AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

গণমাধ্যমের ওপর মোদি সরকারের হস্তক্ষেপ


Ekushey Sangbad
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৭:০২ পিএম, ১৩ আগস্ট, ২০২৪
গণমাধ্যমের ওপর মোদি সরকারের হস্তক্ষেপ

ভারতে সংবাদ সংগ্রহ ও সম্প্রচার বন্ধ এবং সাংবাদিকদের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করতে বার্তাকক্ষে সরকারী কর্মকর্তাদের হানা দেয়ার ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। এমন ন্যক্কারজনক কাজ মুক্ত গণমাধ্যম ও অবাধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যারা সোচ্চার তাদের শিরদাঁড়ায় কাঁপন ধরিয়ে দেয়। দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন মোদি সরকার জাতীয় স্বার্থের ইস্যু তুলে ধূম্রজাল তৈরি করে এবং নিয়মিতভাবে সমালোচনাকারী গণমাধ্যমের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। 

২০০২ সালে গুজরাটে ঘটা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জড়িত থাকার বিষয়ে ২০২৩ সালে একটি আলোচিত প্রামাণ্যচিত্র ‍‍`ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন‍‍` সম্প্রচারের পরপরই ভারতে বিবিসির প্রধান কার্যালয়ে হানা দেয় দেশটির আয়কর ও অনুসন্ধান বিভাগের প্রতিনিধিদল। এরপর দফায় দফায় অনুসন্ধান এবং বার্তাকক্ষের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটিকে ভারতীয় কার্যালয় বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়া এবিসির বিদেশি প্রতিবেদককে বহিষ্কার করা হয়। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভারতজুড়ে কৃষক আন্দোলন দমানোর সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করায় দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) মাধ্যমে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দেশীয় গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা হয়।

তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই, যখন গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বছর ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৬১ তে থাকে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ডিপ্লোমেটে প্রকাশিত সিমরান আগারওয়ালের প্রবন্ধে এমনটি উঠে এসেছে। তবে এ নিয়ে ভারত সরকার উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে না। পশ্চিমাদের এমন সব প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিয়ে মোদি সরকার মনে করে এসব নিরপেক্ষ নয়।

আইনের এই সমস্ত ব্যাপক প্রয়োগ প্রশ্ন জাগায়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কি ভারতের জাতীয় স্বার্থ নাকি সরকারের স্বার্থের জন্য হুমকি। নতুন নতুন নীতিমালা এবং ধূম্রজাল তৈরির মাধ্যমে সমালোচনাকারী গণমাধ্যমকে শায়েস্তা করে থাকে নয়াদিল্লি সরকার। ঔপনিবেশিক যুগের আইনগুলোকে সংস্কারের অজুহাতে জবরদস্তিমূলক নতুন নতুন আইন তৈরি করছে মোদি সরকার।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের গণমাধ্যম মোদি সরকারের চাপে উসকানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। গত ৫ আগস্ট উত্তাল গণআন্দোলনের মুখে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর মোদি সরকারের এমন তৎপরতা সবার নজরে এসেছে।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কোথাও কোথাও অস্থিরতা চলছে। এরই মধ্যে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও পুলিশের কর্মবিরতি অস্থিরতাকে অনেকক্ষেত্রে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দেশের কয়েক স্থানে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, এমনকি লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। এর বেশিরভাগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক, আবার কিছু ঘটনা সুযোগসন্ধানী অপশক্তি ঘটিয়েছে। তবে এ সহিংসতা ঘিরে ভারতের কতিপয় গণমাধ্যম প্রচার করছে উসকানিমূলক প্রতিবেদন। আর ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), টিকটক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে ভয়াবহ প্রোপাগান্ডা ও গুজব। সাম্প্রদায়িক রং মাখিয়ে বানানো এসব গুজব-প্রোপ্রাগান্ডার ঢেউ এসে পড়ছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সোশ্যাল প্লাটফর্মেও। ফলে অস্থিরতা আরও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে।

