মাওবাদী গেরিলা থেকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়ে রীতিমত চমক সৃষ্টি করেছিলেন পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড। এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলো দেশটির সুপ্রিম কোর্টে।
সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী এক জনসভায় ‘স্বীকার’ করে নেন, দেশের পাঁচ হাজার ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী। প্রধানমন্ত্রীর এমন বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পরই রিট পিটিশন দাখিল হয়েছে নেপালের সর্বোচ্চ আদালতে।
দীর্ঘ এক দশক ধরে মাওবাদী বিদ্রোহের সময়কালে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বিভিন্ন হামলায়। সেই মাওবাদী হামলার নেপথ্যে ছিলেন প্রচণ্ড। পরে রাজনীতির মূল স্রোতে ঢোকে মাওবাদীরা। গত ডিসেম্বরে ৬৮ বছর বয়সী প্রচণ্ড তৃতীয়বারের মতো দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তবে মাওবাদী হামলার ক্ষত এখনো ঘুমোতে দিচ্ছে না।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টে প্রচণ্ডর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন অ্যাডভোকেট জ্ঞানেন্দ্র আরান এবং অন্যান্য মাওবাদী বিদ্রোহের শিকার পরিবার। এ ছাড়াও কল্যাণ বুধাথোকির আরো একটি রিট পিটিশনের রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে গত শুক্রবার বিচারপতি ঈশ্বর খাতিওয়াদা এবং হরি কৃষ্ণ ফুয়ালের বেঞ্চ আদালত প্রশাসনকে এ দুজনের রিট পিটিশন নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মকর্তা বিমল পাউডেল বলেছেন, প্রচণ্ডর গ্রেপ্তারের আবেদনটি নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার প্রথম শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র এই আবেদনের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রবিবার প্রচণ্ড বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ হয়েছে।
সম্প্রতি মাঘি উৎসবে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রচণ্ড বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ১৭ হাজার মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এটা সত্য নয়। তবে সংঘাতের সময় পাঁচ হাজার মানুষ হত্যার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি আমি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, সেই সময়কালে ১২ হাজার মানুষকে খুন করেছিল তৎকালীন শাসক।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল মাওবাদী সংঘাত। সরকারিভাবে ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তির পর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় সেই সংঘর্ষ।
এদিকে গত সপ্তাহেই ‘কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপালের’ (মাওয়িস্ট সেন্টার) নেতা প্রচণ্ডর সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে চীনপন্থী কেপি ওলির সিপিএন (ইউএমএল)। তবে এখনই সরকার পড়ছে না প্রচণ্ডর। ২৭৫ আসন বিশিষ্ট নেপালের পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল নেপালি কংগ্রেস এবং তাদের সহযোগী চার দলের সমর্থন রয়েছে প্রচণ্ডের সঙ্গে।
২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে বৃহত্তম দল নেপালি কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ৮৯। ওলির সিপিএনের (ইউএমএল) সদস্যসংখ্যা ৭৯ এবং প্রচণ্ডর সিপিএনের (মাওয়িস্ট সেন্টার) সদস্য ৩২। এ ছাড়াও আরএসপির ১৯, রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির ১৪, জনতা সমাজবাদী পার্টির ১১ এবং ২৩ জন নির্দলীয় সদস্য রয়েছেন নেপালি সংসদের নিম্নকক্ষে।
একুশে সংবাদ/য/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :