AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার গল্প


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০২:১৪ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০
এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধার গল্প

মাঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ- একজন কিশোর মুক্তিযুদ্ধা।সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চরনবীপুর গ্রামের বীর সন্তান তিনি।কিশোর বয়সেই তিনি  দেশপ্রেমিক ও মুক্তিকামী ব্যক্তিত্ব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলামের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।

১৯৭০ সালে নির্বাচনী প্রচারনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে এক পথসভা করেন। যেখানে কিশোর বয়সেই তিনি শ্লোগান তোলেন, “বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো”“তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা”।সেদিন থেকেই তার হৃদয়ে অংকুরিত হয় জাতির পিতার আদর্শের বীজ।সেদিনই জাতির পিতাকে প্রথম দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন তিনি।


পাকিস্তানী শাসনের নিপীড়ন আর বৈষম্যের শিকার তখন দেশের প্রতিটি গ্রাম।সবার মত তার নিজ গ্রামের মানুষের মধ্যেও তখন স্বাধীনতার আকাংখা দানা বাঁধে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ ঐতিহাসিক সলংগা বিদ্রোহ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই জনপদের মানুষ রাজনীতি সচেতন ও স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে যা কিশোর বয়সেই তিনি প্রবল আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করতে থাকেন।

এই কিশোর যোদ্ধা সেদিন পাকিস্তানী শাসনের নিপীড়ন আর বৈষম্যের শিকার দেশের প্রতিটি গ্রামের মত আমাদের গ্রামের মানুষের মধ্যেও তখন স্বাধীনতার আকাংখা দানা বাঁধে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ ঐতিহাসিক সলংগা বিদ্রোহ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই জনপদের মানুষ রাজনীতি সচেতন ও স্বাধীনতার চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে যা কিশোর বয়সেই আমি প্রবল আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করতে থাকি।

মেধাবী ছাত্র হিসেবে গ্রামবাসী তাকে ভালবাসতেন, বেশ গুরুত্বও দিতেন।বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ তিনি রেডিওতে শুনেন সাথে গ্রামের লোকজনকেও ডেকে এনে শোনান।এতে গ্রামবাসীর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রাণঢালা সমর্থন ও ভীষণ আবেগ লক্ষ্য করেন তিনি। 

পরবর্তীতে ২৫শে মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানী বাহিনীর নারকীয় গণহত্যা, বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া, ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, পূর্ব পাকিস্তানে “যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে” প্রতিরোধ যুদ্ধের আবহ যুদ্ধে অংশগ্রহণের আকাংখা প্রজ্জ্বলিত করে তার কিশোর মনে । 

এই আকাংখা আরও তীব্র হয় যখন তিনি শুনতে পান সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এর চৌড়াশিকা হাটে পাকবাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে  তিন শতাধিক বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে।বাদ যাননি তার প্রাইমারী স্কুলের প্রিয় শিক্ষক মোঃ আব্দুস সামাদও।ঘটনাটি ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে তাকে।মুক্তিযুদ্ধে যাবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন এই কিশোর।

গ্রামে হাটে মাঠে ঘাটে স্বাধীনতার পক্ষে  মিছিল মিটিং করতে থাকেন।আর সুযোগ খুঁজতে থাকেন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার।কিন্তু বিপাকে পরেন বয়স নিয়ে।বয়স কম হওয়ায় তাকে যুদ্ধে নিতে  বিশেষ আগ্রহী হলেন না কেউই।তিনিও আশা ছাড়লেন না।

