AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৫:৫৭ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২২
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ভুয়া অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তারের ১৯ দিন পর মুন্সিগঞ্জের একটি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন স্থানীয় বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। কিন্তু মুক্তি মেলেনি শিক্ষকদের, বিশেষ করে যদি সেই শিক্ষক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হন।

হৃদয় মণ্ডল জেলে থাকা অবস্থায়ই নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালকে হিজাব বিতর্কে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার বেলায়ও একই প্রচেষ্টা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সঠিক পোশাক পরে আসতে বলার পর কয়েকজন মেয়ে অভিযোগ তোলে, তাদের হিজাব খুলে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। পরে তদন্তে দেখা গেল, এর কিছুই হয়নি।

এগুলো যে পরিকল্পিতভাবে একটি গোষ্ঠী করছে সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এসবের প্রতিকার কোথায়, সে নিয়ে যে বড় পরিকল্পনা প্রয়োজন সেই ভাবনাও কোথাও নেই।

হৃদয় মণ্ডলের ঘটনা আর চট্টগ্রামের ঘটনা দুটিই অদ্ভুত। হৃদয় মণ্ডলের দশম শ্রেণির এক ছাত্র ক্লাসরুমের শিক্ষকের কথা গোপনে রেকর্ড করে সেটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়, শিক্ষককে জেলে যেতে হয়। আর চট্টগ্রামের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দেয় যে, ছাত্রীদের হিজাব খুলে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেল, কিছুই হয়নি।

এই পড়ুয়ারা এক সময় বড় হবে, সমাজের নেতৃত্ব নিবে। কিন্তু ভাবলে অবাক হতে হয়, কোথায় চলেছে সমাজ! শুধুমাত্র মূল্যবোধের অবক্ষয় বলে আর পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনটি ঘটনাই যদি দেখি তাহলে দেখতে পাই, সুযোগসন্ধানীরা ধর্মীয় অনুভূতির সস্তা অভিযোগ তুলে সমাজকে, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে তাতিয়ে দিতে চাচ্ছে এবং সেখানে মুখ্য ভূমিকা রাখছে শিক্ষকদের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রসূত ইন্ধন। সাথে আছে, ম্যানেজিং কমিটির কোনো কোনো সদস্যের মদদ।


একজন আদর্শ শিক্ষক তার জীবনকে ছাত্রছাত্রী গঠনের কাজে উৎসর্গ করে থাকেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীর কাছে তার কিছু প্রত্যাশাও থাকে। শিক্ষার্থীরা তার দেওয়া শিক্ষায় প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত হবে এটাই একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।
একজন শিক্ষকের কাছে শুধু মাত্র শিক্ষার্থীর নয়, সমাজেরও কিছু চাহিদা থাকে। তিনি শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী, জীবনোপযোগী শিক্ষা দেবেন। তাকে জ্ঞানের পথ দেখাবেন, আলোর পথের যাত্রী হিসেবে নির্দেশনা দেবেন।

মানসিক ও শারীরিক দু’ভাবেই পড়ুয়ারা যাতে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে শিক্ষক হবেন সেই পথের দিশারি। একজন ভালো মানুষ, সুনাগরিক গঠন করার দায়িত্বও তো শিক্ষকের উপরেই বর্তায়।

একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সিলেবাস বা সিলেবাসের বাইরের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলবেন, তার কতটুকু পড়ুয়ারা গ্রহণ করবে সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যদি একজন শিক্ষকের মতামতের জন্য মিছিল করে তাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তাহলে এরচেয়ে সমাজ বিধ্বংসী আর কোনো দৃষ্টান্ত থাকতে পারে না।

হৃদয় মণ্ডল এমন কোনো কথাই বলেননি যেটি আপত্তিকর মনে হতে পারে। এমনকি আপত্তিকর কথা বললেও তাকে পুলিশে দেওয়া অন্যায়। মানুষের মত প্রকাশের বিরুদ্ধে এক ভয়ংকর নজির স্থাপন হলো এই ঘটনা। মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে এবং কোনো একজনের কথা আপত্তিকর মনে হলেও সেটা সহ্য করতে হবে।

