AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পরীক্ষার ফলাফলই কেবল মেধা বিচারের উপায় নয়


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৬:১৭ পিএম, ২৬ জুলাই, ২০২১
পরীক্ষার ফলাফলই কেবল মেধা বিচারের উপায় নয়

আমরা সবাই জানি এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করি "শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড"।  কিন্তু শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা আমাদের বাস্তব জীবনে কতটুকু কাজে আসে বা আমরা প্রয়োগ করতে পারি তা একটা জিজ্ঞাসা মনের ভিতরে থেকেই যায়।

বেশিরভাগ অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের কেবল পরীক্ষায় নম্বর প্রাপ্তির মাপকাটিতেই মেধাবী প্রমান করে থাকেন। ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড ইত্যাদি না হলে সন্তানকে ‘গাধা’ মনে করা হয়। এজন্যে অবশ্য একতরফাভাবে শুধু অভিভাবকেরাই দায়ী তা নয়; আমাদের দেশের সার্বিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাই পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর।

কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলে, মানুষের মেধা এমন একমুখী নয়; কেবল বইয়ের পড়াশোনা আর পরীক্ষায় ভালো ফল করা ছাড়া মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিচারের আরও অনেক দিক রয়েছে। সব মানুষের মস্তিষ্ক একভাবে কাজ করে না; একেকজনের মেধা-দক্ষতা-ঝোঁক একেকরকম। তাছাড়া দর্শন বা পুরোনো শাস্ত্রগুলোও সবসময় এমনটিই বলেছে। তাই, শুধু পরীক্ষার ফল দিয়ে মানুষের মেধা যাচাই করা ভুল।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মেধাবী; তাই বলে গাইয়ে লতা মঙ্গেশকর মেধাহীন নন। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির বিচারে মেধা মাপতে গেলে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা বিল-গেটস মেধাবী নন কেউই । আমাদের লোকজ সঙ্গীতসাধক লালন ফকির অথবা গাঁয়ের সেই আরজ আলী মাতুব্বর কোনো পড়ালেখাই করেননি; তাই বলে তাদের মেধাহীন বলার কোনো কারণ বা সুযোগ আছে কি? শচীন টেন্ডুলকার বা আমাদের দেশের সাকিব-মাশরাফিরা কি মেধাবী নন? একজন শিল্পী অর্থাৎ যিনি বাঁশি বাজান বা ছবি আঁকেন, তিনি কি মেধাবী নন?

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশেরই এমন অনেক ব্যক্তির কথা আমরা জানি, যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো ডিগ্রি নিতে পারেননি বা নেননি অথচ বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়া ‘মেধাবীরা’ ওই ব্যক্তিদের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানের চাকুরী করছেন, তাহলে মেধার সংজ্ঞা আসলে কী?

আমাদের সমাজে মেধার বিচার কেবল ‘ভালো ছাত্র’ আর ‘খারাপ ছাত্র’ হিসেবে; এই ভ্রান্ত মূল্যায়ন থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। যে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, তার জীববিজ্ঞান বোঝা দরকার; কিন্তু তার পক্ষে পরীক্ষায় বাংলা সাহিত্যে আশি-নব্বই পাওয়া খুব জরুরি কি? যে বড় হয়ে গাইয়ে কিংবা আঁকিয়ে হবে, সে অঙ্কে অন্তত আশি নম্বর না পেলে তাকে ‘গাধা’ বলা চলে কি? যে বড় হয়ে সফল ক্রীড়াবিদ হবে, তার জন্যে পরীক্ষায় ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া কি খুব জরুরি?

কে ডাক্তার হবে, কে প্রকৌশলী হবে, কে শিল্পী হবে, কে বিজ্ঞানী হবে, কে ক্রীড়াবিদ হবে-ইত্যাদি বিবেচনায় তাকে সেজন্যে প্রয়োজনীয় বিষয়ে অবশ্যই যথেষ্ট ভালো জানতে হবে। পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া বা ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া সব পেশার জন্যে জরুরি নয়। আর ক্লাসে ফার্স্ট-সেকেন্ড হলেই সে ওই কাজে ভালো করবে, এটিও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে তাই বলে যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছেড়ে দিবেন এমনটা নয়। আমাদের সফল হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমরা সবাই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হব। শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধ রাখব না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মান যদি নিশ্চিত করা যায়, সেটিই আসলে যথেষ্ট; এতেই শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষার মৌলিক সুফল ভোগ করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের কার কোনদিকে আগ্রহ ও মেধা রয়েছে, সেটি খুঁজে বের করে এবং ওই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই প্রস্তুত করে তুলতে হবে।

মনে রাখতে হবে, সবাই আইনস্টাইন-চমস্কি-অমর্ত্য সেন হবে না আর তা না হলেই তাকে ‘মেধাহীন’ বলা যাবে না; কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-লালন-স্টিভ জবস-আব্রাহাম লিংকন কিংবা লতা মঙ্গেশকর হবে। এঁরা কেউই মেধাহীন নন; কোনো বিচারেই না।

কিন্তু সন্তানের প্রতি মায়ের প্রশ্ন, ‘জিপিএ ৫ পেলি না, আমি এখন ভাবিদের কাছে মুখ দেখাবো কী করে?’ আমাদের দেশে যুগে যুগে বাস্তবের চিত্র আসলে এমনই; পাবলিক পরীক্ষার ফল বেরোলে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর বাসায় মিষ্টি কেনার ধুম পড়ে যায় আর ফেল করা শিক্ষার্থী দেয় গলায় দড়ি।

 

একুশে সংবাদ/আস/সজীব/প

Link copied!