AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বাংলা ভাষায় দূষণ 


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০২:৩৮ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
বাংলা ভাষায় দূষণ 

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও মনের ভাব প্রকাশের সময় পরিপূর্ণ মাতৃভাষার প্রয়োগ আমরা করতে পারিনা। কথা বলার সময় এখন নিজের অজান্তেই আমাদের মুখ দিয়ে ইংরেজি শব্দ উচ্চারিত হয়ে যায়।বাংলা ভাষা এতো সমৃদ্ধ হবার পরও আমাদের ধার করা ইংরেজি শব্দ নিয়ে এখন মনের ভাব প্রকাশ করতে হয়। বিষয়টা এমন যে, ঘরে গোলাভরা ধান থাকার পরও আমাদের ভিক্ষা করে খেতে হচ্ছে।

শব্দ,অলংকার,বিশেষ্য,বিশেষণ,রূপক,উপমা ভাব গাম্ভীর্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ,সমৃদ্ধ আমাদের বাংলা ভাষা। বাংলা ইংরেজির মিশ্রন ঘটানো যদি বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে একদল তরুণ সমাজ আর কথাই বলতে পারবেনা। পাশ্চাত্য  অনুকরণপ্রিয়তা এর পেছনে অন্যতম একটি কারণ। বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম ভাষায় বাংলা ইংরেজির মিথষ্ক্রিয়া ঘটানোকেই আধুনিকতা বলে মনে করে । 

নিজ ভাষার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের সূত্রপাত হয় সেই প্রাথমিক পর্যায়ে অধ্যয়নের সময়কাল থেকেই।পরিপূর্ণ সঠিকভাবে বাংলা যেমন আমরা বলতে পারিনা ঠিক তেমনি  লিখতেও পারিনা।বাংলায় যখন কেউ লিখে নিজের অভিব্যক্তি  প্রকাশ করে,সেখানেও ধরা পরে অসংখ্য ভুল । বাংলা লিখতে গিয়ে বানান ভুল হওয়াটা এক প্রকার স্বাভাবিক। কারণ ছোটবেলায় সেই প্রাথমিক পর্যায় থেকে বাংলার চেয়ে সঠিক  ইংরেজি বানান চর্চাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে আসা হয়েছে।

পরীক্ষায় বাংলায় বানান ভুল হলেও ভালো নাম্বার পাওয়া যায় কিন্তু ইংরেজিতে একটা শব্দও যদি ভুল হয় তাহলে সে অনুপাতে নাম্বার কমতে থাকার কারণে ইংরেজি বানানের প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমরা অধিক সচেতন।

ইংরেজি ভাষাকে ছোটবেলা থেকে অতিরঞ্জিত করে  শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরার কারণে এখন আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে না পারি বাংলা ঠিকমতো লিখতে আর না পারি অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে। যতই দিন গড়াচ্ছে আমাদের ভাষার সৌন্দর্য দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে বাংলা বলাটাও এখন রীতিমতো একটা প্রথায় পরিণত হয়ে উঠেছে। 

নিজের মাতৃভাষা বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারার অন্য একটি বড় কারণ হলো বই পড়ার প্রতি বিমুখতা। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস যদি আমরা গড়ে তুলতে পারি তাহলে কথা বলার সময় বিশাল শব্দের ভান্ডার আমাদের মাথায় গেঁথে যায় এবং সঠিক শব্দ চয়নেও আর আমাদের সমস্যা হয় না।যার দরুণ ধার করা শব্দ ব্যবহার না করেই আমরা খুব সুন্দর ও সাবলীল ভাবে নিজের মাতৃভাষা দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি।

প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর অন্তর একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে।মানুষ যেমন চিরস্থায়ী নয় ভাষাটাও তেমনি চিরন্তন নয়। ভাষাটাও নিত্য পরিবর্তনশীল। কিন্তু পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত যদি থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বাংলা ভাষাটাও ক্রমে বিলুপ্তির তালিকায় স্থান পাবে। 

বাংলা ভাষায় দূষণ রোধ করতে হলে  আমাদের সেই প্রাথমিক পর্যায় থেকেই পুনরায় সংস্কার কাজ আরম্ভ করতে হবে। নিজেকে ও নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলা ভাষাকে আগে পরিপূর্ণভাবে শেখাতে হবে তারপরেই দ্বিতীয় ভাষার প্রতি অগ্রসর হতে হবে। প্রাথমিক স্কুল থেকেই যদি ভাষার বৈষম্যকে হ্রাস করা যায় তাহলে বাংলা ভাষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসাটা বাড়বে ও নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার জন্য অন্য ভাষা থেকে ধার করে শব্দের আমদানি করতে হবেনা।

মাতৃভাষার দূষণ রোধ করার আর একটি সহজ উপায় হলো প্রচুর বই পড়া। নিয়মিত বই পড়া মানে শব্দ ভান্ডারের মহাসমুদ্রে সিনান করা। প্রতিনিয়ত মস্তিষ্কে যখন নিত্য নতুন শব্দ সিঞ্চন করা হয় তখন আপনা আপনিই কথা বলার সময় অন্য ভাষার শব্দ এড়িয়ে চলা যায়। 

যে ভাষায় কথা বলার জন্য আমাদের এতোগুলো তাজা প্রাণ বলিদান দিতে হয়েছে সে ভাষার সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ  কাজটি করতে হবে আমদেরই।

লেখক: পুছাইনু মারমা
শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলা বিভাগ তৃতীয় বর্ষ

একুশেসংবাদ/অমৃ

Link copied!