে মরার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো মাথার উপর ঝুলছে গ্যাসের দাম। গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের চাপ আমলে নিলে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যেই হয়তো জানা যাবে গ্যাসের দাম কত বাড়ছে। পানির ক্ষেত্রেও রয়েছে একই শঙ্কা। এর বাইরে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের অবস্থা একেবারে লেজে-গোবরে

 

দেশে গত এক বছরে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে আট দফা। ২০২১ সালে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১১৫ টাকা। এক বছরে আট দফায় সেই তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৬৮ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ। গত অক্টোবরে বাণিজ্য মন্ত্রী ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বোতলজাত সয়াবিন তেল ও খোলা পামওয়েলের দাম নির্ধারণ করেন।

এর ঠিক প্রায় চার মাস পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হলো। এবার লিটার প্রতি আট টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৮ টাকা। 
কিন্ত কী কারণে বা কোন যুক্তিতে এই দাম বাড়ানো হলো তার সঠিক জবাব নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। জবাব শুধু একটাই আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বেড়েছে, সে কারণেই দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে।

গত ১৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকরা বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি’র কাছে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেননি। ওই দিন তিনি বলেছিলেন, ‘আজ সকালে আমরা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা খোলা পামওয়েল ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।’ বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা এখন যদি দাম না বাড়াই তাহলে আসন্ন রমজান মাসে বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে। আমদানিকারকরা তেল আমদানি বন্ধ করে দিতে পারে।’ 

এ ঘটনা থেকে অনুমান করে নেওয়া যায়- ব্যবসায়ীরা নানাভাবে সরকারকে চাপে রেখে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে নিচ্ছে। এটারও একটা কারণ আছে। যে সংসদে রাজনীতিকদের বসার কথা সেই সংসদে রাজনীতিকদের চেয়ে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি। সঙ্গত কারণে ব্যবসায়ীরা চাপে রেখে বিশ্ববাজার, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নিচ্ছে। আর সাধারণ মানুষের জীবনযাপন প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

অক্টোবরে যখন ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এখন বাজারে যে ভোজ্যতেল আছে তা তিন মাস আগে আমদানি করা। তাহলে এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সয়াবিনের দাম কেন বাড়ানো হবে?’ জবাবে ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, ‘আমরা করোনায় অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছি। সেই ক্ষতি তো পোষাতে হবে। ক্ষতি না পোষালে আমরা টিকব কীভাবে?’

ব্যবসায়ীদের এমন মুনাফালোভী বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, আসলে আন্তর্জাতিক বাজার হচ্ছে ইস্যু। এই ‘মুলা’ ঝুলিয়ে স্থানীয় বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা বেশ সহজ। তাই ব্যবসায়ীরা নিজেদের ক্ষতি পোষাতে সাধারণ মানুষের গলা কাটতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা সংকোচ করছেন না।

কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামাল দিতে না পেরে কত শত পরিবার যে এই শহর ছেড়ে চলে গেছে, কত মানুষ যে বেকার হয়ে গেছে, কত পরিবার যে দরিদ্র হয়ে গেছে, কত পরিবার সংসার চালাতে গিয়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে- সেগুলো ব্যবসায়ীরা দেখেন না। এমনকি সরকার বাহাদুরও দেখেন না। তা না হলে শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যের দাম কেন দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে ২০ লাখ টন। এর বেশিরভাগ আমদানি করা হয়। আর তেল আমদানি করে মূলত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। তারাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কথার বাইরে কিছু হয় না বা হচ্ছে না- এটা পরিষ্কার। অর্থনীতির যে স্বাভাবিক সূত্র তাতে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি থাকলেই দাম কম-বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক উল্টো চিত্র। অর্থনীতির সূত্র এখানে নস্যি। বরং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও ব্যবসায়ীরা করোনাকালে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে কম দামে কেনা ভোজ্যতেল এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে আমাদের শুনতে হচ্ছে- ব্যবসায়ীদের চাপ দিলে তারা আমদানি বন্ধ করে দিলে কিছু করার থাকবে না। কি হাস্যকর ব্যাপার!

