AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এইচএসসির প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানি


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭:২৯ পিএম, ৭ নভেম্বর, ২০২২
এইচএসসির প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানি

“নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।”

 

এটি হচ্ছে সেই আলোচিত প্রশ্নের উদ্দীপক......

 

এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রণীত প্রশ্নপত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন-এটি রীতিমতো ধর্মীয় উসকানির শামিল।

 

রবিবার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের প্রশ্ন এটি। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এভাবেই সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হয়েছে।

 

শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলেও প্রশ্নপত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের বাস্তবিক চিত্রও এমন নয়। ধর্মীয় নানা উৎসবে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের মানুষ সবাই অংশগ্রহণ করে। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন কাঠামো কেমন হবে-এ ধরনের লিখিত নির্দেশনা এবং প্রশ্ন প্রণেতা ও প্রশ্ন সেটারদের ওরিয়েন্টশন করানো হয়। এর পরেও অমূলক প্রসঙ্গ টেনে ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হয়েছে। এতে করে সমাজে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।

 

ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্র সৃজনশীল ১১ নম্বর প্রশ্নে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে অনুচ্ছেদে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপকে এ কথা বলা হয়। এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে-“(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন। (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব।-ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’-প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।-উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর।” সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য উদ্দীপকে অনেক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টানা যেত। কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশ প্রফেসর ও শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ গণমাধ্যমে বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ধর্মকে সামনাসামনি করা ঠিক হয়নি। মুসলমানের কাছে জমি বিক্রি করে দেশ ত্যাগ করছে-এ সমস্ত তথ্য সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

 

তিনি বলেন, ‘আরও ভালো প্রশ্ন করা যেত। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবতাবোধ বাড়ানো। ধর্মে-ধর্মে সহিষ্ণুতা বাড়াতে কাজ করা।’ অনেক চিন্তা করে পরীক্ষার প্রশ্ন করা প্রয়োজন বলে অধ্যাপক কায়কোবাদ মনে করেন।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী সাইফুদ্দীন  বলেন, ‘প্রশ্নপত্র প্রণয়নে সাধারণ নির্দেশনায় বলা থাকে ধর্ম, জাতি ও কোনো বর্ণ হেয় করে কোনো ধরনের প্রশ্ন করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনসহ জাতীয় বিষয়ে কোনো বিতর্ক তুলে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে নিষেধ করা হয়।’

 

তিনি বলেন, ‘ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করে এমন বিষয় এড়িয়ে যাওয়া উচিত। ধর্মীয় উসকানি সমাজে অসুস্থতা বাড়ায়। বিদ্বেষ ছড়াতে পারে।’

 

তিনি বলেন, ‘সংবিধানে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা উল্লেখ রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন কীভাবে পরীক্ষায় আসে? কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে।’

 

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্ন আমরা করিনি। অন্য কোনো বোর্ড প্রশ্ন করেছে। কোন বোর্ডের প্রশ্ন তা জানা সম্ভব নয়।’

 

তিনি বলেন, ‘সব সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্ন জমা দেওয়া হয়। এরপর আন্তঃবোর্ড লটারি করে প্রশ্ন ঠিক করে। সিলগালা করে প্রশ্ন বোর্ডে পাঠানো হয়। এরপর সকালে লটারি করে প্রশ্নের সেট ঠিক করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র দেখার কোনো সুযোগ নেই।’

 

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আন্তঃবোর্ডের সমন্বয়ক ঢাকা বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কীভাবে এই ধরনের প্রশ্ন করা হলো তদন্ত করে ঘটনা বের করা হবে।’

 

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষপূর্ণ কোনো বক্তব্য যেন না থাকে সে জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে ওরিয়েন্টশন করানো হয়। প্রশ্নপত্র দেখার কোনো সুযোগ নেই।’ কীভাবে এ ধরনের প্রশ্ন করা হলো তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

 

একুশে সংবাদ/স.আ.প্রতি/পলাশ

Link copied!