একথা সত্য যে, শিক্ষক সমাজের একাংশ শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত গুণাবলীর ধারক নন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতির মূলে এই কারণকে কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। একজন আদর্শ শিক্ষক তার জীবনকে ছাত্রছাত্রী গঠনের কাজে উৎসর্গ করে থাকেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীর কাছে তার কিছু প্রত্যাশাও থাকে।

শিক্ষার্থীরা তার দেওয়া শিক্ষায় প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত হবে এটাই একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। কিন্তু, এই প্রত্যাশা অনেকেই পূরণ করতে পারছেন না। শিক্ষক রাজনীতি, ম্যানেজিং কমিটির রাজনীতি, স্থানীয় রাজনীতি, অভিভাবকদের রাজনীতি এবং টিউশনি ও কোচিং-এর প্রতি লোভ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরতে পরতে অনেক অনিয়ম আর অনৈতিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

মুন্সিগঞ্জের যে ছাত্র শিক্ষককে একের পর এক অযাচিত প্রশ্ন করেছে, আবার তা রেকর্ড করেছে কিংবা চট্টগ্রামের যে ছাত্রী মিথ্যা অভিযোগ করল—তারা কোনো স্বাভাবিক ছাত্র-ছাত্রী নয়। এদের পেছেন যে একটা গোষ্ঠী সক্রিয় আছে সেটা বুঝতে বড় অনুসন্ধানের দরকার পড়ে না। এরা ব্ল্যাকমেল করতে চেয়েছে এবং এই ব্ল্যাকমেল করাটা এখন এক হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যারা অভিভাবকসম শিক্ষকদের ওপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের অমানবিক এমন আচরণ করতে পারে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আক্রমণাত্মক আচরণ করবে, সে বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। তারা ঠাণ্ডা মাথার অপরাধী।
নিরীহ কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার বড় রকমের হাতিয়ার। যারা অভিভাবকসম শিক্ষকদের ওপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের অমানবিক এমন আচরণ করতে পারে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আক্রমণাত্মক আচরণ করবে, সে বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। তারা ঠাণ্ডা মাথার অপরাধী। পরিবার ও শিক্ষকদের কাছ থেকে আসলে ন্যায্য-অন্যায্য বলে কিছু শিখতেই পারেনি তারা। 

কপালের টিপ নিয়ে শিক্ষিকাকে পুলিশের হেনস্থা, মুন্সিগঞ্জ, নওগাঁ বা চট্টগ্রামে ঘটেছে। এর আগে ঘটেছে সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ, রংপুরের টিটু রায়সহ আরও অনেকের সাথে। এগুলো সব সংগঠিত নৈরাজ্য। আমরা দেখলাম, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসব ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ভয় পান, এড়িয়ে যান। অথচ কাগজপত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।

হৃদয়মণ্ডলসহ সবগুলো ঘটনা খারাপ বার্তা দিচ্ছে শিক্ষকদের জন্য, বিশেষ করে আলোকিত মানুষের জন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের নৈরাজ্য সহ্য করে ঘরের ভেতর মুখ লুকিয়ে বসে থাকলে শিক্ষকেরা অপমানিত, লাঞ্ছিত হতেই থাকবেন।

মেরুদণ্ড ক্রমশ মাটিতে মিশে যাচ্ছে, অথচ আমাদের কোনো হুঁশ নেই। শিক্ষকদের গায়ে হাত পড়লে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পুলিশ, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ যদি এগিয়ে না আসে তাহলে শুধু অবকাঠামোর উন্নয়ন দিয়ে সমাজের বিকাশ হবে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক এই তিন পক্ষের মধ্যে সুষ্ঠু সামঞ্জস্য রেখে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই আদর্শ সহাবস্থান তৈরি হতে পারে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীর মধ্যে। লক্ষ্য একটাই— জ্ঞানার্জন। এবং তার সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের চিরকালীন মাধুর্য বজায় রাখা। পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভালবাসার মধ্যে দিয়ে এই মহান সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে, তা রক্ষা করা সবারই নৈতিক দায়িত্ব।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ।। প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টিভি

Link copied!