স্রোতের মতো ছড়িয়ে পরা এসব অসত্য-বানোয়াট সংবাদ শনাক্তে হিমশিম খাচ্ছেন ফ্যাক্ট-চেকাররা। বেশিরভাগ প্রোপাগান্ডাই যে ভয়াবহ এবং পরিকল্পিত সে কথাও বলছেন কেউ কেউ। রিউমার স্ক্যানার, ডিসমিসল্যাবের মতো ফ্যাক্ট-চেকিং বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমও এসব প্রোপাগান্ডা-গুজব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রিউমার স্ক্যানার গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাতে জানায়, তারা ভারতীয়দের ছড়ানো ২০টিরও বেশি গুজব শনাক্ত করেছে। পরে শনিবার (১০ আগস্ট) জানা যায়, ভারতীয়দের ছড়ানো মারাত্মক পর্যায়ের গুজব শনাক্ত হয়েছে ৩০টির বেশি।

তারা জানায়, গত ৭ আগস্ট বিকেলে এক্সে মোহন গৌড়া নামে আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ-আসাম সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড় তৈরি হয়েছে’। অথচ যে ছবি পোস্ট করা হয়েছে, সেটি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুই দেশে বসবাসরত বিচ্ছিন্ন আত্মীয়দের মিলনমেলার ছবি।

৭ আগস্ট বিকেলেই এক্সে সালওয়ান মোমিকা নামে আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ইরাকের মতো হিন্দু নারীদের বন্দি করে বিক্রি করা হচ্ছে’। অথচ ওই ভিডিওটি বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেত্রীকে বেঁধে রাখার সময়ের।

সেদিন সন্ধ্যায় ‘দ্য জয়পুর ডায়লগস’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হচ্ছে। তারা গণহত্যার ঝুঁকিতে’। অথচ ওই ভিডিও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিচারের দাবিতে মৌন প্রতিবাদী নাটকের।

৭ আগস্ট সকালে ‘সুদর্শন নিউজ’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ‘লক্ষ্মীপুরে রাজন চন্দ্র নামে এক হিন্দুর দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিও লক্ষ্মীপুরেরই মজুচৌধুরীর একটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের।

৬ আগস্ট ‘র‌্যান্ডমসেনা’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, ‘আরেকটি হিন্দু মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিও সাতক্ষীরার রাজপ্রাসাদ রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনার।

৬ আগস্ট দুপুরে ‘বাবা বেনারস’ নামে ভেরিফায়েড এক্স আইডিতে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘রংপুরে দুই শিশুসহ ৬ নারীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারা হয়েছে’। অথচ রংপুরে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

‘বাংলাদেশের হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে’। অথচ ওই ভিডিওটি মাশরাফির বাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনার। তাছাড়া, লিটন নিজে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তার বাড়িতে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তিনি নিরাপদে ও ভালো আছেন।

৬ আগস্ট মধ্যরাতে ওই একই আইডিতে আরেকটি ভিডিও দিয়ে পোস্টে দাবি করা হয়, ‘হিন্দু বৃদ্ধকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।’ অথচ ওই ভিডিওটি ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম হিরণের মরদেহের।

এছাড়া চাঁদপুরের আলোচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের মরদেহের ভিডিওকে প্রচার করা হয়েছে হিন্দু ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার ভিডিও বলে। ২০১২ সালে রামুতে বৌদ্ধ বিহারে সহিংসতার ভিডিওকে প্রচার করা হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে।

এদিকে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবও শনাক্ত করেছে কিছু গুজব। এর মধ্যে গত ৫ আগস্ট রাতে একটি গুজব এক্স-এর ‘ডেইলি লেটেস্ট আপডেটস’ নামে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে বলা হয়, চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দিরে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
 

একুশে সংবাদ/ এস কে

 

Link copied!