AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এমপি আজীম হত্যায় সন্দেহভাজনদের সম্বন্ধে যা জানা যাচ্ছে


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
১১:৩৭ পিএম, ২৪ মে, ২০২৪
এমপি আজীম হত্যায় সন্দেহভাজনদের সম্বন্ধে যা জানা যাচ্ছে

ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন বাংলাদেশি–আমেরিকান আক্তারুজ্জামান শাহীনের কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে তিনজন আছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে আর দুজনকে আটক করেছে কলকাতা সিআইডি।

ডিবি বলছে, ব্যবসায়িক ক্ষোভ থেকেই আজীমকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছে তারা। হত্যার পর তার মরদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করে মরদেহ গুম করে ফেলা হয়েছে। তবে আজীমকে যে স্থানে হত্যা করা হয়েছে, কলকাতার নিউটাউনের সেই অ্যাপার্টমেন্টটি চিহ্নিত করতে পেরেছে পুলিশ। যদিও এখনো আজীমের মরদেহের কোনো সন্ধান মেলেনি।

ডিবি হেফাজতে থাকা তিন সন্দেহভাজন হলেন আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সেলেস্তা রহমান ও তানভীর ভূঁইয়া। শুক্রবার তিনজনকেই আটদিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত। 

অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশের হেফাজতে আছেন জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম। এর মধ্যে শুক্রবার জিহাদের ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের একটি আদালত। কলকাতা পুলিশ বলছে, জিহাদ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আজীমের মরদেহ থেকে হাড় ও মাংস আলাদা করার কাজটি মূলত সে–ই করেছে। তবে সিয়ামকে গ্রেপ্তারের তথ্য একবার দেওয়া হলেও তাঁর বিষয়ে এর পর আর কিছুই জানায়নি কলকাতা পুলিশ।

আক্তারুজ্জামান শাহীন
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, মূলত শাহীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিরোধের জেরেই এমপি আজীমকে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে ডিবি যে আবেদন করেছে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এমপি আজীমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্ক আছে। ব্যবসায়িক লেনদেনসহ কিছু বিষয় নিয়ে আজীমের ওপর শাহিনের ক্ষোভ ছিল, যা তিনি (আজীম) জানতেন না।

গত বুধবার ভারতীয় সিআইডি জানিয়েছিল, যে অ্যাপার্টমেন্টে আজীম খুন হয়েছেন, সেটির মালিক সঞ্জীব রায়। শাহীনই তাঁর কাছ থেকে এটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভা মেয়র সেলিমের ছোট ভাই। সেলিমের সঙ্গে আজীমের ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সে সূত্র ধরেই শাহীনের সঙ্গেও আজীমের পরিচয় হয়।

ধারণা করা হচ্ছে আখতারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনাতেই আজীমকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে পলাতক শাহীন।

আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া
ডিবি আদালতে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করেছে, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে আজীমের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল। এই হত্যাকাণ্ডে অন্যতম সন্দেহভাজন শিমুল ছিলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তিনি ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ও মাহমুদ হাসান নামেও পরিচিত। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদয় গ্রামে।

শিমুলের বিরুদ্ধে এলাকায় হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ অন্তত আটটি মামলা আছে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি দীর্ঘদিন বাড়ি আসেন না।

শিমুলের বড় ভাই মোস্তাক মোহাম্মদ বকুল ভূঁইয়া বলেন, ‘গত প্রায় ২৯ বছর ধরে শিমুল বাড়িতে আসে না এবং তার সাথে আমার দেখা হয় না। শুনেছি সে ঢাকা কিংবা সিলেটে থাকে। কয়লার ব্যবসা করে। তবে ব্যবসায়িক কাজে মাঝে মাঝে ভারতে যায় শুনেছি।’

শিমুলের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবুল কাশেম, তাঁর বড় ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদল ও ছোট ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিমুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই তিনি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

ফুলতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, শিমুলের বিরুদ্ধে যশোর সদর, অভয়নগর ও ফুলতলা থানায় ৮টি মামলার রেকর্ড আছে। এর মধ্যে দুটি হত্যা এবং চাদাঁবাজি, অপহরণ ও বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে।

তানভীর ভূঁইয়া
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আরেক সন্দেহভাজন তানভীর ভূঁইয়া হলেন শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা। তাঁর বাবা হানিফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে লাকি ভূঁইয়া শিমুলের বড় ভাই।

সেলেস্তা রহমান
এ ঘটনায় ঘুরে ফিরে আসছে সেলেস্তা রহমানের নাম। জানা গেছে, তাঁর গ্রামে বাড়ি টাঙ্গাইলে এবং তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা। তিনি আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী বলে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে।

শুক্রবার সেলেস্তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে হত্যার সময় তিনি কলকাতার সেই অ্যাপার্টমেন্ট উপস্থিত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। অবশ্য ডিবির দাবি, আজীমকে হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন সেলেস্তা।

জিহাদ হাওলাদার
এ মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহভাজন হিসেবে মনে করা হচ্ছে জিহাদ হাওলাদারকে। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে, আনোয়ারুল আজীমকে খুনের জন্য কসাই পেশায় থাকা জিহাদ হাওলাদারকে ভাড়া করেছিল খুনিরা। আজীমকে হত্যার পর তাঁর হাড় ও মাংস আলাদা করার কাজটি করেছিল জিহাদ।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ জানায়, জিহাদ হাওলাদার একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তাঁর বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানায়। তবে জিহাদ বসবাস করতেন ভারতের মুম্বাই শহরে। সেখানে একটি মাংসের দোকানে কসাইয়ের কাজ করতেন তিনি। হত্যার দুই মাস আগে জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকতায় আনে মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি কলকাতা পুলিশের।

জিহাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের শুরুর দিকে যশোরের একটি মামলায় বাড়িতে ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। এর পর থেকে জিহাদ ও তাঁর বড় ভাই জাহেদ হাওলাদার পলাতক। কয়েক মাস পর ফোন করে জিহাদ তাঁর স্ত্রীকে জানান তিনি ভারতে রঙের কাজ করছেন। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। জিহাদের বিরুদ্ধে দীঘলিয়া থানায় ডাকাতি, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

ভারতের কলকাতায় আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ড এখন সারা দেশেরই আলোচিত বিষয়। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান তিনি। ১৩ মে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে জানান, দিল্লি যাচ্ছেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। কলকাতা পুলিশ বুধবার জানায়, আজিম খুন হয়েছেন। একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানান, সংসদ সদস্য আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

আনোয়ারুল আজীম ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর  স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসিন শেফালী ও ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন কালীগঞ্জে থাকেন। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা দুজনেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের বড় মেয়ে অরিনের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি আলাদা থাকেন।

এ ঘটনার পর বুধবার সংসদ সদস্য আজীমের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘গত ১৩ মে বাবার ইন্ডিয়ান সিম নম্বর +৯১৭০৬৩২১৪৫৬৯ থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি ম্যাসেজ আসে, “আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিব।” এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি ম্যাসেজ আসে। সেই ম্যাসেজগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, ১৩ মে তারিখেই কলকাতায় হত্যা করা হয় আজীমকে।

Link copied!