AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

‍‍`ঢেঁকি‍‍` শব্দটি নতুন প্রজন্মের কাছে অতিতের গল্প 


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০৫:৫১ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২১
‍‍`ঢেঁকি‍‍` শব্দটি নতুন প্রজন্মের কাছে অতিতের গল্প 

ও বউ ধান ভানে রে, ঢেঁকিতে পার দিয়া ! ঢেঁকির পাড়ে পল্লিবধূদের এমন গান বাংলার গ্রামীণ জনপদে সবার মুখে মুখে থাকত। ধান থেকে চাল, তা থেকে আটা। একসময়ে চাল আর আটা প্রস্তুতের একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ঢেঁকির পাড়ে ধুম পড়ত নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরির। তবে কালের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকি। আর নতুন প্রজন্মের কাছে ‘ঢেঁকি’ শব্দটি শুধু অতীতের গল্প মাত্র। বাস্তবে এর দেখা মেলা ভার। 

দেশের দু–এক জায়গায় থাকলেও ব্যবহার তেমন একটা নেই। বিলুপ্তির পথে ঢেঁকি।

গ্রামীণ জনপদগুলোতে এখন বিরাজ করছে শহরে আবেশ। তাই গ্রামে গ্রামে আর ঢেঁকি নেই, নেই পল্লিবধূদের মন-মাতানো গান। কিছু জায়গায় নবান্ন উৎসব হলেও পিঠা-পুলির সমাহার আর চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার এমন চিরায়ত সব ঐতিহ্য এখন শুধুই স্মৃতি।

ঢেঁকিছাঁটা চাল শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে গ্রামের শিশুদের জাউ তৈরি করে খায়ানো হতো। কিন্তু কাল চক্রের বিবর্তন ও যান্ত্রিক সভ্যতার আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে ধান থেকে চাল-আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম গ্রামীণ ঢেঁকি। 

সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব ঘটেছিল। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রায় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে ঢেঁকি বিলুপ্তি হচ্ছে। একে না মেনে নিয়ে উপায় নেই। দেশের গ্রামগুলোতে ঘুরলে একটি ঢেঁকিরও দেখা মেলে না। আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎ–চালিত মেশিন। 

গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠেছে মিনি রাইস মিল। ফলে ঢেঁকির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢেঁকিছাঁটা চাল আজ আর নেই।
এখন আর আগের মতো ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখেই পড়ে না। ভোরের স্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় না ঢেঁকির ‘ঢেঁকুর’ ‘ঢেঁকুর’ শব্দ। চোখে পড়ে না বিয়েশাদির উৎসবে ঢেঁকিছাঁটা চালের ক্ষীর–পায়েস রান্না। অথচ একদিন ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম কল্পনা করা কঠিন ছিল। একসময় গ্রামের প্রায় সব সম্ভ্রান্ত পরিবারেই ঢেঁকি ছিল। ধান ভাঙা কল আমদানির পর গ্রামাঞ্চল থেকে ঢেঁকি বিলীন হওয়া শুরু হয়। ফলে গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন ঢেঁকিছাঁটা চালের স্বাদ। যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাস করেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকিশিল্পকে। বর্তমান যুগের অনেকেই ঢেঁকি চেনে না। কালের পাতায় স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি। যেখানে বসতি সেখানেই ঢেঁকি, কিন্তু আজ তা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য থেকে মুছে যাচ্ছে। হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র আর প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। ঢেঁকি বড় কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি। লম্বায় অন্তত ছয় ফুটের মতো। এর অগ্রভাগের মাথার কাছাকাছি দেড় ফুট লম্বা মনাই। মনাইয়ের মাথায় পরানো লোহার রিং (আঞ্চলিক ভাষায় চুরনও বলা হয়)। চুরন বারবার যেখানে আঘাত করে নিচের সেই অংশটুকুর নাম গর। সেটিও কাঠের তৈরি। ঢেঁকিতে ধান বা চাল মাড়াই করতে কমপক্ষে তিনজন মানুষের প্রয়োজন হয়। পেছনের লেজবিশিষ্ট চেপ্টা অংশে এক বা দুজন পা দিয়ে তালে তালে চাপ দিলে মনাই সজোরে গরের ভেতর ধান বা চালের ওপর আঘাত করে। তবে মনাই ওঠানামার ছান্দিক তালে তালে আরও একজন নারী ধান–চাল মাড়াই করতে সাহায্য করে। তবে ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া আর আলি দেওয়ার মধ্যে সঠিক সমন্বয় না থাকলে ঘটতে পারে ছন্দপতন। 

বর্তমান সময়ে কিছু কিছু বাড়িতে ঢেঁকি থাকলেও তা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হয়। আগের তা হতো না। এখন প্রতি কেজি চাল থেকে আটা প্রস্তুত করতে নেওয়া হয় ১০–১২ টাকা। ঢেঁকির মালিক নিজের লোকবল দিয়েই ওই আটা প্রস্তুত করেন। আধুনিক মেশিনে প্রস্তুত করা আটার তৈরি পিঠায় স্বাদ না থাকায় কিছু মানুষ টাকা দিয়েই ঢেঁকিতে আটা তৈরি করতে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢেঁকি শিল্প হলেও গ্রামীণ জনপদে এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই।এক সময় ঢেঁকির বেশ কদর ছিল, মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন তেল-বিদ্যুৎ চালিত বিভিন্ন মেশিন দিয়ে গ্রামগঞ্জে গিয়ে ধান ভাঙ্গার কারণে ঢেঁকি আজ বিলুপ্ত প্রায়। তারা আরো বলেন, আধুনিক যন্ত্র বা মেসিনের কারণ ঢেঁকি হারিয়ে গেছে। কারণ ঢেঁকিতে ধান বানতে, আটা ও চালের গুড়া করতে কষ্ট হয় সময় লাগে আবার পরিশ্রম বেশী। তাই সবাই ঢেঁকি ব্যাবহার করে না।

এব্যাপারে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক বললে, আমাদের বাড়িতে এক সময় ঢেঁকির ব্যবহার ছিল, আমরা দেখেছি খুব সকালে উঠে মা চাচিরা ঢেঁকিতে করে ধান ভাঙ্গত ধুপধাপ করে ঠিক সে সময় ঘুম ভেঙ্গে যেত আমাদের। আমরা পাশে দাড়িয়ে দেখতাম। চালের গুড়া আবার চাল খেকে আটা বানার কাজে লাগাত। তিনি আরও বলেন বর্তমানের সন্তানেরা ঢেঁকি কি জিনিস বুঝতেই পারে না।

একুশে সংবাদ/ জা.ব / এস

Link copied!