AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

যতক্ষণ না শীতবস্ত্র আসছে, ততক্ষণ মঞ্চে বসে থাকব: মমতা


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮:০০ পিএম, ২৯ নভেম্বর, ২০২২
যতক্ষণ না শীতবস্ত্র আসছে, ততক্ষণ মঞ্চে বসে থাকব: মমতা

সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে থেকে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। কিন্তু সেই শীতবস্ত্র মঞ্চে থাকার বদলে তা পড়ে রয়েছে ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিস (বিডিও) অফিসে। আর তা শুনেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মমতা।

 

প্রথমে জেলা প্রশাসককে ডেকে তিরস্কার করে বললেন, তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। এরপর বিডিও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মাঝপথেই ভাষণ থামিয়ে বসে পড়েন মমতা। তিনি বলেন, যতক্ষণ না শীতবস্ত্র আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি মঞ্চে বসে থাকব।

 

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হিঙ্গলগঞ্জের শামশেরনগরে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেইমতো ওই শীতবস্ত্র আগে থেকেই জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এদিনের অনুষ্ঠান থেকে মমতা শীতের পোশাক চাইতেই মঞ্চে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তারা একে অপরের দিকে তাকান। জেলা প্রশাসক বলেন, ওগুলো বিডিও অফিসে রাখা আছে, আর তা শুনেই ক্ষোভ ফেটে পড়েন মমতা।


অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই মমতা বলেন, আজকে প্রায় ৬০০ কোটি রুপির প্রকল্প দিয়ে দেয়া হয়েছে এই জেলায়। শুধু তাই নয় আমি আজকে আসব বলে ১৫ হাজার শীতবস্ত্র কিনে এনেছি। ৫ হাজার সোয়েটার, ৫ হাজার কম্বল ও ৫ হাজার চাদর। এটা যেন মানুষ ঠিকমতো পায়। এ ব্যাপারে আমি নিজেও নজর রাখব।

 

এসময় উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলা প্রশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, শীত বস্ত্র কাকে দিয়েছেন? এই শীতবস্ত্র কোথায় রাখা হয়েছে? পরিষ্কার করে বলুন কোথায় রাখা আছে? জেলা প্রশাসক জানান, এই শীতবস্ত্র বিডিও অফিসে আছে।

 

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান কেন এগুলো বিডিও অফিসে পড়ে রয়েছে? অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক তখন হাত নেড়ে তাদের অভিযোগের কথা জানাতে থাকেন। এরপর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন বিডিওকে এক্ষুণি বলুন ওই শীতবস্ত্র এই মঞ্চে এনে হাজির করতে। আমি এখানে অপেক্ষা করব।

 

পরিস্থিতি গম্ভীর দেখে ততক্ষণে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এসে দাঁড়ান মুখ্য সচিব এইচ কে দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্র সচিব বি পি গোপালিকা। তারা সবাই মুখ্যমন্ত্রীর মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীও নাছোড়বান্দা।

 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিনিস দিয়েও যদি না পৌঁছয় আমার খুব গায়ে জ্বালা করে। পুলিশে একটা অন্যায় করলে দোষটা পরে আমার ঘাড়ে। সরকার একটা অন্যায় করলে গালাগালি খাই আমি। অথচ আমার কোনো দোষই নেই। আমি এখানে আসব বলে গত তিন দিন ধরে কম্বল, চাদর ও সোয়েটারগুলো কিনে এনেছে। আর এসে দেখছি ফাঁকা। এরপর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন, আমি তোমায় বলছি এগুলো নিয়ে এসো। আমরা বলেছিলাম এই শীতবস্ত্রগুলো সরাসরি মানুষের হাতে পৌঁছে দেব কিন্তু তারা কেন শোনেনি আমি বিডিও অফিসে রাখার জন্য এগুলো পাঠাইনি। আমি তোমার কাছে এটা আশা করিনি। আমি এটা দিতে এসেছিলাম। তোমরা যদি এটুকু অনুষ্ঠান হও ঠিকঠাক করে না করতে পারো সে ক্ষেত্রে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি ডিএম, বিডিও, থানার কর্মকর্তারা ঠিকমতো কাজ না করেন তবে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

মমতা বলেন, ১৫ হাজার শীতবস্ত্র একসঙ্গে দিতে হয়তো অসুবিধা হয় সেজন্য ক্যাম্প করে এগুলো দেয়া যেতে পারত। যদি কম পড়ে থাকে তবে আমি দেখে নিতাম। এখান থেকে কয়েকটি শীতবস্ত্র দেয়া যেতেই পারতো। এরপরই অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, যতক্ষণ এই শীতবস্ত্র না আসছে আপনারাও বসুন আমিও বসলাম। মমতার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দর্শক আসন থেকে তখন হাত নাড়িয়ে মমতাকে সমর্থন জানানো হয়।

 

এরপর প্রায় ১৭ মিনিট মঞ্চে বসে থাকেন মমতা। এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। মমতার পাশে থাকা রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বসিরহাটের সাংসদ নুসরাত জাহান রুহি, অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল, সন্দেশখালীর বিধায়ক সুকুমার মাহাতোসহ দলের অন্য নেতাদের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।

 

তারপর এক হাজার শীতবস্ত্র মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। এরপর এক এক করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের হাতে তা তুলে দেয়া হয়। এই শীতবস্ত্র প্রদানের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মমতা এ-ও ঘোষণা দেন, কিছু শীতবস্ত্র আমি দিয়ে গেলাম, বুধবার বেলা ১২টার সময় যারা শীতবস্ত্র চান এখানে শিবিরে এসে লাইন দিয়ে নিয়ে যাবেন। যদি ১৫ হাজারের জায়গায় ২০ হাজার শীতবস্ত্র লাগে তা-ও আমি দেব। গোটা বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় বিধায়কদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

 

তার অভিমত, মানুষ যেন পায়। কারণ মানুষ না পেলে আমার খুব রাগ হয়, আবার মানুষ পেলে আমার খুব খুশি হই। এটা তাদের বাঁচার লড়াই। এর আগে হিঙ্গলগঞ্জ বন বিবির মন্দিরে পুজো দেন মমতা। সেখানে বৃক্ষরোপণও করেন তিনি।

 

এদিন সরকারি অনুষ্ঠান থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম তোলার আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার অভিমত ভোটার তালিকা আপনাদের অধিকার। এই তালিকায় নাম না থাকলে আপনাদের নিজেদের পরিচয়ও থাকবে না।

 

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী অঞ্চল নিয়ে ‘সুন্দরবন’ নামে একটি নতুন জেলা ঘোষণা করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, বিভিন্ন সরকারি কাজে আপনাদের অনেক দূরে যেতে হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই নতুন জেলার সিদ্ধান্ত। নদী ভাঙন রোধ এবং সুন্দরবনকে বাঁচাতে কেন্দ্রের কাছে মাস্টার প্লান জমা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

 

একুশে সংবাদ/আ.বা/পলাশ

Link copied!