নদীর স্রোতে ভাসমান হাঙ্গরের যে রোদ্দুর সেটুকুই যেন তাঁর কাছে জীবন স্বর্গ। ঘৃনা -ক্রোধ- ভালোবাসা -জীবনকে ভোগ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সব মিলে এক হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার যে বিচিত্র রুপ সেই রূপের কথক মারুফা গাফ্ফার। স্মৃতি কথা মানে হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
'ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা নিতান্ত সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি তারি দু-চারটি অশ্রু জল। নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ। অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ…'ঠিকযেন এমনি একটি ব্যাপার। আমার একটা কবিতা আছে "শৈশব"সেটা এমন " হাওয়া মিঠাই পাড়া ছাড়লেই শৈশব শেষ হয় না দিন যাপনের পথে পথে শৈশব ভাঙ্গিয়েই তো জীবন চলে ঠিক যেন মেঘলা দিনে ছেঁড়া ছেঁড়া রোদ্দুর।"
জীবন যাপনের পথে যখন কিনা পরিনত হই আমরা তখনসংসারের চোরাবালি থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চিন্তা করতে গেলেই স্মৃতি হাতরে কাঁদি হাসি আবেগাপ্লুত হই। স্মৃতি নিয়ে ভাবা মানেই সকালের বৃষ্টিভাঙা রোদে মনে হয় যেন খাবি খাচ্ছি, আনন্দে। হঠাৎ করেই কেমন ভ্যাপসা গুমোট পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে যাই। একটা স্পট ঘুরে টুরে আসার অমোঘ আনন্দ নিয়ে ফেরা যায় আবার দৈনন্দিন রুটিন মাফিক জীবনে।
বাস্তবতার গোয়ালে জীবনযখন ওষ্ঠাগত, তখন বৈভব যদিও ধরা দেয় হাতের নাগালে। তবুও যেন সেটাকে উপোভোগ করবার মতো উচ্ছ্বাস কোথায় যেন মনমরা হয়ে ঘাপটি মেরে বুকের কোনে লুকিয়ে থাকে। যতই ঝকঝকে সুইমিং পুলে পা দাপিয়ে জলকেলি করি না কেন। শৈশবের পুকুর জলের মতো ততটা আপন মনে হয় না। যতই বিশাল বনে বাঁদারে যাই না কন মনের মাঝে বন্য একটা গ্রামের ভিতরে নিরিবিলি পরিবেশ, হৈহট্টগোলকে যেন প্রতি পলেই মিস করি।
সবকিছু এমনিতেই মনের মতো হলেও তারপর মনের টানে শৈশবের মেঘ টেনে আনা এলো মেলো বাতাসে মন ভেজানো মনের টানে চোখে বৃষ্টিও নামানো। কেবলি স্মৃতি ভাবনা বা স্মৃতিচারণেই সেই অনুভূতি আমরা দিনের পর দিন অনুভূতির চোয়ালে ফেলে জাবর কাটতে পারি। " "জীবন নদীর "কিছুটা অংশ পড়েই বহুদিন পরে যেন স্বপ্নের মতো ছুঁয়ে গেল। আমিও স্মৃতিকাতর হোলাম তারপর ধীরে সুস্থে আরাম আয়েস করে নাস্তাপানি সেরে প্রাণটাকে জুড়িয়ে নিয়ে ফিরে এলাম। এই স্মৃতিটাকে টাটকা রাখতে আর আবেশ ছড়াতে আপনাদের মাঝে।
গতকালের ডাকেই আমি বইটা হাতে পেয়েছি। এখনো পুরোটা পড়া শেষ হলো না, তাতেই দুকলম না লিখে পারলাম না। আমি জানি জীবিত প্রাণ একটি বকুলের অস্তিত্ব খুঁজে ফেরে ভ্রান্তিহীন হয়ে,আর এটাও সত্য যতোদিন বকুল থাকে তার চেয়েও বেশী থাকে তার ঘ্রান। মানুষও ঠিক তাই। কর্মে ও কৃতিতে বাঁচে যতোটা তততটা হয়ত হায়াতে বাঁচে না। বইটির লেখেক একজন আদ্যপান্ত অমাইক মানুষ। সরলতার প্রতিভা আদরের আধুলি ছড়াতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।
তাঁর লেখা ঠিক তাঁরই মতোই প্রাণবন্ত সাবলীল ও মধুর আকুতি ভরা বর্ননা। বইটি পাঠক হৃদয়ের পড়বার একাগ্রতাকে উসকে দেয় শেষ তক গিয়ে থেমে যাবার জন্য। বইটির কাঠামো ভীষন ভালো হয়েছে। বাঁধাইও রুপসজ্জায়। বইটি প্রকাশ করেছেন বিবর্তন প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন তুষার অপু। "জীবন নদীর "র লেখক মারুফা গাফ্ফার অত্যন্ত গুনী। তাঁর লেখার মাঝে শব্দ বেষ্টনির প্রাচীর কতটা মজবুত বইটিপাঠ করলেই পাঠক বুঝতে পারবেন। বইটির মূল্য ধরেছেন দুইশত বিশ টাকা। আর বইটির ফ্ল্যাপ কথা লিখেযিনি নদীর জীবনের সাথে চিরকাল নিজের অস্তিত্ব জিইয়ে রাখার প্রয়াস করেছেন, তিনিও একজন মিঠে স্বভাব এবং প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন গুনী লেখক রোজি হোসেন। যার ফ্ল্যাপ কথনের ভঙ্গী অসামান্য। অল্পকথায় যিনি লেখকের জীবনের গভীর অনুভূতি গুলো পেন্সিল স্কেচ করেছেন অনবদ্য ভাবে। বইটি ভালো লাগবে সবার। বইটিশুভকামনা লেখকের প্রতি। উনার লেখক জীবনচর্চা তরান্বিত হোক এই কামনাই করি। জয়তু জীবন নদী। বয়ে যাক পাঠকের মনে মনে।
অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি
আপনার মতামত লিখুন :