হঠাৎ স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এসে যায় তার।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মরত এক সিপাহী তার গ্রামের বাড়ীতে ফিরে আসেন।তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি  আব্দুছ ছালাম আজাদকে ভারতে নিতে আগ্রহী হন।যাতায়াতে খরচের ৫০.০০ টাকা তিনি জুগিয়ে ছিলেন ঘরের সিন্দুক থেকে ১টি সোনার আংটি চুরি করে তা বন্ধক দিয়ে।জুলাই মাসের এক রাতে সবার অজান্তে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেন তিনি।পার্শ্ববর্তী বলরামপুর হুড়াসাগর নদীর ঘাটে একটি নৌকায় তাদের ৬/৭ জনের একটি দল ৪/৫ দিন অপেক্ষা করার পরও নৌকা ছাড়লো না।এরই মাঝে বাধে বিপত্তি।স্থানীয় রাজাকার খবরটি আর্মিকে পৌছে দেয়।এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে তার মামা হোসেন আলী দারোগা  সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান এই সাহসী কিশোরকে।এ যাত্রায়  যুদ্ধে যাওয়া হলো না আব্দুছ ছালামের। 

তবে কিছুদিন পরই সুযোগ নিজেই এসে কড়া নাড়ে তার দরজায়।  জনাব ফেরদৌস আলম ফুল (বর্তমানে শাহজাদপুর উপজেলাস্থ বেলতৈল ইউপি চেয়ারম্যান) এর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধার একটি দল  সমবেত হয় তাদের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে যাবেন তারা।তখনই কিশোর আব্দুছ ছালামসহ আরো কয়েকজন যোগ দেন এই দলে।মোট ১৩ জনের এই দলটি ০৯/১০/১৯৭১ তারিখে গ্রাম ত্যাগ করে  রওনা হন যুদ্ধে।তাদের নেতৃত্বে ছিলেন কমান্ডার আঃ কাদের।

১০ দিন ১০ রাত্রি নানারকম প্রতিকুলতা  কাটিয়ে অবশেষে  ছোট এই দলটি আসামের মানিকার চর ভারতে পৌঁছে।বিভিন্ন রোগের টিকা ও প্রতিষেধক দিয়ে সেখানে জয় বাংলা অফিসে নামভুক্ত করা হয়।এবার তিনি ১০৬ জনের একটি দলে দলভূক্ত হন।

২৫/১০/১৯৭১ তারিখে সন্ধা ৭টায় মালঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে নামভুক্ত হন তিনি।২৭/১০/১৯৭১ তারিখে অধ্যাপক আবু সাইদের (প্রাক্তন তথ্য প্রতিমন্ত্রী)ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং শুরু করেন এই কিশোর।১৫ দিন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তাদের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিরামপুর ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়।১৬/১১/১৯৭১ তারিখে মেডিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ৫টি বিভাগে ট্রেনিং শুরু করি এবং নির্ধারিত কোর্স সমাপ্ত করেন এই কিশোর।০১/১২/১৯৭১ তারিখে ট্রেনিং শেষে ৭নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নুরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এই দুঃসাহসী কিশোর।

দেশ স্বাধীনের পর তালগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন এই অকুতো ভয় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা।কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিবাদর্শের সৈনিক - ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী হিসেবে ভুমিকা রাখেন তিনি।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট তারিখে নৃশংসতম হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে জাতির পিতা স্বপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন।হতবিহম্বল হয়ে পরে পুরো দেশ।তখন মাঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র। ’৭৫ পরবর্তী অবস্থায় আওয়ামী লীগের পক্ষে তখন প্রকাশ্যে কোন বক্তৃতা বা ঘোষণা দেয়া দুরূহ ছিল।সেসময়ও অকুতোভয় এই যোদ্ধা আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তৃতা ও ঘোষণায় তিনি ছিলেন প্রথম সারির যোদ্ধা।

কৈশোর থেকেই পাকিস্তানীদের শাসন শোষণের বিরোধিতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি-ছাত্র সংসদ নির্বাচন সর্বোপরি ’৭৫ পরবর্তী বিরুপ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে স্থানীয় জনসাধারণ ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সভাসমাবেশ করার প্রধান প্রাণশক্তিই ছিল মহান মুজিবের আদর্শের প্রেরণা যা পেশাগত জীবনেও তাকে দেশের জন্য কাজ করায় দিক নির্দেশনা দিয়ে চলেছে। 

একুশে সংবাদ/তাশা

Link copied!