এখন কথা হচ্ছে ভোজ্যতেলের দাম গত এক বছরে যে হারে বাড়ল সেটি কি দেশের সিংহভাগ মানুষ ধারণ করতে পারছেন? মানুষের যে ত্রাহি অবস্থা তাতে সেই মূল্য ধারণ করা শুধু কঠিনই নয়, কঠিনতর। আর এক বছর পর দেশে নির্বাচনী ডামাঢোল শুরু হবে। বর্তমান সরকারি দল সেই নির্বাচনে অংশ নেবে। অথচ যে হারে ভোজ্যতেল, চাল, চিনি, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। মানুষের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ব্যবসায়ীরা যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন তাতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষতিটা দিন শেষে সরকারি দলেরও হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দরজায় ভোট চাইতে গেলে এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে মাঠের নেতাকর্মীদের। ওই সময় কিন্তু ব্যবসায়ীদের খোঁজে পাওয়া যাবে না। 

আর ব্যবসায়ীরা বরাবরই যে নৌকার পালে হাওয়া দেখবেন রাতারাতি বোল পাল্টে সেই নৌকার যাত্রি হয়ে যাবেন। তাই সাধু সাবধান। সময় থাকতে জনগণের কথা ভাবুন। মানুষকে দু’বেলা ভরপেট খাওয়ার সুযোগ দিন। যতই মাথাপিছ আয় বাড়ুক না কেন, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি পিষ্ট হচ্ছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তাদের কথা ভেবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনুন। ব্যবসায়ী নয়, সাধারণ জনগণকে প্রাধান্য দিন। 

শুধু যে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে তা কিন্তু নয়। একটা বাড়লে আরেকটা লাফ দিয়ে ওঠে। এখন যেমনটা লাফালাফি করছে গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। একইভাবে ওয়াসাও পিছিয়ে নেই। তারাও দাম বাড়াতে চায়। এতে করে দেশের মানুষ মরল কি বাঁচল সেটা দেখার সময় নেই কারো। মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠানগুলো একবারও ভাবছে না- সাধারণ মানুষের কথা। তারা নাই-বা ভাবলো, কিন্তু সরকারকে সাধারণ মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে কী করে?

দেশের মানুষ জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য দিনের পর দিন দাবি জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যেই গ্যাস সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পসহ সব খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর অযৌক্তিক প্রস্তাব করেছে। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী গ্যাসের দাম বাড়লে পথে বসতে হবে অনেক পরিবারকে। কারণ তখন অন্যান্য খরচও বাড়বে। তার প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যের মূল্যের উপর। 

ইতোমধ্যে বিইআরসি’র চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, পেট্রোবাংলার কাছে তারা প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র চেয়েছেন। সেটা পেলে কারিগরি কমিটি গঠন করে সেই প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হবে। তারপর গণশুনানী হবে। এরপর নতুন দাম নির্ধারণ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

গার্মেন্টস কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমই বলেছে, গ্যাসের দাম বাড়লের শিল্প কারখানায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে রপ্তানি কমে যাবে। এতে শুধু পোশাকশিল্প নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হবে। এখানে একটি বিষয় না বলে পারছি না- গ্যাসের দাম বাড়তে পারে এই খবরে পোশাকশিল্প কারখানার মালিকরা দাম না বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই যৌক্তিকতা তুলে ধরার লোকের বড়ই অভাব। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পর কেউ কিন্তু একবারও বলেনি- দেশের সাধারণ মানুষ এই মূল্য কীভাবে মেটাবে। কারণ বলার মতো সংঘবদ্ধ জনবল নেই। অথচ দাম বাড়ানোর পক্ষে বলার মতো মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ঠিকই আছেন।

যে কারণে সরকারকেই সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে হবে। নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। যেসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায়, সেসব পণ্যের মূল্য কমিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: সাংবাদিক

Link copied!