AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সত্য ঘটনা ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার গল্প


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৩:০৬ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২১
সত্য ঘটনা ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার গল্প

ঢাকার পল্লবীর এলাকার ইরানি ক্যাম্পের একটি বাড়িতে  গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে চলছে অনুষ্ঠান। ছেলে মেয়ে সকলেই উপস্থিত। এর মধ্যে দুই যুবক  অনুষ্ঠানে আসা একটি মেয়েকে বারবার উত্যক্ত করছিল। আশেপাশে অনেকেই বিষয়টি দেখেও না দেখার মত করে এড়িয়ে যায়।সেই অনুষ্ঠানে জনি উপস্থিত ছিলো।মেয়েটির হয়ে সে এগিয়ে আসে। ভদ্রভাবেই দুই যুবককে থামতে বলে।  তারা বেপরোয়া। ওদের কে কি বলবে? কার এতো সাহস!ওরা মেয়েটিকে বারবার হয়রানি করে চলে। এক পর্যায়ে জনি যুবক দুজনকে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেয়।ঐ দুই যুবক ছিল পুলিশের সোর্স। অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার অপমানের প্রতিশোধ তুলতে  তখনই তারা পল্লবী থানা থেকে পচিশ জনের একটি বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান থেকে জনি ও বড়  ভাই রকিকে তুলে নিয়ে যায়।থানায় এনেই জনিকে আঘাতের পর আঘাত করা হয়। পল্লবী থানার ভিতরে টানা আড়াই ঘণ্টা চলে জনির উপর অকথ্য পুলিশি নির্যাতন। 

এক পর্যায়ে জনির শরীর খারাপ হতে শুরু করলে সে এক গ্লাস পানি খেতে চায়, জনির বুকে বুট জুতা রেখে এক পুলিশ সদস্য জনির মুখে থুতু ছিটিয়ে বলে - থুতু খা।পুলিশ হেফাজতে জনির মৃত্যু হয়।আদালতে বলা হয়, গায়ের হলুদের অনুষ্ঠানে গানের শব্দে জনি হার্ট অ্যাটাক করে মরে গেছে। ২০১৪ সালের আগস্টে জনির বড় ভাই রকি পুলিশ হেফাজতে জনির মৃত্যুর বিচার চেয়ে আদালতের সামনে দাড়ায়। সবাই বলে, পুলিশের সাথে ঝামেলা করো না। বাদ দাও।রকি বাদ দেয় না।  ভাই হত্যার বিচার চেয়ে সে মামলা দায়ের করে।রকির দায়ের করা মামলা তুলে নিতে একের পর এক হুমকি আসতে থাকে। তাকে ভয় দেখানো হয়। রাতে ওরা ঘর থেকে বেরোতে পারে না। এক ছেলে মারা গেছে, আরেক ছেলেকেও হারাতে চাও? রকির পরিবারকে  মৃত্যু ভয় দেখানো হয়।রকি পিছায় না।প্রতিদিন সে ভাই হত্যার বিচারের দাবীতে  আদালত পাড়ায় যায় এক কোর্ট থেকে আরেক কোর্টে ঘুরে।  উকিলের পিছে পিছে ঘুরে। স্পেশাল ব্রাঞ্চে ব্রাঞ্চে ধর্না দেয়। একদিন রকির কাছে আপোষের অফার আসে, মামলা তুলে নেয়ার বিনিময়ে বিশ লক্ষ টাকা নগদ দেয়া হবে। রকি আপোষ করে না । 

ভাইয়ের হত্যাকারীদের সাথে আপোষ নয়। বিচারের দাবীতে সে অটল থাকে। মামলার তারিখ পিছায়, খরচ বাড়তে থাকে, একের পর এক শুনানির তারিখ পড়ে। এরই মধ্যে আসামী পক্ষ মামলা স্থগিতের আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। দুই আসামী  পালায়। আরেক আসামী  জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলা প্রাক্তন তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে থানায় বসে রকিকে দেখিয়ে দুপুরের খাবার খায়।রকি  লড়ে যায়।ভাই হত্যার বিচারের দাবীতে দায়ের করা মামলায় আদালত শুনানি ও অন্যান্য কাজে গত সাড়ে ছয় বছরে রকিকে সাড়ে চারশ বার আদালতে আসতে হয়। রকি আসে। একটা শুনানির তারিখ সে মিস করেনি।দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর অসংখ্য হুমকি, ভীতি, আপোষের প্রস্তাব, বিরামহীন আদালত শুনানির পর জনি হত্যার বিচার হয়।জনি হত্যায় জড়িত তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি দুজনকে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।পুলিশ হেফাজতে  নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) ২০১৩ আইনে আদালতের দেয়া  এইটাই  প্রথম রায়।ঐতিহাসিক এই রায় ভবিষ্যত ইতিহাসের জন্য একটা মস্ত বড় মাইলস্টোন হয়ে রইল। পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে এই মামলা এক শক্তিশালী দলিল, নির্যাতিতদের জন্য ভরসার আশ্রয়।তবে সবকিছু ছাপিয়ে জনি হত্যা মামলার রায়,ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার গল্প।

আমার কাছে রায়টি একটি রত্নগর্ভা মায়ের গল্প যার দুই ছেলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে  শেষ অবধি লড়ে গেছে।এক ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় মৃত্যু বরণ করেছে, আরেক ছেলে  ভাই হত্যার বিচার চেয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ঐতিহাসিক রায় ছিনিয়ে এনেছে।প্রতিবাদী এই পরিবারটির প্রতি রইল একুশে সংবাদ এর পক্ষ থেকে সহস্র সালাম । 

 

একুশে সংবাদ/রা/ব
 

Link copied!