মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে যুবকের ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে তুমুল আলোচনার পর এবার শাশুড়ির জন্য পাত্র চেয়ে পাত্র-পাত্রীসংক্রান্ত একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়েছেন পুত্রবধূ।
পোস্ট দেয়ার দুই দিনের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগও হয়েছে এবং তাদের মধ্যে অন্তত দুজনকে ভালো লেগেছে। এখন কথাবার্তা চলছে। তিনি আশা করছেন, চার হাত এক করে দিয়ে শাশুড়ির জীবনের একাকিত্ব ঘোঁচাতে পারবেন তিনি।
সেই তরুণী জানিয়েছেন, তার শাশুড়ির একাকিত্বের বিষয়টি চিন্তা করে তার স্বামীর সাথে আলোচনা করেই এই পোস্ট দিয়েছেন। আর এর দুই দিন পর তার শাশুড়িকে জানান। শুরুতে তিনি আবার বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তবে পরে দুজন মিলে রাজিও করান।
ফেসবুকে পোস্ট দিলেও গণমাধ্যমে আপাতত তার বা শাশুড়ি- কারও নাম প্রকাশ করতে চাইছেন না সেই তরুণী। জানিয়েছেন, এটি তার শাশুড়ির ইচ্ছা। সেটিকেই সম্মান জানাচ্ছেন।
পাত্র-পাত্রী খুঁজতে ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফেসবুক গ্রুপ ‘বিসিসিবি মেট্রিমনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’। সেখানে নিজের জন্য, ভাইবোনের জন্য, ছেলেমেয়ের বা অন্য স্বজনের জন্য পোস্ট দেয়া হয় অহরহ।
শাশুড়ির জন্য পাত্র চেয়ে পোস্টের পেছনেও কারণ অনেকটাই একই রকম। এক যুগেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছেদ হয়েছে বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী নারীর। একমাত্র ছেলেকে বিয়ে দেয়ার পর তিনি অনেকটাই নিঃসঙ্গ। ছেলে ও পুত্রবধূ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন, তখন তিনি আরও একা হয়ে পড়বেন।
পরে ছেলে ও পুত্রবধূ মিলে ঠিক করলেন, এই নিঃসঙ্গতা কাটাতে হবে।
পোস্টদাতা পুরান ঢাকার বাসিন্দা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি পোস্টটি দেন সেই গ্রুপে।
তখনও তার শাশুড়ি বিষয়টি জানতেন না। শাশুড়িকে জানান দুই দিন পর।
সেই তরুণী বলেন, ‘আগে জানালে হয়তো উনি রাজি হতেন না। কারণ আমি আর আমার হাজবেন্ড মিলে তাকে রাজি করাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে।’
কোন ভাবনা থেকে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শুধু বাবারাই দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। আমরা এটাই স্বাভাবিক ধরে নিই। কিন্তু একজন নারীরও যে একাকিত্ব আছে, একটা সময় গিয়ে তার সঙ্গীর দরকার হয়, সেটা আমরা ভুলে যাই।
‘বেশ কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছিলাম আম্মু (শাশুড়ি মা) একটু চুপচাপ থাকেন। ২০০৯ সাল থেকে আমার শ্বশুরের কাছ থেকে তিনি আলাদা। ওনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আম্মুর সব কিছুই ছিল ছেলেকেন্দ্রিক। ছেলে ছাড়া অন্য কিছু কখনই ভাবেননি। তার জীবনের অনেকটা সময় ছেলের কথা ভাবতে গিয়ে স্যাক্রিফাইস করেছেন। আমরা চাই না উনি আরও স্যাক্রিফাইস করুক।’
এই ফাঁকে পোস্টদাতা তরুণী জানিয়ে রাখছেন, শাশুড়ির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরেকটি সংসার করছেন।
এই উদ্যোগে পরিবারের অন্য সদস্যের সম্মতি আছে কি না- জানতে চাইলে সেই তরুণী বলেন, ‘মূলত তার ছেলেই সব। প্রথমদিকে ওর একটু সমস্যা ছিল। পরে রাজি হয়েছে।
‘উদ্যোগটা আমিই নিয়েছি। কারণ একটা মেয়ে হয়ে আমি বুঝি, মায়েরা বলতে পারেন না। কিন্তু একাকিত্ব তাদেরও অনেক কষ্ট দেয়।’
শাশুড়ির জন্য কেমন পাত্র চান, সেটিও জানিয়ে দিয়েছেন সেই তরুণী। তিনি লেখেন, ‘সামাজিক মিশুক প্রকৃতির একজন মানুষ, যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যাবে, বিশ্বাস করা যাবে, আমাকে বুঝবে আর ভুলগুলো শুধরে দেবে। নিজেকে বুঝতে দেবে।’
পাত্রের কেমন পারিবারিক আর্থিক অবস্থা চাইছেন, সে বিষয়ে সেই তরুণী উল্লেখ করেন, ‘পারিবারিক অবস্থান মধ্যবিত্ত হলেও সমস্যা নাই, বেশি ধনী হলেও সমস্যা নাই।
‘সরকারি চাকরি হলে ভালো হয়, তবে বিদেশি সিটিজেনশিপপ্রাপ্ত হলে আরও ভালো হবে।’
কেউ কি যোগাযোগ করেছেন- জানতে চাইলে সেই তরুণী বলেন, ‘অনেকেই যোগাযোগ করছেন। এর মধ্যে দুজনকে আমার ভালো লেগেছে। যতক্ষণ না হচ্ছে, কিছু তো বলা যায় না। তাই এখনই সবটা সামনে আনতে চাই না। আমার এই উদ্যোগ সফল হলে আমি নিজেই সবাইকে জানাব।’
বিয়েটা হয়ে গেলে নাম, ছবি- সবই প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়ে দেন সেই তরুণী।
একুশে সংবাদ.কম/জা.হ
আপনার মতামত লিখুন :